1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হলেন শিল্পপতি খলিলুর রহমান বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করেছে ২১নং জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের আলম আশিক দেশে ২০ হাজার শিশু ডায়াবেটিসে ভুগছে মনজুর আলম প্রতিষ্ঠিত নতুন ৩ টি জামে মসজিদ জুম্মার নামাজ আদায় এর মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে –  সিমিন হোসেন পতেঙ্গা চরপাড়ায় অবৈধ অনুমোদহীন আইসক্রীম ফ্যাক্টরীঃ প্লাস্টিক ফ্যাক্টরী লোকেরাই আইসক্রীম ফ্যাক্টরীরও কর্মী গনচিনি, চ্যাকারাইন, লোংরা পানি ও বিষক্ত ক্যামিক্যাল ব্যবহার সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখীতে ‘সবুজ চুড়ি আন্দোলনে ২৫শ তালগাছ রোপন সাংবাদিক ওমর ফারুকের ইন্তেকাল ২৯ শে এপ্রিল নিহতদের স্মরণে সাহিত্য পাঠচক্রের স্মরণ সভা পথচারীদের মাঝে শরবত, পানি ও গামছা বিতরণ করলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর 

চট্টগ্রামের আলোর মশাল হাফেজ মুনিরুদ্দীন নুরুল্লাহ রহ. – কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১৬৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলার নব আকাশের দীপ্তমান সূর্যসন্তান ছৈয়দ হাফেজ মুনিরুদ্দীন নুরুল্লাহ রহ. আধ্যত্ম জগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম। যে কজন অলীয়ে কামেলের পদচারণায় চট্টগ্রামের জনপথ ধন্য হয়েছেন; তাঁদের মধ্যে এ মহান অলীয়ে কামেলের নাম উল্লেখযোগ্য। যাঁর পরশে মানবকুল পেয়েছে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব সা.’র রেজামন্দি। নবী বংশের এ প্রস্ফুটিত গোলাপ ফুল আনুমানিক ১৮৮১ সালের দিকে এ ধরণীতে আগমন করেন। তিনি ছিলেন একজন হাফেজে কুরআন ও শরীয়তের বিদগ্ধ আলেম। পাশাপাশি ইলমে লাদুন্নী ও বেলায়তি শক্তিতে ভরপুর ছিলো তাঁর নূরানী সিনা। এ জ্ঞান অত্যন্ত দুর্লভ ও অদৃষ্টপূর্ব।
তাঁকে পবিত্র কুরআনুল করিমের ছবক প্রদান করেছিলেন মাইজভান্ডার দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা ‘গাউছুল আজম’ খ্যাত মাওলানা ক্সসয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী রহ.। তরীক্বত পন্থীদের কাছে তিনি সুলতানুল আউলিয়া, কুতুবুল এরশাদ, শাহ্ সাহেব, হজরত ক্বেবলা ও নুরুল্লাহ নামে পরিচিত ও সমাদৃত।
ইলমে তাসাউফ ও তরীক্বতের দীক্ষা নেন, ভারতের আজমগড় নগরীর জিন্দা অলী ও তরীক্বত জগতের দীপ্তমান সূর্য; হাফেজ মে․লানা হামেদ হাসান রহ.’র কাছ থেকে। তাঁর পীরও মুর্শিদ ছিলেন চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ক্সসয়দ শাহ্ আবদুল বারী ওয়াইসি রহ. (ভারত); তাঁর সরাসরি পীর ও মুর্শিদ ছিলেন চিশতিয়া নেজামিয়া তরীক্বার পীর হজরত আবু হামেদ মিয়া করিম বক্স রহ. (ভারত) এবং সূফি ফতেহ আলী ওয়াইসির  স্নেহধন্য খলিফা শামসুল ওলামা গোলাম সালমানী আব্বাসী রহ. (ফুরফুরা, ভারত)।
হজরত কেবলা; আজমগড়ী হজরত কর্তৃক সাত তরীক্বার খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছিলেন ১৯১৪/১৫ খ্রি.। এ মহান আল্লাহর অলীর; এমন বেলায়তি শক্তি ছিলো, যা অকল্পনীয় ও অবর্ণনীয়। মুহূর্তের মধ্যেই মানবের মুর্দা দেল জিন্দা করতে পারত! মুর্দা ক্বলবদারীদের আল্লাহর জালালিয়াতের ফয়েজ জারি করে ক্বলবে আল্লাহর ভয়ের প্রাণসঞ্চার করত! নবীয়ে পাক দ.’র জামালিয়াতের ফয়েজ জারি করে ক্বলবে রাসূলে পাক দ.’র মুহাব্বতের প্রাণসঞ্চার করত! কত মানুষকে ইনসানে কামেল বানিয়েছেন তাঁর কোন হিসাব নেই।
যুগের বড় বড় আলেম, ফকীহ, মুহাদ্দিস, মুফতি এবং সত্যসন্ধানীরা সরাবে ইলাহী ও কুরবতে মোস্তফা দ. হাসিলের জন্য তাঁর চরণে ছুটে আসত! বেলায়াতি তরির এ মহান কান্ডারি; যার দিকে একবার মুহাব্বতের নজরে দৃষ্টিপাত করতেন; সে আল্লাহ ও রাসূল দ.’র প্রেমে আত্মহারা হয়ে পাগলপারা হয়ে যেত। এজন্য রাসূল্লাহ সা. বলেছেন, ‘‘তোমরা মুমিনের অন্তরদৃর্ষ্টি সম্পর্কে সজাগ থাকো। কারণ সে আল্লাহর নূরের সাহায্যে দেখে’’ (জামে’আত তিনমিজি ৩১২৭)। হাদিসে শরীফে আরো বলা হয়েছে, “ওয়া বসরাহুল লাযি ইবসিরু বিহি” অর্থাৎ আমি তাঁর চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে (বুখারী- ৬৫০২)। তিনি ছিলেন উঁচু মানের শরাফত ও আজমত ওয়ালা আত্মিক শুদ্ধ পুরুষ। সারাজীবন কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবনযাপন করেছেন। প্রতি কদমে কদমে সুন্নতের পায়রবি করেছেন। এজন্য তাঁকে সুন্নতে নববীর জলন্ত শিখা বলা হয়। ছোট বেলা থেকে আল্লাহ প্রেমী ও খুবই পরহেজগার প্রকৃতির ছিলেন। জীবন পরিক্রমায় সবসময় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন; বাড়াবাড়ি মোটেও পছন্দ করতেন না। বাঁশের বেড়া দিয়ে নির্মিত একটি ছোট্ট ঘরে বসবাস করতেন। অতি গরীবী হালতে সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। আবূ দাঊদ শরীফে ৪১৬১নং হাদিসে রাসূল দ. বলেছেন, “আল বাযাযাতু মিনাল ঈমান” অর্থাৎ “শে․খিনতা ও বিলাসিতা বর্জন করে সাদাসিধে জীবনযাপন করা ঈমানের অঙ্গ”। শত বিপদ-আপদে, অভাব-অনটনে ও সংকটে আল্লাহর ফয়সালার উপর অটল ও অবিচল থাকতেন। এ গুণীজনের আত্মগে․রব ও আত্ম-অহঙ্কারের লেশ মাত্র
ছিলো না। ছোট বড় সবাইকে প্রথমে সালাম জানাতেন। সবার সামনে নিজকে ছোটভাবে উপস্থাপন করতেন। খুবই মার্জিতভাবে জগৎ সংসার করতেন। কারোও কাছ থেকে হাদিয়া নেওয়াকে অপছন্দ করতেন। তবে মানুষকে হাদিয়া প্রদানে অগ্রগামী ছিলেন।প্রতি রমজানে খতমে তারাবিহ পড়ানোর জন্য বঙ্গদেশ হতে সুদূর বার্মার রেঙ্গুন শহরে পাড়ি জমাত।
সেখান হতে কিছু হাদিয়া পেতেন। উক্ত হাদিয়া এবং জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। এ মহান অলী; তাঁর সন্তানতূল্য জাকেরানদের হালাল খাবার আহার করার জন্য নিজ জমিতে ফসল বোনা, পশু পালন ও পুস্করিনীতে মাছ চাষ সহ নানান কাজ সমাধা করাতেন মুরিদানদের দিয়ে। কারণ হালাল আহার না করলে মুর্দা দেল জিন্দা হয় না। মুরিদানদের আফসোস করে বলতেন, ‘‘হে আমার রূহানী সন্তানরা!
আমি গরীব মানুষ। আমার কাছে অঢেল সম্পদ নেই। আপনারা ফসল জমিতে চাষাবাদ করে নিজেদের আহারের ব্যবস্থা করুন। এতে রূহানী শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এতেই কল্যাণ নিহিত আছে।” ভালবাসা এবং আন্তরিকতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতেন। এরপর কুরআন-হাদিস ও ইলমে তরীক্বতের শিক্ষা দিয়ে
মানবের ক্বলবে আল্লাহ ও রাসূলের প্রেমের আগুন জ¦ালিয়ে দিতেন। এ প্রেমের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে বান্দা এক পর্যায়ে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে মত্ত হয়ে পড়তেন। এটি ছিলো তাঁর অন্যতম চারিত্রিক বিশেষত্ব। তাঁর জীবন দর্শন ছিলো সৃষ্টির কল্যাণে কাজ করা।দিনে-রাতে, শয়নে-স্বপনে, নিদ্রায় ও জাগরণে তাঁর ক্বলব ও জবান আল্লাহর জিকিরে অবিশ্রান্তথাকত।
কারণ আল্লাহ পাকের স্মরণেই তরণ এবং অস্মরণে মরণ। আবশ্যিক বান্দেগীর পাশাপাশি অত্যধিক অতিরিক্ত এবাদত করতেন। তাহাজ্জুদ নামাজে ১৫ পারা কুরআন তেলাওয়াত খতম করতেন। দৈনন্দিন পাঁচ হাজার বার আল্লাহর জিকির করতেন। বাদে ফজর তরীক্বতের অজীফা ও সালাতুল ইশরাক শেষ করে ভোর আট বা নয় ঘটিকা পর্যন্ত মোরাক্বাবায় করতেন। বাকী ওয়াক্তিয়া নামাজান্তে দেড়-দুই ঘন্টা পর্যন্ত মুরাক্বাবা-মোশাহাদা করতেন। অনেক সময় পুরো রাত এবাদত বান্দেগীতে কেটে যেত! দীর্ঘসময় মুরাক্বাবা করার কারণে মাঝেমাঝে পা ফুলে যেত! মুরাক্বাবা করার সময় নিম্মস্বরে কান্নার আওয়াজ শুনা যেত। মাঝেমাঝে চোখও ফুলে যেত! মোরাক্বাবা আরবী শব্দ; বাংলায় ধ্যান এবং ইংরেজিতে মেডিটেশন।খুবই অল্পভাষী ও অল্পাহারী ছিলেন। খাবার-দাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতেন। সন্দিহান ও  অবৈধ পথে ইনকামকারীর খাবার গ্রহণ করতেন না। অনেক সময় আল্লাহ পাক তাঁকে ইনহাম করে নানান বিষয় জানিয়ে দিতেন।
রমজানে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষে সেহরী গ্রহণ পর্যন্ত “লা ইলাহা ইল্লাহু” জিকির করতেন। রমজানের শেষ দশদিন মসজিদে ইতিকাফ থাকতেন; মাঝেমাঝে পুরা রমজান মাসও। অনেক সময় ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে আরোও দশদিন ইতিফাক থাকতেন। বছরের প্রায় সময় রোজা রাখতেন। আত্মসংযম রুহানিয়াত বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ধন-দে․লতের, রোগ মুক্তির, মামলা মোকাদ্দামার, দুনিয়ার বাদশাহীর, সন্তানসন্ততির এবং আখেরাতের বাদশাহীর জন্য আল্লাহর এ প্রিয় বান্দার নিকট প্রতিদিন-রাত অসংখ্য মানবকুল নানান দরখাস্ত নিয়ে ভীড় জমাত। আল্লাহর এ মকবুল বান্দা, সকলের আর্জি মনভরে শুনতেন। এরপর আল্লাহর দরবারে সকলের আবেদন পেশ করতেন। কতজনের ভাগ্য এ মহান অলীর দোয়ার বদে․লতে পরিবর্তন হয়েছে তাঁর কোন পাত্তা নেই। এজন্য নবী করিম সা. বলেছেন, ‘দোয়া-ই এবাদত (জামে আত তিরমিজি)।’ দোয়া হচ্ছে, মুমিনের জন্য অস্ত্র স্বরূপ।সকল শ্রেণী ও বর্ণের মানুষ ছিলো তাঁর কাছে সমমর্যাদাতূল্য। তবে গরীব মানুষকে বেশ মুহাব্বত করতেন। আল্লাহ তা’লা বলেন, “আমি আমার বান্দার অন্তর দেখি শুধু।” আল্লাহর কাছে মানুষের ধনদে․লত, যশখ্যাতি, শারীরিক গঠন ও সে․ন্দর্যতা মূল্যহীন; শুধুমাত্র ঈমান ও আমল ছাড়া। রূহানী সন্তানদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতেন। মেহমান ও মুরিদানদের তালিম দেওয়ার জন্য ১৯৪৫ সালে একটি তাবলীগ মঞ্জিল বা মুসাফির খানা নির্মাণ করেছিলেন। বস্তুতঃ নিজের বাড়ী, স্থানীয় মসজিদ ও তাবলীগ ঘরকে তাসাউফ চর্চার প্রাণকেন্দ্রহিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এমন প্রতিষ্ঠান সমূহ দিনদিন আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
গুনাহগার বান্দাদের আল্লাহর রেজামন্দির পথে কনভার্ট করার জন্য বেশ কিছু কলাকে․শল প্রয়োগ করতেন। তন্মধ্যে- প্রথমেই তালিব বা শিষ্যকে অজিফা পাঠ করতে নির্দেশ দিতেন। কারণ মুর্দা দেল জিন্দা হওয়ার ক্ষেত্রে তরীক্বতের অজিফা সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। দেল পরিচ্ছন্নহলে; ক্বলবে রূহানিয়াত লাভের দরজা খুলে যায়। মৃত ক্বলবকে জাগিয়ে তুলতে পারে কুরআন তেলাওয়াত, জিকিরুল্লাহএবং দরুদে মুস্তফা দ.। অজিফার মাধ্যমে মুরিদের দেল জিন্দা হলে পরবর্তী ছবক প্রদান করতেন। মুরিদ শত চেষ্টায় দেল জিন্দায় ব্যর্থ হলে; তিনি সরাসরি ক্বলব জারির কাজ সমাধা করতেন। একটি কথা বলে
রাখা প্রয়োজন, ক্বলব জারি করা সহজ কোন বিষয় না। ক্বলব জারি বলতে বান্দাকে নিষ্পাপ করে; স্বচ্ছ দেলে আল্লাহর নূরের তজল্লি প্রদান করা। অনেক সময় ক্বলব জারির ক্ষেত্রে তিনি হজরত জিব্রাইল আ. এর সহায়তা নিতেন। অজিফার মাধ্যমে তালিবদের আত্মিক উন্নয়ন সাধিত হলে যাচাই বাচাই করে মুরিদ করতেন।
তাসাউফপন্থীদের কাছে তিনি তরীক্বতকে জটিলভাবে উপস্থাপন করতেন, যাতে আবেগী ও অলসরা এ পথে না আসে। কারণ তরীক্বত এমন একটি কঠিন বিষয়। যা ঠিকমত পালন করলে ঈমানদার; গাফেলাতি করলে বেঈমান! তিনি বলতেন, ‘‘যারা তরীক্বতের কাজ করে না তারাও জান্নাতে যাবে; তবে কেউ যদি তরীক্বতের ছবক নিয়ে ঠিকমত আদায় না করে তাহলে সে জাহান্নামে যাবে! কারণ সে সিলসিলার উর্ধ্বতন পীর-মাশায়েখদের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করেছে।”
মুরিদানদের সবসময় কুরআনুল করীমের ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ দিয়ে প্রাণবন্তরাখতেন। আছরের নামাজের পর মুরিদানদের সাথে নিয়ে মুরাক্বাবা করতেন। মুরাক্বাবার হালত কেমন হতে পারে তা অন্তর চক্ষু দিয়ে অনুভব না করলে অনুধাবন যাবে না। তাওয়াজ্জুহ বলতে বুঝায় আত্মিক শক্তি বা প্রভাব। পীর আউলিয়াগণ তাঁদের অন্তরস্থিত আত্মিক শক্তি বা প্রভাবের সাহায্যে মুরিদদের অন্তরে আল্লাহর যিকির জারি বা চালু করে দেওয়ার পদ্ধতিকে তাওয়াজ্জুহ বলে। মুরিদানরা ছবক ঠিকমতো আদায় করছে কিনা তাও তিনি সূ²ভাবে তদারকি করতেন। কোনো ক্ষেত্রে ভুল হলে শোধরিয়ে দিতেন।
এ খ্যাতিমান মহাপুরুষ, সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবারে একটি ধর্মীয় মাহফিলের আয়োজন করতেন। যেখানে সাধারণ মুসলমান ছাড়াও উচ্চ শ্রেণীর আলিম, মুফাচ্ছির, মুফতী-মুহাদ্দিস, ফকীহ, পীর-মাশায়েখ, কাজী, আধ্যাত্বিক তত্ত¡বিদ, ধর্মতত্ত¡বিদ ও সুফী-দরবেশগণ উপস্থিত থাকতেন।
এ মহান আত্মিক শুদ্ধপুরুষ, ইসলামের সুমহান দাওয়াত প্রচারে বাংলার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে চষে বেড়িয়েছেন। এ মহান ওলিয়ে কামেলের বড় কারামত হচ্ছে, গোমরাহী জাতিকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্ট অর্জনের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। অন্ধকার পথ থেকে বেরিয়ে মানুষকে আলোর পথ তথা হেদায়তের পথে পরিচালিত করেছেন।
মাজার কেন্দ্রীক কুসংস্কারপূর্ণ কার্যক্রমের বিরোধীতা করেতেন। যেমন, কবরে সিজদা দেওয়া, মানত করা, মুরিদ কর্তৃক পীর সাহেব কে টাকা-পয়সা দেওয়া ও জমি-জমা কিনে দেওয়া, অপ্রয়োজনে মাইক ব্যবহার করা, তরীক্বতের নামে শরীয়ত বহির্ভূত কর্ম সমাধা করা, অপ্রয়োজনে মোমবাতি বা আগরবাতি জ্বালা, কবরে চুমু দেওয়া, মাজারে বা খানকায় বেপর্দায় নারী-পুরুষের অবাধ চলাফেরা, পীরালীর নামে রমরমা অর্থ বাণিজ্য করা, অপ্রয়োজনে ছবি তুলা, কবর কেন্দ্র করে শরীয়ত বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করা, মাজারের নাম দিয়ে দান বক্স বসানো সহ নানান কুপ্রথা। পৃথিবীর মাঝে যে কটি তরীক্বা সম্পূর্ণ শরীয়তে মুহাম্মাদির উপর পরিচালিত হচ্ছে তন্মধ্যে হজরত ক্বেবলার তরীক্বা অন্যতম। কারণ এ তরীক্বা সম্পূর্ণ
শরিয়তের উপর ইস্তিকামাত। এ তরীক্বায় নূন্যতম শরিয়ত বহির্ভূত কোন কাজ নেই বললেও চলে। শহীদে বালাকোট ‣সয়দ আহমদ বেরলভীর বাগানের এ সুভাষিত ফুল; সূফি ফতেহ আলী ওয়াইসির মত ইচ্ছা করলে নবী করিম সা.’র দিদার নিতে পারতেন। ১৯৪৭ সালে মক্কায়ে মুয়াজ্জামা ও মদীনায়ে মুনাওয়ারায় পাড়ি জমিয়ে হজ¦ব্রত পালন করেন। বেলায়তি শক্তি প্রদর্শন ও প্রয়োগ করতে অপছন্দ করতেন। প্রয়োজনবোধে আল্লাহ প্রদত্ত এ মহান শক্তি প্রয়োগ করতেন। উচ্চমাত্রার কাশফদারী ছিলেন।
ফরিয়াদকারী মুখে বলার আগেই তার আর্জি সর্ম্পকে জানিয়ে দিতেন; প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটেছে। নীরবে নিভৃতে থাকতে পছন্দ করতেন; তবে মধু যেখানে মে․মাছি সেখানে। এ হিসেবে বেশি সংখ্যক লোকজন হুজুরের বাড়ীতে ভীড় জমাত। রূহানী জগতের এ মহান অলীকুল শিরোমণি ২৭ জন খলিফা এবং অগণিত মুরিদান রেখে ১৯৫৪ সালের ৬ই রবিউল আউয়াল দিবাগত রাত ১টার দিকে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। সেদিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশে দু’এক ফোটা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হয়েছিল; সারাদিন সূর্য্যরে মুখ দেখেনি কেউ। আজমগড়ী হজরত
তাঁর ইন্তোকালের খবর শুনে ভারত হতে হালিশহর দরবারে ছুটে এসে বলেছিলেন, “আমার মুনীরের ইন্তেকালের সময় মহান আল্লাহর রহমতের ফিরিস্তাগণ খোশ আমদেদ জানাতে সাত আসমানে রহমতের ফুল বর্ষণ করেছিল। আমার মুনীরের বেলায়তের স্তর খুবই সুউচ্চ। আমার মুনীরের মাজার খুবই নান্দনিক ও মজবুতভাবে ক্সতয়ার করো।” বর্তমান সময়ে এমন সাধক পুরুষের সন্ধান পাওয়া খুবই দুস্কর। আল্লাহ
তা’লা আমাদেরকে এ মহান অলীর জীবন-দর্শন গ্রহণ করার তে․ফিক দান করুক।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla