সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেক ফেসবুক আইডি খুলে মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিতো একটি চক্র। এই প্রস্তাবে যারা রাজি হতো যারা তাদের গাজীপুরের চৌরাস্তা/শ্রীপুর/মাওনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডেকে আনতো। এরপর জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করতো। এমন একটি দুর্ধর্ষ অপহরণকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার ও অপহৃত ব্যক্তির বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগ।
বুধবার (১৭ মে) নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির দক্ষিণখান থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলো- মো. তারেক ওরফে তারেক আহাম্মেদ, মোহাম্মদ হৃদয় আলী, আশরাফুল ইসলাম, রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু। তারা মুক্তিপণ না পেয়ে এবং পুলিশের কাছে ধরা পরার ভয়ে অপহৃত আমিরকে হত্যা করে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, ২০২২ সালের ১৭ ডিসিম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা আবু তাহেরের ছেলে আমির হোসেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ঢাকা আসেন। এরপর ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণখান থানার আশকোনা মেডিকেল রোডে আমিরের বড় বোন নুরনাহার বেগম (৩৪) বাসায় ওঠেন। এরপর ২৮ ডিসেম্বর আমিরের ছোট বোন কামরুন্নাহারকে (২২) চক্রের সদস্যরা তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।
ওই ঘটনায় আমিরের বড় ভাই বিল্লাল হোসেন (৪০) দক্ষিণখান থানায় ওইদিনই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির পর থেকে অপহৃত আমিরকে উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ। পরে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বিল্লাল থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও চতুর। তাদের শনাক্ত করতে বেশ কয়েকবার কৌশল পরিবর্তন করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চক্রের সদস্য আশরাফুল ইসলামকে সাভারের জিরাবো এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার দেয়া তথ্যে রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে চক্রের মূলহোতা তারেক আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলীর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর বুধবার দক্ষিণখান থানার বিশেষ একটি দল নোয়াখালীর দুর্গম হাতিয়া দ্বীপে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, গ্রেপ্তারদের দেয়া তথ্যানুযায়ী গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার একটি বাড়ির পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংক থেকে অপহৃত আমিরের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো বস্তাবন্দি গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিসি বলেন, গ্রেপ্তার চক্রের মূলহোতা তারেকের ‘কষ্টের জীবন’ নামের একটি ফেক ফেসবুক আইডি ছিল। এ আইডি দিয়ে বিভিন্ন সময় ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিতো। যারা তার প্রস্তাবে রাজি হতো তাদের গাজীপুরের চৌরাস্তা/শ্রীপুর/মাওনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডেকে আনতো।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোবাইল ও টাকা কেড়ে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিতো। ঠিক এভাবেই আমিরকে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে গাজীপুর চৌরাস্তায় ডেকে নেয়া হয়।
আমির তার বোনের বাসা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় গেলে তারা তাকে জিম্মি করে। পরে তার বোনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। দাবি করা মুক্তিপণ না পাওয়ায় ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমিরকে হত্যা করে। এরপর মরদেহ বস্তায় ভরে বাসার পেছনে পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রেখে আত্মগোপনে তারা চলে যায় বলেও জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।