
বিশ্বে প্রথমবারের মতো মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছে একটি রোবট নারী। নাম তার ডিয়েলা। তাকে রাষ্ট্রীয় কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আলবেনিয়া সেপ্টেম্বরে তাকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও বিলম্বে এ খবর জানা যায়। এর মধ্য দিয়ে ডিয়েলাই বিশ্বে কোনো কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মন্ত্রী। একই সঙ্গে প্রথম নারী এআই মন্ত্রী। বিশেষ করে আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামার একটি ঘোষণার পর ডিয়েলার দিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে সবার। এডি রামা বলেছেন, ডিয়েলা গর্ভবতী। তার গর্ভে আছে ৮৩টি সন্তান। কৌতুক করে তার এমন দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ডিয়েলার এক একটি সন্তান হবে এক একজন সংসদ সদস্যের সহকারী। অর্থাৎ সংসদ সদস্যদের কাজের সহযোগী হয়ে উঠবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবট। তাহলে কি বিশ্ব এর মধ্য দিয়ে পুরোপুরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে আশ্রয় নিচ্ছে! এমনিতেই সব কিছু চলে গেছে এআইয়ের দখলে। এই যে কমপিউটারে কম্পোজ থেকে শুরু করে মোবাইল, গাড়ি, উড়োজাহাজ- যা কিছু আজ আমাদের সামনে তার সবকিছুতে রয়েছে এআইয়ের ছোঁয়া। কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে রোবট এমনটা এর আগে শোনা যায়নি। সেই দায়িত্বে এখন ডিয়েলা। তাকে দেখতে আপাদমস্তক একজন নারী। আলবেনিয়ার ইসলামিক পোশাকে তিনি সবার সামনে। এ বিষয়ে উইকিপিডিয়া বলছে, ডিয়েলাহলো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ব্যবস্থা। আলবেনিয়ার ন্যাশনাল এজেন্সি ফর ইনফরমেশন সোসাইটি (একেএসএইচআই বা আকশি) উন্নত করেছে। এটি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইআলবেনিয়া প্ল্যাটফর্মে ভার্চুয়াল সহকারী হিসেবে চালু হয়। এর কাজ হলো নাগরিকদের অনলাইন সরকারি সেবা প্রদান ও ডিজিটাল নথি সংগ্রহে সহায়তা করা। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বে প্রেসিডেন্টের এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এডি রামা’কে একটি ভার্চুয়াল এআই মন্ত্রী তৈরির ও পরিচালনার ক্ষমতা দেয়া হয়। এরপর ডিয়েলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রাষ্ট্রীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মন্ত্রী’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে এটি বিশ্বের প্রথম এআই ব্যবস্থা, যাকে মন্ত্রিসভা পর্যায়ে সরকারী পদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ডিয়েলা তৈরি হয় আকশির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাবরেটরিতে। সেখানে মাইক্রোসফট প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেয়। ওপেনএআইয়ের বড় ভাষা মডেলগুলো ‘অ্যাজুরে’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। আকশি নাগরিকদের অনুরোধের জবাব দেয়ার জন্য ওয়ার্কফ্লো ও স্ক্রিপ্ট ডিজাইন করে। প্রথম সংস্করণ ডিয়েলা ১.০ প্রকাশিত হয় ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে। এটি ইআলবেনিয়া পোর্টালে টেক্সটভিত্তিক চ্যাটবট হিসেবে চালু হয়- যা নাগরিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি সেবার দিকনির্দেশনা দিত। কয়েক মাস পর ডিয়েলা ২.০ সংস্করণে যোগ হয় ভয়েস ইন্টারঅ্যাকশন ও একটি অ্যানিমেটেড অবতার। ঐতিহ্যবাহী আলবেনীয় পোশাক পরিহিত এক নারী। তিনি উত্তর আলবেনিয়ার ঐতিহাসিক অঞ্চল জাদ্রিমার সংস্কৃতি প্রতিনিধিত্ব করেন। ডিয়েলার অবতারের জন্য কণ্ঠ ও চেহারার মডেল দেন অভিনেত্রী আনিলা বিশা। এর চুক্তি ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি নাগাদ ডিয়েলার মাধ্যমে ৩৬,০০০-এর বেশি সরকারি নথি এবং প্রায় ১,০০০ সেবা প্রাপ্তি সহজতর হয়।
মন্ত্রী পর্যায়ের দায়িত্ব: ২০২৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ডিয়েলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রাষ্ট্রীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মন্ত্রী’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এই নিয়োগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে একটি ভার্চুয়াল এআই মন্ত্রণালয় গঠন ও পরিচালনার ক্ষমতা দেয়া হয়। সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার দায়িত্ব ধীরে ধীরে ডিয়েলার কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা আছে। যাতে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস করা যায়। এই পদক্ষেপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের শর্ত অনুযায়ী দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের অংশ। প্রধানমন্ত্রী এডি রামা বলেন, ডিয়েলা নিশ্চিত করবে যে সরকারি টেন্ডার শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত হবে। বলকান ইনসাইট তাদের প্রতিবেদনে মন্তব্য করে, ডিয়েলাকে ঘিরে যে উচ্চাকাক্সক্ষা দেখা যাচ্ছে তা অমূলক নয়। মানসম্মত মানদণ্ড ও ডিজিটাল রেকর্ডের মাধ্যমে সিদ্ধান্তগ্রহণের স্বচ্ছতা ও জনআস্থা বৃদ্ধি সম্ভব। তবে তারা সতর্ক করে দেয় যে সরকারি দরপত্র মূল্যায়নে এআই ব্যবহারে জবাবদিহিতা, প্রক্রিয়াগত ন্যায়বিচার ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে গভীর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ২০২৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী রামা সংসদে ডিয়েলার একটি ভিডিও ভাষণ প্রদর্শন করেন। সেখানে ডিয়েলা বলেন, আমি মানুষকে প্রতিস্থাপন করতে আসিনি, বরং তাদের সাহায্য করতে এসেছি।
এই উপস্থাপনায় বিরোধী এমপিরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। কারণ তারা সংসদ অধিবেশনে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেন। বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির সংসদীয় নেতা গাজমেন্ট বারধি বলেন, ডিয়েলা একটি প্রচারণামূলক কল্পনা- এই সরকারের দৈনন্দিন দুর্নীতি ঢাকতে ব্যবহৃত একটি ভার্চুয়াল মুখোশ। সেই অধিবেশন, যেখানে নতুন মন্ত্রিসভা ও সরকার কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কথা ছিল, মাত্র ২৫ মিনিটে শেষ হয়ে যায়। ৮২ জন সমাজতান্ত্রিক এমপি পক্ষে ভোট দেন, আর বিরোধীরা ভোটে অংশ নেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্দি বুশাটি এই ঘটনাকে ‘অভূতপূর্ব’ বলে অভিহিত করেন। কারণ সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যকার প্রচলিত বিতর্ক ছাড়াই অধিবেশন শেষ হয় । সৌজন্য দৈনিক মানবজমিন