1. banglapostbd@gmail.com : admin :
  2. jashad1989@gmail.com : Web Editor : Web Editor
  3. admin@purbobangla.net : purbabangla :
 ফ্যাসিবাদি সরকারের দোসর হোতা ওবায়দুল কাদের'র সুপারিশ প্রাপ্ত চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী পলাশ এখনো বহাল তবিয়তে!  - পূর্ব বাংলা
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন

 ফ্যাসিবাদি সরকারের দোসর হোতা ওবায়দুল কাদের’র সুপারিশ প্রাপ্ত চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী পলাশ এখনো বহাল তবিয়তে! 

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধি
ঘুষ-দুর্নীতির লিখিত দালিলিক অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে দপ্তরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাশ। অভিযোগ তদন্তাধীন থাকা সত্ত্বেও প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে তার নিয়মিত উপস্থিতি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন যদি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত একজন কর্মকর্তা একই দপ্তরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন তবে তদন্তের ভবিষ্যৎ কী?
নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস এক সময় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) তুষার মোহন সাধু খাঁ’র ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। অভিযোগ রয়েছে, পলাশ প্রায় প্রতিদিন বিপুল অঙ্কের ঘুষের টাকা সাধু খাঁ’র হাতে পৌঁছে দিতেন এবং বিনিময়ে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় সহযোগিতা করতেন।
এদিকে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে দেড় বছর পার হলেও তদন্তের কোনো ফলাফল প্রকাশ পায়নি। এই দীর্ঘসূত্রিতায় কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও সংশয় দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হচ্ছে যাতে প্রভাবশালী নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস বাঁচতে পারেন। অবাক করার বিষয় হলো, তদন্ত চলাকালেই প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি দায়িত্ব) মু. সাইফুর রহমান সম্প্রতি পলাশ চন্দ দাশকে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে পদায়ন করেছেন। ফলে অভিযুক্ত প্রকৌশলী এখন সেই অফিসেই কাজ করছেন, যেখানে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, এটি স্পষ্টভাবে তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। তারা আশঙ্কা করছেন, এমন অবস্থায় তদন্ত রিপোর্ট বিকৃত বা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতেও পারে।
সচেতন মহল প্রশ্ন তুলছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের “জিরো টলারেন্স” নীতি যদি বাস্তবে কার্যকর হতো, তবে তদন্ত এত দীর্ঘ হতো না, আর অভিযুক্ত কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন না। তাদের দাবি, দ্রুত তদন্ত শেষ করে টেন্ডার জালিয়াতিতে শতকোটি টাকার মালিক আছে ঠিকাদারী লাইসেন্স তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।
তাদের আশঙ্কা, তদন্ত বিলম্বিত হতে থাকলে অভিযুক্ত ব্যক্তি দুর্নীতির অর্থ পাচার করতে পারেন বা দেশ ত্যাগ করে বিদেশে পালিয়েও যেতে পারেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মু. সাইফুর রহমান বলেন, “তদন্ত প্রক্রিয়া এখনও চলমান। শীঘ্রই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।”  পলাশ চন্দ দাশকে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে বসিয়ে কাজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।”

দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে শীর্ষ দপ্তরে বহাল রেখে তদন্ত চালানো প্রশাসনিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন মত দপ্তরের অভ্যন্তরীণ একাধিক কর্মকর্তা ও সচেতন নাগরিকদের। তারা মনে করেন এটি কেবল একটি ব্যক্তির নয়, পুরো প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন।
অধিদপ্তরের কর্মীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দুর্নীতিবাজরা সুরক্ষা পান, সেখানে সততার পরিবেশ গড়ে তোলা অসম্ভব।” তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করবে, যাতে প্রকৃত দোষীরা আইনের আওতায় আসে এবং প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হয়।
এদিকে পলাশ চন্দ্র দাশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় গুরুতর অভিযোগ হলো টেন্ডার বাজির।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায় সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ‘ডাবল ভেসেল আয়রন রিমুভাল সরবরাহ ও সংযোজন’ কাজের ১৬টি দরপত্রের মধ্যে ১৬টিই ‘মেসার্স শামীম ট্রেডার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিয়েছে। ডিপিএইচইর কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে ‘রেট কোড’ সরবরাহ করায় একটি মাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এ ঘটনাকে নজিরবিহীন অনিয়ম বলছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। একজন মাত্র ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খোদ নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস।

এসব অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস, প্রাক্কলনিক মারজান বেগম, হিসাব সহকারী খগেন্দ্র চন্দ্র নাথ, ক্যাশিয়ার শুভনন্দী ও অফিস সহকারী এসএম ইকবাল সিন্ডিকেট। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রুম্মান শিকদার নামের এক ঠিকাদার।
চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্যে প্রকৌশলের কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় চলছে আয়রন দূরীকরণ ডবল ভ্যাসেল চোঙা সরবরাহের কাজ। ১৬ জুন ৫২ কোটি টাকার কাজকে ১৬টি প্যাকেজে ভাগ করে ওপেন টেন্ডারিং পদ্ধতিতে (ওটিএম) দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের অংশগ্রহণের শেষ তারিখ ছিল ১৫ জুলাই। দরপত্র আহ্বান করার সময় বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। শর্ত দেওয়া হয়-গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ঠিকাদার অংশ নিতে পারবেন। এতে আরও বেশকিছু জটিল শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। ফলে এতে বেশির ভাগ ঠিকাদার অংশ নিতে পারেননি। চট্টগ্রাম জেলায় যেসব গভীর নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন রয়েছে ওখানে বসানো হবে।
এদিকে তার বিরুদ্ধে দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়-চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তিনি ‘মেসার্স আরণ্যক’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। প্রতিষ্ঠানটি মালিক কাগজে-কলমে তার আত্মীয়ের নাম দেখানো হলেও মূলত মালিক পলাশ। পলাশ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে চট্টগ্রামের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে খাগড়াছড়ির দায়িত্বে থাকার সময় ‘মেসার্স আরণ্যক’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া কাজ পেয়েছে। কাজ না করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যা তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সুপারিশে ২০২২ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে যোগ দেন পলাশ। যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্পের নামে তিনি হরিলুট চালাচ্ছেন বলে ঠিকাদারদের অভিযোগ।
ক্যাশিয়ার শুভ নন্দী বলেন, ‘টেন্ডার কমিটিতে আমরা থাকি না। টেন্ডার কমিটিতে থাকেন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্য প্রকৌশলীরা। ঠিকাদাররা কার্যাদেশ পাওয়ার পর আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়।’
হিসাব সহকারী খগেন্দ্র চন্দ্র নাথ বলেন, ‘টেন্ডারসহ কোনো অনিয়মের সঙ্গে আমি জড়িত নই। টেন্ডার বিষয়ে সবকিছু দেখভাল করেন নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার।’ প্রাক্কলনিক মারজান বেগম বলেন, ‘অফিস বিভিন্ন সিন্ডিকেট কাজ করছে। আসলে সবকিছু নির্বাহী প্রকৌশলী ডিল করে থাকেন। আমরা ছোট পোস্টে চাকরি করি। এত কিছু জানি না।’

উপরোক্ত পুরো নিউজটিতে অতিরিক্ত, অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা কি তথ্য আছে সে বিষয়ে প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি পরে জানাবেন বলে আর ফোন রিসিভ করেনি।

শেয়ার করুন-
এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2021 purbobangla