এম. আলী হোসেন
উপকূলজুুড়ে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা ও অজানা আশংঙ্খা বিরাজ করছে। ৯১ এর ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় যারা দেখেছে তাদের চোখে ভাসছে এখন সেসব স্মৃতি ।সেদিনের সকল আলামত এখন উপকূলবাসী লক্ষ্য করছে। ঝাঁকে ঝাকেঁ মানুষ এখন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্হান নিচ্ছে । গবাদি পশু ও সহায় সম্পদ রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ ।সেন্টমার্টিন দ্বীপ, মহিষখাালীর কুতুবজুম, আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়ন, সন্ধীপ ও বাশঁখালী উপকুল অঞ্চলে আশ্রয় কেন্দ্রে আর জায়গা নেই । সাধারণ মানুষের জন্য এসব এলাকায় আরো আশ্রয় কেন্দ্র দরকার ছিল এসব এলাকায়।
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার (১২ মে) দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান।
ঘূর্ণিঝড় মোখা যেহেতু কক্সবাজারমুখী, সেহেতু কক্সবাজারসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ জন্যই সেন্টমার্টিনের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি সেন্টমার্টিন থেকে পর্যটন ব্যবসায়ী ও কয়েক হাজার বাসিন্দা নিরাপদে টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, দ্বীপে ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে কাজ করছেন।
এদিকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের চরাঞ্চলে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে আতঙ্কিত উপকূলের বাসিন্দারা। নতুন করে আবার শক্তি সঞ্চার করে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এভাবেই বিভিন্ন ঝড়ে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও প্রতিবার তাদের বসত ঘর, ফসলি জমি, গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকা এবং চরগুলোতে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
এরপর থেকেই গভীর নদীতে থাকা জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রেখে উপকূলে ফিরে আসছেন। তবে এখন পর্যন্ত নদীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় কিছু কিছু জেলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে মাছ শিকার করছেন।
স্থানীয়রা জানায়, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের উপকূলের মেঘনা নদী ও সাগর এলাকায় প্রায় দুই লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করে আসছে। ঝড় এলেই তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত হন তারা। আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে ভয়ের মধ্যে রয়েছে। উপকূল জুড়ে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে হরামেশা কোনো না কোনো বিপর্যয়ের শঙ্কা থাকেই চরাঞ্চলে। স্বাভাবিকভাবে এসব দুর্যোগকে কেন্দ্র করে নদী ভাঙনও বেড়ে যায় বিভিন্ন পয়েন্টে।
এমন পরিস্থিতিতে উঁচু বাঁধের ও নদী ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানিয়েছেন উপকূলবাসী।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে দুর্যোগপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। রাত থেকে নদীর পাড়ে কোস্ট গার্ডের বেশ কয়েকটি দল মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্টে।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতির শঙ্কায় ক্ষেতে থাকা পাকা ও আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছে কৃষকরা। এছাড়া অন্যান্য পরিপক্ক ফসলও ঘরে তোলার আহ্বান জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে মেঘনা নদীসহ উপকূলের বাসিন্দাদের ক্ষতি কমিয়ে আনতে তাদের সব ধরনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ বাহিনী ও চিকিৎসা সেবায় মেডিকেল টিম। সতর্কতা সংকেত বাড়ানো হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি শিবিরে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানলে টেকনাফের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরে ক্ষয়ক্ষতি বেশির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় “মোখা” দেশের উপকূল থেকে মাত্র ৭৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ বেড়ে ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। ফলে কক্সবাজার উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় “মোখা” উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।