
মাহমুদুল হক আনসারী
আগস্ট মাস জাতীয় শোকের মাস। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত এর মাস। তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক,। বিশ্ব নেতা। আন্দোলন সংগ্রাম ভাষণ বক্তৃতার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করেছেন। মানবতাবাদী মহান নেতা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মানচিত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন। পাকিস্তানি জালিম শোষকের হাতে চরমভাবে নির্যাতন সহ্য করেছিলেন। তার মেধা, যোগ্যতায় প্রতিবেশী দেশের সহযোগীতায় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম দেশ এ জাতি পেয়েছে। তার ভাষণ আজ দুনিয়াব্যাপী সমাদৃত। তার মধুর কন্ঠ আর বক্তৃতায় জাদু রয়েছে। জেল জুলুম সহ্য করে তিনি বাঙালি জাতিকে মুক্তি এনে দিয়েছিলেন। তার অবদান শ্রম ও মেধার বিনিময়ে বাংলাদেশের মানচিত্র আজ দুনিয়াব্যাপী পরিচিত।
আমার সোনার বাংলাদেশ আজ অনেক দিকে এগিয়ে। স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে এখন খাদ্য উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। মাছ, পাট, ডাল তরি তরকারি শাক সবজি ফল মূল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা প্রকারের কৃষি উৎপাদিত ফল ফলাদী বারো মাসে পাওয়া যায়। সকালবেলায় বাসার মুখে এসে তরি তরকারির ভ্যান গাড়ি ডাকবে তরকারি তরকারি করে। মাছ বিক্রেতা এসে পুকুর সাগরের মাছ নিয়ে পাড়া মহল্লায় হাজির। পুকুর ভরা মাছ চাষ হচ্ছে। নদীতে খাল বিলে প্রাকৃতিক মাছে ভরপুর। সারাদেশের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়নের কারণে দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করতে সামান্য কয়েক ঘন্টার ব্যাপার মাত্র। শহর গ্রামের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে কৃষি পণ্য ঠিক সময়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যায়।
বাংলাদেশ এখন সর্বত্রই খাদ্যপ্রাপ্তি জনগণের হাতের নাগালে। বিশ্ব বাজারের নানা অনিয়মের কারণে মূল্য তালিকা কিছুটা পরিবর্তন হলেও দেশে কোন ধরনের খাদ্য সংকট নেই বলা যায়। সারা দেশের কৃষি জমিতে বছরে তিন থেকে চার বছরের ধান সহ তরকারি উৎপাদিত হচ্ছে। বাজারে তরি তরকারির কোন সংকট নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ হতে দেশের বাজারের কৃত্রিম সংকট হলে কিছু কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় উৎপন্ন আমদানি করা হয়। দেশের সাধারণ মানুষ খাদ্যপণ্য নিজ চাহিদা মত ক্রয় করতে পারে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশের জনগণ অনেক সুখে আছে। দেশের জনগণ কৃষক , শ্রমিক ব্যবসায়ী তাদের ছেলে সন্তানদের মনের মত স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়াচ্ছে। সরকারি বেসরকারি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন কৃষক ও দিনমজুর পরিবারের সন্তানরা পড়ছে। তারা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক প্রফেসর হচ্ছে।
উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরেও যাচ্ছে। বাংলাদেশের মহান নেতা স্থপতি শহীদ শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেম ভালবাসা ত্যাগের ফসল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট।্র তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সফল হয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকান্ডে খুবই খুশি। জনগণ তাদের নিজ নিজ কাজকর্ম করে ভালই চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চাকরি কৃষি কাজ করে মানুষ মনের খুশিতে চলছে। তবে দেশে নিয়মিতভাবে আজকের যুব সমাজের মাঝে চিন্তা হতাশা টেনশন বাড়ছে।
তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়ার পর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না। শিক্ষিত অশিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের যথেষ্ট অভাব দেখা যাচ্ছে। তারা যেভাবে হতাশ চিন্তিত তাদের পরিবার ও তাদের জন্য হতাশাগ্রস্ত । শিক্ষা শেষ করে তাদের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। সার্টিফিকেটের বয়স থাকে না। পরিবারের মধ্যে তাদের উপর অনেক ভাবে দায়িত্ব থাকে। পড়ালেখা শেষ করে পরিবার-পরিজনের সুখ দুঃখেও ভাগীদার হবে। অভাব অনটনের সংসারে অর্থনৈতিকভাবে পাশে দাঁড়াবে। আত্মীয়-স্বজনদের দেখবে খোঁজখবর নিবে। পিতা মাতার জন্য আর্থিকভাবে পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু রাষ্ট্রের শিক্ষিত যুবকদের জন্য সেই ধরনের কোন পরিকল্পনা দেখছি না।
ফলে সেইসব শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে হতাশা দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠনের জালে পা বাড়াচ্ছে। অর্থ মাদক মানব পাচার সহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। পরিবারের নিয়ন্ত্রণ মানতে চায় না। কিছু কিছু নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক দল নেতারা তাদেরকে অপরাধ কর্মকাÐে জড়িয়ে ফেলে। মাদক ভূমিদস্যু চোরাকারবারির মত অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষিত সন্তানদের কোনভাবেই বেকার রাখা যাবে না। কর্মসংস্থান না হলে পরিবার সংসারে অশান্তি বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
অর্থ অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক সুখ শান্তির চাবিকাঠি। রাষ্ট্রকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে জোর চেষ্টা চালাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ আজ কোন দিকেই পিছিয়ে নেই। উন্নত দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার। বর্তমান সরকারের মেয়াদে করুনা মাহামারী জয় করে দেশের জনগণকে ঘরে ঘরে এলাকায় এলাকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিরোধক টিকা প্রয়োগ করে ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্য খাতে সাফল্য অর্জন করেছে। প্রতিটি ইউনিয়ন উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে। গ্রামের দুস্থ নর নারী শিশুরা বিনামূল্যে চিকিৎসা ওষুধ পাচ্ছে।
বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার স্বাস্থ্য খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। তবে গ্রামের চিকিৎসা কেন্দ্র শহরের ডাক্তাররা যায় না নার্স ও ওষুধ প্রদানকারী কর্মচারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীদের ওষুধ দিয়ে বিদায় করে। শহর এলাকায় দু একটি কেন্দ্রে ডাক্তারদের দেখা মিললেও গ্রাম কেন্দ্রে ডাক্তাররা মাসে দুই থেকে তিনবারের বেশি যায় না। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে ম্যানেজ করে চাকরি ধরে রাখে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসব অনিয়মের খবর রাখে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাজার হাজার কোটি টাকার মানবিক স্বাস্থ্য প্রকল্পকে কতিপয় স্বার্থপর ও জনগণ বিরোধী অনৈতিক মানুষ প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
ওইসব কেন্দ্রের জন্য প্রাপ্ত ওষুধ বাইরে বিক্রি করে দেয়। চেম্বার করে না আবার ওষুধ বাইরে বিক্রি করে দেয়। বড় মাপের চোর তারা। তাদের এসব ও নিয়মের ব্যাপারে অফিসারদের নিকট অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। এটা সারা দেশের কমিউনিটি ও সরকারি হাসপাতালে দৃশ্য। তাদের ব্যাপারে ব্যাপকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। পরিবার পরিকল্পনায় নিয়োগ মাঠ কর্মী ও সুপার ভাইজাররা মাসে তিন দিনও কর্মস্থলে থাকে না। লেখক ব্যাপকভাবে সরে জমিনে পর্যবেক্ষণ করে এসব কথা বলছে। সরকারের হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এবং অর্থ তারা নয় ছয় করে পকেটে ভর্তি করে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ জনগণের অবকাঠামো উন্নয়ন চিকিৎসায় অগ্রগতি ব্যবসা-বাণিজ্য জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে সফলতা দেখলেও ঘুষ দুর্নীতি ও নিয়ম পাচার মোটেও কমছে না।
দিন দিন ঘোষের প্রচলন বাড়ছে। সরকারি অফিসে ঘোষ ছাড়া কোন ফাইল নড়ে না। কর্মকর্তারা জনগণের সাথে জমিদারের মতো আচরণ করে। অফিসের মালিক সেই কর্মকর্তা এবং কর্মচারী সাংবিধানিক অধিকার নাগরিক মূল্যবোধ সবকিছু ভুলে তারা অতিরিক্ত ভাবে পকেট ভর্তি করার অনৈতিক কাজে ব্যস্ত থাকে। তাদের মধ্যে নীতি নৈতিকতার কোন চরিত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। স্বাধীন বাংলাদেশের শহীদ স্থপতি বঙ্গবন্ধু এমন রাষ্ট্র ও প্রশাসন জনগণের জন্য রেখে যাননি।
তিনি জবাবদিহি মূলক প্রশাসন জনবান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ সংগ্রাম করেছেন। সফল হয়েছেন। দেশের মানুষের জন্য সপরিবারে রক্ত দিয়ে ইতিহাস করেছেন। সেই দেশে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বলতে চাই আমাদেরকে জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। জনগণ ও দেশের টাকা চুরি করে পাচার করা বন্ধ করতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের কঠোরভাবে আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
অর্থ লুটকারি ব্যাংক ডাকাতদের হাতকড়া পরাতে হবে। অর্থ ফেরত নিতে হবে। সেই অর্থ সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করতে হবে। মহান শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি হাজার সালাম তার আত্মার প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, জনগণের মনের ভাষা বুঝে গণতান্ত্রিক ধারা নিয়ম-শৃঙ্খলার সবগুলো ধারা রক্ষা করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পরিবেশ তৈরি করুন। মানুষ নিজের ভোট নিজে প্রয়োগ করতে চায়। ভোটাধিকার আমেজ আনন্দঘন পরিবেশের মাধ্যমে নির্বাচন চাই। সব দল জোট যেন নির্বাচনে আসতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করুন। সংবিধান মতে নির্বাচন করুন।
সব দলের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার ক্ষমতা দিন। বাইরের দেশের অযাচিত হস্তক্ষেপ বিবৃতি কথাবার্তা স্বাধীন দেশের জন্য লজ্জ্বাজনক। যেকোনো বিষয়ে বাইরের মোড়লরা নাক গলাবে সেটা দেশপ্রেমিক জনগণ সুন্দরভাবে দেখে না। এগুলো বন্ধ করুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার উপর দেশের জনগণের সমর্থন দেখতে পাচ্ছি।
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সবগুলো উন্নয়ন আপনার সরকারের হাতে গড়া। মানুষ তৃণমূল পর্যায়ে আপনার উন্নয়ন সেবা গ্রহণ করছে। কোন অবৈধ শক্তি আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। শোকের মাসে আগস্ট মাসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু ষড়যন্ত্র হয়। চোখ কান খোলা রেখে আপনার সরকার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। চক্রান্তকারী দেশি-বিদেশি ও দলীয় সুযোগ সন্ধানীদের উপর কড়া নজর রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ আজ বাস্তব উপকৃত সোনার দেশে পরিণত। মহান জাতির জনক স্বাধীনতার স্থপতি শহীদ শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের সকল শহীদের আত্মার প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধা ভালোবাসা, জান্নাতুল ফেরদৌসের সুউচ্চ মহান মর্যাদার প্রার্থনা করছি।