
আমজাদ হোসেন,আনোয়ারা
১০ অক্টোম্বর শুক্রবারের সকালটা ছিল অন্য সব দিনের চেয়ে আলাদা। পূর্ব গহিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় সেদিন হাসির সঙ্গে মিশেছিল এক অদ্ভুত বেদনা। ফুলে সাজানো মঞ্চ, ব্যানারে লেখা “শিক্ষার আলোকবর্তিকা আশোক চন্দ্র তালুকদার স্যারকে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।”
দীর্ঘ ৪১ বছরের শিক্ষকতা জীবনের পর বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশোক চন্দ্র তালুকদার বিদায় নিলেন তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠান থেকে।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে যিনি শিশুদের হাতে প্রথম অক্ষর তুলে দিয়েছেন, গড়ে তুলেছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী সেই মানুষটির বিদায় অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় এক আবেগঘন স্মৃতিমেলায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজনীতিবিদ ও শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব মোঃ মোশাররফ হোসেন উদ্বোধন করেন ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল আমিন, বিশেষ অতিথি ছিলেন সানাউল্লাহ কাউছার।
তাঁরা বলেন, “আশোক চন্দ্র তালুকদার স্যার শুধু শিক্ষক নন, তিনি এক প্রজন্মের পথপ্রদর্শক, যাঁর স্নেহ আর শাসনে বড় হয়েছে অগণিত শিশু।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও সম্মাননা দেওয়া হয় সাবেক শিক্ষক মোহাম্মদ হাশেম, প্রয়াত শিক্ষক মরহুম আব্দুল কাদেরকে জানানো হয় মরণোত্তর শ্রদ্ধা। নবাগত শিক্ষক শুভ চক্রবর্তীকে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন উদ্যমে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোঃ সাহাবুদ্দিন, আবদুল্লাহ আল মনির, মোঃ নাছিম, মোঃ দিদার, মোঃ ফোরকান, সৈয়দ আকবর রুবেলসহ অনেকেই বলেন,“স্যার আমাদের শুধু পড়ালেখা শেখাননি, মানুষ হতে শিখিয়েছেন। আজ তাঁর বিদায়, কিন্তু তিনি চিরদিন আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।”
বিদায়ের মুহূর্তে স্যার নিজেও চোখ মুছে বললেন,বিদ্যালয় আমার কর্মস্থল নয়, এটি আমার পরিবার। ৪১ বছরের প্রতিটি দিন আমার গর্ব, আমার ভালোবাসা।”
সেদিন সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়েছিল, কিন্তু স্যারের জীবনের আলো নিভে যায়নি।পূর্ব গহিরা বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ, প্রতিটি বেঞ্চ, প্রতিটি ছাত্রের হৃদয়ে তিনি থেকে যাবেন একজন সত্যিকারের শিক্ষক হয়ে —যার বিদায়ে চোখ ভিজেছিল হাজারো ছাত্রের, আর মুখে উচ্চারিত হয়েছিল একটাই শব্দ — “স্যার, আপনার প্রতি সালাম।