
বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার আমলে দূর্নীতি বেড়েছে, কমেছে সেবা
চান্দগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিরবে চলছে অনিয়ম, দূর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানী। দূর্নীতি ও অনিয়ম হু- হু করে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই অফিসে।
এখানে যত দলিল তত ইনকাম । ঘুষ এখানে ওপেন সিক্রেট। আইনের লোক আইনজীবিরাও এখানে অসহায়। আইনজীবিরা মক্কেল থেকে ঘুষের নামের খরচপাতি নেয় । ওই খরচপাতি বেশীরভাগ ব্যয় করে রেজিস্ট্রি অফিসে। চান্দগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের স্বয়ং সাব রেজিস্টার ও কর্মরতদের বৈধ আয়ের চেয়ে অবৈধ আয় বেশী। প্রতিদিনই ঘুষের টাকা নিয়ে ঘরে যায় এসব অফিসের কর্মরত ব্যাক্তিরা। অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে এখানে।
৯ অক্টোম্বর বিষুদবার আনুমানিক ৩ টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে চান্দগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে স্বয়ং সাব-রেজিস্ট্রার এক আইনজীবি কর্তৃক প্রকাশ্য ঘুষ বিষয়ে ভৎসনার শিকার হন। উপস্থিত দলিল দাতা ও গ্রহিতারাসহ অফিস স্টাফরাও এই ভৎসনার দৃশ্য দেখেন। সিনিয়র আইনজীবি মনিরুল ইসলাম প্রকাশ্য দলিল রেজিস্ট্রি বাবদ ঘুষের প্রতিবাদ জানান। এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাব রেজিস্ট্রার সরাসরি অস্বীকার করে বলেন এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।সুত্রমতে, বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার আমলে দূর্নীতি বেড়েছে, কমেছে সেবা ।
ওইদিন ও পরে সরেজমিন কয়েক ঘণ্টা অবস্থানকালে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় অবস্থিত চান্দগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। এই অফিসে চান্দগাঁও এলাকা ছাড়াও বাকলিয়ার সব দলিল সংক্রান্ত কাজ কর্ম হয়। পাশাপাশি দু’টো অফিস একটি চান্দগাঁও ও অপরটি পাহাড়তলী সাব-রেজিস্ট্রি অফিস । এখানে দুটো অফিস কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় কেন এ প্রশ্নের জবাব কেউ দেননি। চান্দগাঁও ও পাহাড়তলী এলাকার সেবা প্রার্থীরা সেবা নিতেই এখানে বাধ্যতামুলকভাবে আসতে হয়। অথচ চান্দগাঁও ও পাহাড়তলী এলাকায় জনগণের সুবিধাজনক স্থানে অফিস হলে বয়স্ক ও মহিলা সেবা প্রার্থীরা এত কষ্ট করে এখানে আসতে হত না । বাঁচত পরিবহণ খরচ ও শ্রম ঘণ্টাও। রহস্যজনক কারণে এই অফিস দুটো সংশ্লিষ্ট এলাকায় না হয়ে কোর্ট বিল্ডিং -এ রয়ে গেছে দীর্ঘদিন ধরে। ।
জনৈক সিনিয়র আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চান্দগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।। এখানে সরকারি ফি দেওয়ার পরও তিন পার্সেন্ট টাকা ঘুষ দিতে হয়। তা না দিলে জমির দলিল রেজিস্ট্রি না করে সমস্যার পাহাড় দেখিয়ে দলিলটি ফেলে রাখে।
জানা গেছে, রেজিস্ট্রারির সময় কমিশনের সরকারি ফিস বাবদ ২৫০ টাকা কিন্তু সাব রেজিস্ট্রারি অফিস থেকে চান্দগাঁও অঞ্চলে গেলে কমিশন রেজেস্ট্রি হলে ১৫ -২০ হাজার টাকা অফিসের দূর্নীতিবাজ চক্রকে দিতে হয়।
বিভিন্ন সেবা নিতে আসা মানুষের সাথে দূর্ব্যবহার করা এখানে নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া যে সকল দলিল হয় প্রত্যেক দলিল বাবদ ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করে ঘুষ নেয় । এই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যে সমস্ত দলিল হয় প্রত্যেক দলিল হতে প্রতি হাজারে ৩% করে অর্থাৎ এক লক্ষ টাকার দলিল হলে ৩ হাজার টাকা, ১ কোটি টাকার দলিল রেজিস্ট্রি হলে ৩০,০০০ টাকা আদায় করে থাকে।
আদায়কৃত টাকার ৫০% সাব রেজিস্ট্রার, বাকি টাকার ২০% কেরানি ও মোহরা আর অন্যরা ২০% বাকি ৫% পিয়ন, টিসি মহড়ার ১% ও নৈশ প্রহরী ১% পেয়ে থাকেন। বাকী ৩% এসএটিএ্যক্ট নামের পদবীধারী ব্যক্তি পেয়ে থাকেন।
তা ছাড়া কোন দলিলের খতিয়ান না থাকলে আইডি কার্ড না থাকলে, অনলাইনে খাজনার দাখিলা না থাকলে, বিভিন্ন অজুহাতের মাধ্যমে সাব রেজিস্টার প্রত্যেক দলিল থেকে ১০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকে তাদের চক্রের লোকজনের মাধ্যমে । পরে সেই টাকা অফিসের বড় কর্তা থেকে শুরু করে অনেকেই ভাগ পেয়ে থাকে।
এদিকে সাব রেজিস্ট্রার সার্ভার কিংবা ওয়েবসাইটে এখনো পূর্বের সাব রেজিস্ট্রারের নাম, মোবাইল নাম্বার ও মেইল রয়েছে। বর্তমান সাব রেজিস্ট্রারের নাম, মোবাইল নাম্বার ও মেইল কেন সংযোজন করা হয়নি তা জানা যায়নি। ফলে অনলাইনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। ডিজিটাল বাংলাদেশ যেন এই অফিসের বাইরে রয়ে গেছে।
এখানে সাব-রেজিস্ট্রারের আস্থাভাজন কর্মচারীরাই ঘুষ নিয়ে দ্রুত দলিল রেজিস্ট্র্রি করে দেন। চাহিদা মতো টাকা না পেলে তারা সাব-রেজিস্ট্রারের কক্ষের কাছেও কাউকে যেতে দেন না।
‘কর্মচারী-দালালের এখানে ১৩ জনের সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের সহযোগিতা নিয়ে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে টেক্স কালেকটর বাহার ও মফিজের নেতৃত্বে ঘুষ গ্রহণের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তাদের ছত্রছায়ায় যেসব দালাল সক্রিয় রয়েছে তারা হলেন রকিব উদ্দিন, শুক্কর, ছুট্টু, বদিউল আলম, মামুন, হোসেন, বাদশা মিয়া, শফিক ও আলম।এজলাসে নয়, খাস কামরায় বসেই রেজিস্ট্রি করতে দেখা গেছে। ১৫ বছরের স্বৈরচারের দোসরাও এখন বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।