
নিজস্ব প্রতিনিধি
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিক অভিযানে বিপুল ভেজাল মদ ধরা পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি নকল মদের কারখানার সন্ধান মিলেছে।
জানা গেছে, দেশীয় চোলাই মদের সঙ্গে অতিমাত্রায় অ্যালকোহল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে তীব্রতাযুক্ত শক্তিশালী মাদক। যা পান করে ডাকসাইটে মাদকসেবীরাও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে মৃতুর কোলেও ঢলে পড়ে। ড্রিংকসের সঙ্গেও অ্যালকোহল ও অতিমাত্রায় রেকটিফাইড স্পিরিট মিশিয়ে বিভিন্ন নামের এনার্জি ড্রিংক বাজারজাত করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানান, ভেজাল মদ তৈরির সঙ্গে জড়িতরা মাত্রাতিরিক্ত স্পিরিট ও ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিচ্ছে। ফলে তা পান করে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
ডিএনসি ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের উপ পরিচালক মানজুরুল ইসলাম বলেন, ইথানলের সঙ্গে মিথানলের মিশ্রণ করে এক বোতল মদকে ১০ বা ২০ বোতল মদ তৈরি করা হচ্ছে। এই মদ খেলে অন্ধ হয়ে যাওয়া, কিডনি বিকল করে দেওয়া ও হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।
ডিএনসির প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ডা. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, মিথানল ও ইথানল দেখতে অনেকটা একই রকম। ইথানল খাওয়ার যোগ্য। মিথানল খাওয়ার অযোগ্য এবং দামে কম। ভেজাল মদে মিথানল ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সেটি বিষাক্ত হয়ে উঠছে। রং, ফ্লেভার মিশিয়ে বিদেশি বোতলে ভেজাল মদ ভর্তি করা হচ্ছে। অনেকে এসব মদ খেয়ে মারা যাচ্ছেন। কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগরীতে এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টিম বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ১০ মাসে ১২৪৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযান বাড়ার পর মামলার সংখ্যাও আনুপাতিক হারে বাড়ছে।
চট্টগ্রাম নগরীর আইস ফ্যাক্টরী রোডস্থ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও মাদকদ্রব্য গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানায়। যা বিগত সময়ের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্টো গত ১০ মাসে ৫৬২১টি অভিযানে ১১৪৪টি মামলা, ১২৫৩ জন আসামি গ্রেফতার, ৭ লাখ ৩৫ হাজার ১৩পিস ইয়াবা, ১৪৮.৬৮ কেজি গাঁজা, চোলাইমদ ৯৭৮.৩৬০ লিটার, বিলাতি মদ ১৩৭ বোতল,ফেনসিডিল ১৩৯ বোতল, মাদক পাচারের কাজে ব্যবহৃত ২টি সিএনজি, ট্রাক-১টি, মাইক্রোবাস ১টি, দেশীয় অস্ত্র বন্দুক ২টি উদ্ধার করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সচেতনমূলক মাদক বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ
মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরীর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে তারা যার যার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। গত ১৯ অক্টোবর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয় এর উদ্যোগে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ৭ম
কোর্টে ১১ জনকে মাদক সেবন ও মাদক সেবন করে সামাজিক বিশৃঙ্খলার অপরাধে কারাদন্ড ও জরিমানা। গত ১৮ অক্টোবর ৪০০ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন। কোতোয়ালী থানাধীন ফিরিঙ্গি বাজার ব্রীজঘাট এলাকায় অভিযানে আসামী মো: মিলন মিয়া (২৫) ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুরের সিধলা এলাকার মজিবুর রহমানের পুত্র। গত ৬ অক্টোবর ১,৪০০ পিস ইয়াবাসহ ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গি’ও এলাকার মুকবুল
হোসেনের পুত্র মো: আশরাফুল ইসলাম (৩৭) গ্রেফতার করেন।
চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্টো এলাকার
দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম কোন না কোন এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা
করে আসছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্টো উপ পরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার জানান, চট্টগ্রাম সিটি এবং জেলার বাইরে মাদকদ্রব্য অফিসের টিম মাদক নিয়ন্ত্রন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, অফিস স্টাফরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে দিনরাত পরিশ্রম করে মাঠে ময়দানে কাজ করে যাচ্ছে মাদকমুক্ত এলাকা করতে হলে সবার সহযোগিতা দরকার একার পক্ষে কখনো সফল হওয়া সম্ভব না, আমরা বিভিন্ন সময় মাদক সংক্রান্ত সভা সেমিনারে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অংশ গ্রহণে ধর্মীয় বিষয়টিও তুলে ধরার চেষ্ঠা করছি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো.
জাহিদ হোসেন মোল্লা বলেন, প্রতিটি বিভাগ যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে, অফিসের সকল কমকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় অভিযানগুলো সফল হচ্ছে, অনেক অভিযানের সংবাদগুলো যেভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার কথা অনেক সময় সেভাবে প্রকাশিত হয় না, তবুও আমরা বিভিন্নভাবে আমার নিয়মিত কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছি।