
রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগে যেসব রাজনৈতিক দল ও জোট জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সংলাপ পর্বে অংশ নিয়েছিল, তারমধ্যে ছয়টি দল মতভিন্নতার কারণে জুলাই জাতীয় সনদে সই করেনি।
সংলাপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে স্বাক্ষর করেছেন।

শুক্রবার বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরের এই আনুষ্ঠানিতা সারা হয়।
সংলাপে থাকা ৩০টি দল ও জোটের মধ্যে ২৪টি এই সনদে সই করে ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে।

সনদে সই করার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করেছে। সারা বিশ্বের কাছে এটি ‘উদাহরণ হয়ে থাকবে’।
সই করেছে যেসব দল
১. বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ
২. জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার
৩. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. নেয়ামুল বশির
৪. খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ এবং মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের
৫. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন
৬. আমার বাংলাদেশ পাটির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
৭. নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার
৮. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন
৯. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ
১০. গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল
১১. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব,
১২. গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন
১৩. বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী
১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান
১৫. ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম
১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান
১৭. জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও জহিরুল হাসান শেখ,
১৮. জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস
১৯. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার
২০. বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম
২১. ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)
২২. জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী
২৩. ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী
২৪. আমজনতার দল সভাপতি মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ তারেক রহমান
সরকারের পক্ষে যারা সই করেছেন
১. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
২. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ
৩. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আইয়ুব মিয়া
৪. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন
৫. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার
৬. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক ও
৭. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
যারা সই করেনি
১. জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
২. বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
৩. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)
৪. বাসদ (মার্ক্সবাদী)
৫. বাংলাদেশ জাসদ
৬. গণফোরাম
চব্বিশের অভ্যুত্থান বাংলাদেশে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা এবং সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, তা কাজে লাগাতেই গতবছরের শেষে এই সনদ করার দাবি তুলেছিলেন জুলাই আন্দোলনের প্রথম সারির নেতারা।
তাদের গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঐকমত্যের সংলাপে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি ‘স্পষ্ট’ না হওয়ার যুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করেছে দলটি।
এছাড়া ইতিহাস ‘সঠিকভাবে না আসা’ এবং সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন নিয়ে আপত্তির কারণে বাম ধারার চারটি দল সনদে সই না করার ঘোষণা দিয়েছিল। দলগুলো হল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
আর গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে এলেও সনদে সই করেননি চূড়ান্ত সনদের কিছু বিষয় নিয়ে মতভিন্নতার কারণে।