“রেলওয়ের ক্যাটারিং সার্ভিসের টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও করা হচ্ছে না নতুন টেন্ডার।” এই শিরোনামে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গত (২৫ জানুয়ারি বুধবার) বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন রেলওয়ে ক্যাটািরিং এর ১৭ ঠিকাদার সিন্ডিকেটদের নিয়ে যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন করার বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের সহায়তাকারী সিসিএম বিভাগের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম।
সূত্রমতে, ২৩ জানুয়ারি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর রেলওেয়ের উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার সিন্ডিকেট বিপুল পরিমান টাকার বিনিময়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেনকে দিয়ে এই বৈঠকের ব্যাবস্থা করেন।ওই বৈঠকে বাংলাদেশ পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন ১৭ ঠিকাদার সিন্ডিকেটের অবৈধ টেন্ডার বাতিল না করে উল্টো তাদেরকে নিয়ে রেলওয়ের সেবা ও খাবারের মান কিভাবে উন্নত করা যায় তা নিয়ে অলোচনা করেন। যা পুরোটাই ছিল লোক দেখানো এবং খুবই হাস্যকর একটি বৈঠক। পুরো আলোচনায় একবারও (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন অবৈধ টেন্ডার এর কথা উল্লেখ করেন নি।
সূত্রমতে, গত ৩ মাস আগে এই অবৈধ টেন্ডার বাতিল করার জন্য বাংলাদেশ রেলওেয়ের ডিজির কার্যলয় থেকে চিঠি দেয়া হয় (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সিসিএম নাজমুল হোসেনকে অথচ সেই আদেশ অমান্য করে করেন তারা।
এই বিষযে সিসিএস নাজমুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,২০২১ সালে প্রাক তুলিকাভুক্ত করনের জন্য ওপেন টেন্ডার ডাকা হয় এবং ৪৩ জন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাক তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু নানান ঝামেলার কারণে এখনো তালিকাভুক্তি করা হয়নি। তিনি বলেন সাবেক ডিজি ডি এম মজুমদার পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ-ই ১৭ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেই বজায় রাখতে বলেছিলেন। তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নবায়ন করলে সরকারের রাজস্বের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। প্রতিবার নবায়ন করলে সরকারের ১০% করে রাজস্ব বাড়ে। তাহলে কি নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করলে সরকারের রাজস্বের পরিমাণ কমে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন টেন্ডার হলে রাজস্ব বাড়তে ও পারে আবার কমতেও পারে। নতুন টেন্ডার হলে রাজস্ব কিভাবে কমে যাবে সেটির কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে আবারও তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে, যদি আসে তাহলে আগে তালিকাভুক্তির কাজ শেষ করার পর নতুন টেন্ডারের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তালিকাভুক্ত করনের কাজ শেষ করে কবে নাগাদ নতুন টেন্ডার হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন সেটা দুই বছর লাগতে পারে আবার পাঁচ, দশ বছরও লাগতে পারে। এইটা অনেক জটিল প্রক্রিয়া।
তথ্যমতে, নতুন ঠিকাদারদের তালিকাভুক্তির কাজ যাতে দেরি হয় এবং এই ১৭ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলোই যেন বার বার কাজ পায় তার পিছনে আছেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সর্দার শাহাদাত আলী। তিনি পুবাঞ্জলের সিসিএম থাকা অবস্থায় বিভিন্ন স্টেশনে ৪৮ টি দোকান তার মনোনীত ব্যাক্তিদের লীজ দেন।
নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হবে কিনা এই বিষয়ে পুর্বাঞ্জলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন এর কাছে জানতে চাওয়ার জন্য বার বার তার মুটোফোনে কল এবং এস এম এস করে ও সাড়া পাওযা যায়নি।
এই বৈঠকের ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু ঠিকাদার বলেন, এইটা তো রেলওয়ের কর্মকতাদের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য করা হযেছে। এও রকম বৈঠক আগে অনেক বারই করা হয়েছে। এ-ই সব দুর্নীতিবাজ কর্মকতা এবং এই ১৭ জন ঠিকাদার সিন্ডিকেটের কাছে পুরো রেলওয়ে জিম্মি হয়ে আছে। এদের জন্য আমরা সাধারণ ঠিকাদাররা বছরের পর বছর কোন কাজ পাচ্ছি না। এই সবের কারনে অনেক নামকরা পুরানো ঠিকাদার রেলওয়ের ঠিকাদারির কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। সরকার যদি রেলওয়ের এই সব দুর্নীতিবাজ কর্মকতা এবং সিন্ডিকেট ব্যাবসায়িদের উপর কঠিন পদক্ষেপ না নেন তাহলে অচিরেই রেলওয়ের দীর্ঘ দিনের সুনাম নষ্ট হয়ে যাবে।