1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
সীতাকুণ্ডে কুমিরা ঘাট দিয়ে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা, খবর পেয়েও আটক করেনি নৌ পুলিশ ৬ তারিখে বাজেট দেবো, বাস্তবায়নও করবো বায়েজিদে টোকেন বাণিজ্য নিষিদ্ধ অটোরিক্সা অবাধেই চলছে ট্রাফিক পুলিশ চাঁদা পেয়েই নিরব ১১ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য ডবলমুরিং- এ ভুয়া নারী পুলিশ কনস্টেবল আটক বিএসসি মর্যাদা পাওয়া নিয়ে আইইবি’ বিরুপ প্রতিক্রিয়া অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য – আইডিইবি সীতাকুণ্ডে অবৈধ বালু উত্তোলন দিয়ে কে আর অক্সিজেন পুরাতন কুমারী খাল ভরাট করছে একজন মন্ত্রী সমর্থিত আরেকজন এমপি সমর্থিত আর আমি হচ্ছি সাধারণ জনগণ সমর্থিত- তৌহিদ  মিরপুর-পল্লবীর মটস: মানবিক ভ্রাতৃত্ব গঠনে কৃষি ও কারিগরি প্রশিক্ষণে এগিয়ে জাফর হায়াতের মৃত্যবার্ষিকী আজ

সালাতুল ফজরের ঈর্ষণীয় উপকারিতা ও ফজিলত

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩
  • ২০৫ বার পড়া হয়েছে

ফজরের নামাজ দুনিয়ার সব কিছুর চেয়ে উত্তম। ফজর মানে এক রাশ স্নিগ্ধতা। ইসলাম যে পাঁচটি পঞ্চ স্তম্ভের ওপর সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে সালাত তার অন্যতম। ঈমানের পর সালাতের গুরুত্ব সর্বাগ্রে। সালাত জীবনে সফলতা বয়ে আনে। পবিত্র ও আলোকিত জীবনবোধে উদ্বুদ্ধ করে। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসেব হবে। যদি সালাত ঠিক হয় তবে তার সব আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয় তবে তার সব আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। সালাত এমন এক ইবাদত যা সারা বছর দৈনিক পাঁচবার আদায় করতে হয়। মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অবস্থাতেই সালাত মাফ হয় না। এমনকি মৃত্যু  শয্যায় স্বাভাবিক জ্ঞান থাকা অবস্থায় সালাত থেকে বিরত থাকার কোনো বিধান নেই। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে ফজরের সালাতের গুরুত্ব আরো বেশি। ফজরের সালাতে দাঁড়ানো সারা রাত দাঁড়িয়ে সালাত পড়ার সমান। হজরত উসমান ইবনে আফফান রা:-থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ সা:-বলেছেন যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার সালাত আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত জেগে সালাত পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতের সাথে পড়ল সে যেন পুরো রাত জেগে সালাত পড়ল ওই দিনের পুরোটা আল্লাহর জিম্মায় থাকার সৌভাগ্য হয়।
ফজরের সালাত পড়লেই শুধু এ ঈর্ষণীয় সৌভাগ্য লাভ করা সম্ভব। রাসূলুল্লাহ সা:-বলেছেন যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মার বিষয়ে তোমাদেরকে কোনোরূপ অভিযুক্ত না করেন (তিরমিজি-২১৮৪)। ফজরের সালাত কিয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দেবে। হজরত বুরাইদা আল আসলামি রা:-থেকে বর্ণিত-রাসূলুল্লাহ সা:-বলেছেন যারা আঁধারে (ফজর সালাতে) মসজিদের দিকে হেঁটে যায় তাদের কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও (আবু-দাউদ-৪৯৪)।
ফজরের সালাত পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ। আবু জুহাইর উমারা ইবনে রুয়াইবা রা:-থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (ফজর ও আসরের সালাত) আদায় করবে সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না (মুসলিম-৬৩৪)। মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাবে। আবু হুরায়রা রা:-থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা:-বলেছেন মুনাফেকদের ওপর ফজর ও এশার সালাত অপেক্ষা অধিক ভারী সালাত আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হতো (বুখারি-৬৫৭)।
ফজরের সালাত পড়লেই সরাসরি আল্লাহর দরবারে নিজের নাম আলোচিত হবে। আবু হুরায়রা রা:-থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা:-বলেছেন তোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্র হয়। যারা রাতের কর্তব্যে ছিল তারা উপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সব জানেন তবুও ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন আমার বান্দাদেরকে কেমন রেখে এলে ? ফেরেশতারা বলে আমরা তাদেরকে সালাতরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম তখনো তারা সালাতরত ছিল (বুখারি-৫৪০)। দুনিয়া ও আখিরাতের সেরা বস্ত  অর্জিত হয়। হজরত আয়েশা রা:-থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-বলেছেন ফজরের দুই রাকাত দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ (সহিহ মুসলিম-১২৪০)। রাসুলুল্লাহ (সা.)-বলেছেন ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও তার সব কিছুর চেয়ে উত্তম।
ফজরের সালাত পড়লেই পরিপূর্ণ এক হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে যদি সে সূর্য ওঠা পযর্ন্ত আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে। হজরত আনাস ইবনে মালেক রা:-থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা:-বলেছেন যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের সালাত আদায়ান্তে বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থেকে সূর্যোদয়ের পর দুই রাকাত নফল সালাত (ইশরাক) আদায় করবে সে পরিপূর্ণ এক হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে। ‘পরিপূর্ণ’ এ শব্দটি তিনি (নবী করিম সা:)-তিনবার বলেছেন (তিরমিজি-৫৮৬)।
ফজরের সালাত পড়লেই কিয়ামতের দিন সরাসরি আল্লাহকে দেখার সৌভাগ্য লাভ। আর এটি হচ্ছে সর্বোত্তম পুরস্কার। জারির ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজলি রা:-থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন শোনো! নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে যেমন স্পষ্ট ওই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাকে দেখতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই তোমরা যদি সূর্য ওঠার আগের সালাত ও সূর্য ডুবার আগের সালাত আদায়ে সমর্থ হও তাহলে তাই করো। তার পর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবিহ পাঠ করুন (বুখারি-৫৭৩)। হাশরের মাঠে মানুষ অন্যরকম এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। সবাই অস্থির ও পেরেশান থাকবে। বিশেষ করে পুলসিরাত পার হওয়ার সময় অন্ধকার দূর করার জন্য আলোর দরকার হবে। সেদিন যার যার আমল হবে নূর ও আলো। রাসুল (সা.)-বলেছেন যে ব্যক্তি ভোরে হেঁটে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশ করবে আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে পরিপূর্ণ আলো দান করবেন। (আবু-দাউদ : ৪৯৪)।
ফজরের সুন্নতের ফজিলত : প্রত্যেক ফরজ নামাজের আগে-পরে যেসব সুন্নত নামাজ রয়েছে এর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ সুন্নত হলো ফজরের দুই রাকাত সুন্নত। আয়েশা (রা.)-থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.)-বলেছেন ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। (মুসলিম : ৭২৫)। তা ছাড়া ফজরের সুন্নতের ব্যাপারে ইসলামের বিশেষ নির্দেশনাও আছে। রাসুল (সা.)-বলেছেন তোমরা এই দুই রাকাত নামাজ কখনও ত্যাগ করো না এমনকি শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও। (আবু দাউদ : ১২৫৮)। তবে কখনও যদি ফজরের জামাত দাঁড়িয়ে যায় আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে তা হলে সুন্নত মসজিদের বাইরে পড়ে নেওয়া উত্তম। তবে কেউ যদি মসজিদের ভেতরে নামাজের কাতার থেকে দূরে এক কোণে বা খুঁটির আড়ালে পড়ে সেটাও জায়েজ। কিন্তু জামাতের কাতারে বা তার কাছে পড়া মাকরুহে তাহরিমী। আল্লাহতায়ালা আমাদের ফজরের নামাজ গুরুত্বসহ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ফজর নামাজ আদায়ের জাগতিক উপকারের কথা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এভাবে বলেছেন তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায় তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায় অজু করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায় অতঃপর সালাত আদায় করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উত্ফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে ওঠে কলুষ কালিমা ও আলস্য নিয়ে। (বুখারি, হাদিস : ১১৪২)
ফজর মানে এক রাশ স্নিগ্ধতা। ফজর মানে হৃদয়জুড়ে ভালো লাগার অনির্বচনীয় অনুভূতি। ফজরের সালাত আদায় করা মানে দিনের শুরুতে আমাদের চিরশত্রু শয়তানের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করা। ফলে সারাটা দিন জয়ের অনুভূতি নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে কাজ করা সহজ হয়ে যায়। কাজে মনোযোগিতা বাড়ে। এভাবে ফজরের সালাত জীবন জুড়ে সফলতার ফল্গুধারা বয়ে আনে। তাই আসুন গুরুত্বসহকারে স্নিগ্ধ ফজরে জেগে উঠি। নিয়মিত ফজরের সালাত ও পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে মনোযোগী হয়ে পবিত্র আলোকিত ও সুরভিত জীবন গড়ে তুলি। আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা আমাদের ফজরের সালাত আদায়ের মাধ্যমে উপরোক্ত সব নিয়ামতের ভাগীদার করুন। আমিন।লেখক : ফখরুল ইসলাম নোমানী, ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla