1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করেছে ২১নং জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের আলম আশিক দেশে ২০ হাজার শিশু ডায়াবেটিসে ভুগছে মনজুর আলম প্রতিষ্ঠিত নতুন ৩ টি জামে মসজিদ জুম্মার নামাজ আদায় এর মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে –  সিমিন হোসেন পতেঙ্গা চরপাড়ায় অবৈধ অনুমোদহীন আইসক্রীম ফ্যাক্টরীঃ প্লাস্টিক ফ্যাক্টরী লোকেরাই আইসক্রীম ফ্যাক্টরীরও কর্মী গনচিনি, চ্যাকারাইন, লোংরা পানি ও বিষক্ত ক্যামিক্যাল ব্যবহার সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখীতে ‘সবুজ চুড়ি আন্দোলনে ২৫শ তালগাছ রোপন সাংবাদিক ওমর ফারুকের ইন্তেকাল ২৯ শে এপ্রিল নিহতদের স্মরণে সাহিত্য পাঠচক্রের স্মরণ সভা পথচারীদের মাঝে শরবত, পানি ও গামছা বিতরণ করলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর  হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর পথচারীদের মধ্যে শান্তির শরবত বিতরণ করলেন

পীরে কামেল ছৈয়দ হাফিজ মুনিরুদ্দীন নুরুল্লাহ রহ.’র জীবন ও কর্ম

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শনিবার, ২৪ জুন, ২০২৩
  • ২২৭ বার পড়া হয়েছে

কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী
ছৈয়দ হাফিজ মুনিরুদ্দীন নুরুল্লাহ (রহ.) চট্টগ্রাম শহরের সুপ্রসিদ্ধ আধ্যাত্মিক রাহবার হিসেবে সমধিক পরিচিত ও সমাদৃত। আত্মিক শুদ্ধ পুরুষ হিসেবে তাঁর যশখ্যাতি বিশ্বময়। আনুমানিক ১৮৮১ সালের দিকে চট্টগ্রাম পর্যটর নগরীর বন্দর থানাধীন ৩৭ নং হালিশহর মুনির নগর ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মহীয়সী মায়ের নাম গোলজার খাতুন এবং পিতার নাম ছৈয়দ অছিউদ্দীন।
ধমীয় শিক্ষক কে?
তিনি পিতার কাছ থেকে আরবী কায়দা ও আমপারার জ্ঞান অর্জন করেন । কুরআনুল করিমের প্রথম ছবক নেন মাইজভান্ডারী তরীক্বার প্রবর্তক, মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী থেকে। কুরআনুল করিমের হিফজ শেষ করেন চট্টগ্রাম নগরীর কদম মোবারক হেফজ খানার হাফেজ জান আলী থেকে।
আধ্যাত্মিক শিক্ষক কে?
হাফেজ হামেদ হাছান আজমগড়ী’র কাছ থেকে তিনি তরীক্বতের ছবক ও বাইয়াত গ্রহণ করেন। তাঁর পীর ছিলেন, সাইয়্যিদ আবদুল বারী শাহ্ (রহ.) তাঁর পীর সূফি মাওলানা গোলাম সালমানী আব্বাসী, তাঁর পীর সূফি ফতেহ আলী ওয়াইসি, তাঁর পীর সূফি নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী, তার পীর শহীদ সৈয়দ আহমদ বেরলভী, তাঁর পীর শাহ্ আবদুল আজীজ দেহলভী, তাঁর পীর শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী, তার পীর শাহ্ আবদুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী এভাবে এ ক্রমধারাটি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে। পীর আজমগড়ী (রহ.) থেকে ১৯১৪ কিংবা ১৯১৫ সালে সাত তরীক্বার খেলাফত প্রাপ্ত হন। এ তরীক্বা সম্পূর্ণ শরীয়তে মুহাম্মাদির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তুষ্ট অর্জন করার বিশেষ একটি কর্মপদ্ধতির নামই হচ্ছে তরিক্বত যা বিভিন্ন দোয়া, দরুদ, অজিফা ও আমলের সমন্বয়ে গঠিত।
তিনি কী সুন্নাতের তাবেদার নন?
হাফিজ মুনিরুদ্দীন (রহ.) সবসময় শরীয়তের উপর অটল ও অবিচল ছিলেন। বাল্যকাল থেকেই খুবই গাম্ভীর্য ও পরহেজগার প্রকৃতির ছিলেন। বাড়াবাড়ী মোটেও পছন্দ করতেন না; সবসময় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন। তাঁর চালচলন ও আচার-ব্যবহার ছিলো মনোমুগ্ধকর ও প্রশংসনীয়। আমোদ-প্রমোদ, ভোগ-বিলাসী জীবন যাপনে অনভ্যস্ত ছিলেন। খুবই সাধারণ জীপনযাপন করতেন। শত বিপদ-আপদ, অভাব-অনটন ও সংকটে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতেন। এজন্য আল্লাহ তা’লা সূরা ফুরকানের ৫৮ নং আয়াতে ঘোষণা করেছেন, “তুমি নির্ভর কর তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই এবং তাঁর সপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর”। বহুমাত্রিক প্রতিভা গুণে গুণান্বিত হওয়া সত্ত্বেও ছোট বড় সবাইকে প্রথমে সালাম জানাতেন।
সখিনতা কেন আখরাতের অন্তরায়?
তাঁর ঘর ছিলো বাঁশের বেড়া দিয়ে নির্মিত। আবূ দাঊদ শরীফে ৪১৬১ নং হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল বাযাযাতু মিনাল ঈমান” অর্থাৎ “শৌখিনতা ও বিলাসিতা বর্জন করে সাধাসিধা জীবনযাপন করা ঈমানের অঙ্গ”। তাঁর চলাফেরা ছিলো খুবই সাধারণ। অপরিচিত লোকজন তাঁর স্বাক্ষাতে আসলে তাঁকে চিনতে পারত না। কারণ তাঁর পোশাক আশাক ছিলো খুবই সাধারণ।
হাদিয়া নেননি কেন?
পবিত্র রমজান মাসে; প্রতি বছরে একবার মিয়ারমারের রেঙ্গুনে খতমে তারাবিহ পড়ানোর জন্য যেতেন। সেখান থেকে কিছু হাদিয়া পেতেন। এ অর্থ দিয়ে মোটামুটি সংসার চালাতেন; পাশাপাশি কৃষিকাজও করতেন। আগত ভক্ত মুরিদের খুবই যত্ন সহকারে মেহমানদারী করতেন। কারণ তিনি খুবই অতিথিপরায়ন ছিলেন। তিনি কারো কাছ থেকে উপঢৌকন নিতে অপছন্দ করতেন। আদাবুল মুফরাদের ৯৯০নং হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা দয়াময় রহমানের ইবাতদ করো, মানুষকে আহার করাও এবং সালামের প্রচলন বহুল করো, তাহলে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করতে পারবে।” ভক্তদের টাকা দিয়ে মাদ্রাসা, মসজিদ ও তাবলীগ ঘর নিমার্ণ করেন।

কি জন্য এত ত্যাগ-তিতীক্ষা?
মানুষকে নৈতিক পদস্খলন ও চারিত্রিক অবক্ষয় থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। চেষ্টা করতেন মানুষকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ.) পর্যন্ত পৌঁছাতে। মানুষের ইহজগৎ ও পরজগৎ এর মুক্তির জন্য সবসময় আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাতেন। কারণ মুমিনরা উভয় জগতে সম্মানিত ও পুরষ্কৃত।

কিভাবে সাধনা করতেন?
দিনে-রাতে,শয়নে-স্বপনে ও জাগরণে তাঁর ক্বলব ও জবান ছিলো আল্লাহর জিকিরে অবিশ্রান্ত। আল্লাহ তা’লা বলেন,‘আর আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ ’(সুরা আনকাবুত- আয়াত ৪৫)। তিনি নিয়নতান্ত্রিক ও রুটিন মাফিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদাত করতেন অত্যধিক। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বুখারী শরীফের ৬৫০২ নং হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম জিনিস হল তা- যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরয ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়)। আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে লাগি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে! আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে দিই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দিই।” ১৫ পারা কুরআন তেলাওয়াতে তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করতেন এবং পাঁচ হাজার বার আল্লাহর জিকির (জিকিরে জলী) করতেন। ফজরের নামাজ শেষ করে তরীক্বতের অজীফা (দোয়া, দরুদ ও কুরআন তেলাওয়াত) ও সালাতুল ইশরাক নামাজ আদায় করে সকাল আট ঘটিকা বা নয় ঘটিকা পর্যন্ত ধ্যানে (মোরাক্বাবা) নিমগ্ন থাকতেন এবং বাকী ওয়াক্তিয়া নামাজান্তে দেড়-দুই ঘন্টা মুরাক্বাবা-মোশাহাদা করতেন। অনেক সময় এশারের নামাজের পর মুরাক্বাবায় ও তাহাজ্জুদ নামাজে পুরা রাত কেটে যেত! দীর্ঘসময় মুরাক্বাবা করার কারণে মাঝেমাঝে পা ফুলে যেত! মুরাক্বাবা করার সময় নিম্মস্বরে কান্নার আওয়াজও শুনা যেত; যার ফলে চোখ ফুলে যেত! তাঁর এ কঠোর সাধনা অবস্থায় আল্লাহ তা’লা তাঁকে ইলহাম করে জানাতেন, “আমি যে গফুরুর রাহীম তা কারো কাছে শুন নাই?” তারপরও মঞ্জিলে মকছুদে পৌঁছার জন্য বিরামহীন ভাবে রেয়াজতে মশগুল থাকতেন। মোরাক্বাবা আরবী শব্দ; বাংলায় ধ্যান এবং ইংরেজিতে মেডিটেশন।
মোরাক্বাবা প্র্যাকটিস করা কী ইবাদত?
মোরাক্বাবা যদিও নফল ইবাদাত কিš‘ তাঁর তাৎপর্য হাদিসের আলোকে সুমহান। তাফসীরে দুররে মানছুরের ৪র্থ খন্ডের ৪১০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “এক ঘন্টা মোরাক্বাবা ষাট বছরের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।” সিররুল আসরারের ২৪ পৃষ্ঠায় বর্ণনায় এসেছে, “এক ঘণ্টা মোরাক্বাবা সত্তর বছরের ইবাদত বান্দেগীর চেয়েও উত্তম।” তিনি মাহে রমজানুল মুবারকে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করে সেহরীর আগ পর্যন্ত “লা ইলাহা ইল্লাহু” শব্দ দিয়ে যিকির (জিকিরে খফী) করতেন। রমজানের শেষ দশদিন মসজিদে ইতিকাফ থাকতেন; মাঝেমাঝে পুরা রমজানও। এমনকি মাঝেমাঝে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ে আরোও দশদিন ইতিফাক থাকতেন। বছরের প্রায় সময় রোজা রাখতেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য যারা দুনিয়ার সুখ-শান্তিকে বিসর্জন দিয়েছেন; আল্লাহ তা’লা তাঁদের কে অজ¯্র নেয়ামত দানে ধন্য করেছেন । আল্লাহ তা’লা, হাফিজ মুনিরুদ্দীন (রহ.) কেও ইলমে বেলায়াতের অভাবনীয় ধন-ভান্ডার দান করেছিলেন। তাঁর স্বাক্ষাতে, মানুষের মাঝে আত্মিক চেতনা ও জাগরণ সৃষ্টি হতো! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মরণ চলে আসত! হাদীস শরীফে এসেছে, ‘ তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ তারা, যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয় (ইবনে মাজাহ)।
মানুষ তাঁর কাছে কী জন্য আসতেন?
অসংখ্য ও অগণিত মানুষ তাঁর কাছে আসা-যাওয়া করত। কেউ ধন-দৌলতের, কেউ রোগ মুক্তির, কেউ মামলা মোকাদ্দামার, কেউ দুনিয়ার বাদশাহীর, কেউ সন্তানসন্ততির; আবার কেউ “সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর ইস্তেকামাত থেকে কালিমা নিয়ে দুনিয়া ত্যাগ করার জন্য। তিনি সকলের আরজি মনভরে শুনতেন, তারপর আল্লাহর দরবারে তাঁদের জন্য দোয়া করতেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়া-ই ইবাদত (জামে আত তিরমিজি)।’ মূলত- দোয়া হচ্ছে মুমিনের জন্য অস্ত্র স্বরূপ।
ভক্তদের ভালবাসতেন না তিনি?
তাঁর কাছে ধনী-গরীব, ফকির-মিসকিন সকলেই সমান ছিলো। এজন্য কুরআনে আল্লাহ তা’লা বলেছেন, “আমি আমার বান্দার অন্তর দেখি শুধু।” আল্লাহর কাছে মানুষের ধনদৌলত, যশখ্যাতি, শারীরিক গঠন ও সৌন্দর্যতা মূল্যহীন; শুধুমাত্র ঈমান ও আমল ছাড়া। মুরিদের অন্তরে ঈমানের নূর বা হেদায়াতের আলো প্রজ্জলিত হলে তিনি অত্যধিক খুশি হতেন। সুখে-দুঃখে রূহানী সন্তানদের পাশে থেকে সহযোগিতা করতেন। তাঁর রূহানী সন্তানদের উপর কেউ অন্যায়ভাবে জুলুম করলে প্রতিকারের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানতেন। মেহমান ও মুরিদানদের তালিম (শিক্ষা) দেওয়ার জন্য একটি তাবলীগ ঘর নির্মাণ করেছিলেন। বস্তুতঃ নিজের বাড়ী, স্থানীয় মসজিদ ও তাবলীগ ঘর কে একটি তাসাউফ চর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এমন প্রতিষ্ঠান গুলোও দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে।
ভক্তদের তিনি কি শিক্ষা দিতেন?
মুরিদের ক্বলব জারীর জন্য প্রথমে অজিফা (দোয়া,দরুদ,তাওবা) পাঠ করতে নির্দেশ দিতেন। সহিহ হাদিসে এসেছে, “যখন কোন বান্দা কোন গুনাহ করে তখন ক্বলবের মধ্যে একটা কালো দাগ পড়ে যায় (আহমদ, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)”। হাদিসে আরোও উল্লেখ আছে যে, “সাবধান! নিশ্চয়ই শরীরের মধ্যে এমন একটি মাংসপিন্ড আছে; যখন তা ঠিক থাকে তখন সমস্ত শরীর ঠিক থাকে, আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন গোটা দেহ নষ্ট হয়ে যায়- এটা হচ্ছে কলব বা হৃদপিন্ড (বুখারী-৫২,মুসলিম-১৫৯৯)।” মৃত ক্বলব কে জাগিয়ে তুলতে পারে একমাত্র আল্লাহর জিকির, দরুদ শরীফ ও তওবা। মুরিদের আত্মিক উন্নতি ও অবনতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন।
তিনি কিভাবে অন্যজনের আত্মিক উন্নতি বা অবনতি সর্ম্পকে জানবেন?
এজন্য রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মুমিনের দূরদৃর্ষ্টি সম্পর্কে সজাগ থাক। কারণ সে আল্লাহর নূরের সাহায্যে দেখেন (জামে’আত তিনমিজি ৩১২৭,দূর্বল হাদিস)। হাদিসে শরীফে আরো বলা হয়েছে, “ওয়া বসরাহুল লাযি ইবসিরু বিহি” অর্থাৎ আমি তাঁর চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে (বুখারী- ৬৫০২)। অনেকের ক্বলব দ্রুত সজাগ হয়। শত চেষ্টার পরও অনেকের ক্বলবে কালো দাগ পড়ে থাকে! এ দাগ দূর করতে গেলে অনেক সময় পীরের কলবেও কালো দাগ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য ধীরগতিতে দোয়া, দরুদ ও তওবার মাধ্যমে মুরিদের ক্বলব জাগ্রত করার চেষ্টা করতেন। মুরিদানরা ক্বলব জারি করতে ব্যর্থ হলে! তিনি মুরিদের ক্বলব জারির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন এবং মুরিদের ক্বলবের দিকে তাওয়াজ্জু দিতেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে মুরিদের ক্বলব জারি হয়ে যেত! মেডিকেল সাইন্স মতে, একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ যথাসময়ে রোগীর রোগ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হলে রোগটি নানাভাবে রোগীকে প্রভাবিত করে কষ্ট দেয়। যদি একজন সার্জন, রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে রেখে সামান্য গাফেলাতি করে তাহলে হয়ত সে রোগীর অঙ্গহানি হবে নয়ত মারা যাবে; যার সম্ভাবনা ৯৯%! রোগী মারা গেলে সার্জন শত চেষ্টা করলেও সে সময়ে ফিরে যেতে পারবে না অর্থাৎ রোগীকে আর সেবা দিতে পারবে না। অনুরূপে আল্লাহর প্রকৃত ওলিরা হ”েছ, মানুষের রূহানী ডাক্তার। তাঁরা মানুষের দিকে দৃষ্টি দিলে বুঝতে পারে তাঁর কী সমস্যা! যেমনি একজন ডাক্তার মেডিকেল যন্ত্রাংশের সাহায্যে কিংবা শারীরিক অবস্থা দেখে রোগ নির্ণয় করতে পারে। তেমনি, আল্লাহর অলিগণ মানুষের অন্তর ও মন থেকে সমস্ত নোংরামী (লোভ, হিংসা, অহংকার, লোক দেখানো ইবাদাত,পরশ্রীকাতর, রাগ, মিথ্যা বলা, গীবত, কৃপণতা, কীনা, বেশি খাবার খাওয়া, অধিক কথা বলা, পরনিন্দা, অতিরিক্ত হাসাহাসি, অন্যের অযাচিত প্রশংসা করা, খ্যাতি ও পদের মোহ, দুনিয়াপ্রীতি) দূর করার জন্য নানান কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে রুহানী চিকিৎসা চালাতে থাকে। যাতে মানুষের অন্তরে আল্লাহর নূরের প্রদীপ জালিয়ে দেওয়া যায়। একটি ইলেকট্রনিক বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যাটারী বা বিদ্যুতের সাহায্যে যেমন আলো দিতে সক্ষম অনুরূপে মরা ক্বলব সজাগ হলে ঐ ক্বলবে আল্লাহর নূর প্রজ্জলিত হয়।

তাসাউফ কেন কঠিন বিষয়?
তিনি মুরিদানদের প্রথমে ওয়াজিফা পাঠ করতে তালিম দিতেন। আত্মিক উন্নতি হলে যাচাই বাচাই করে মুরিদ করতেন। তাসাউফপন্থীদের সামনে তরীক্বতের বিষয়কে জটিলভাবে উপস্থাপন করতেন, যাতে আবেগী ও অলসরা এ পথে না আসে। কারণ তরীক্বত এমন একটি কঠিন কাজ। যা ঠিকমত পালন করলে ঈমানদার; গাফেলাতি করলে বেঈমান! তিনি সব সময় বলতেন, যারা তরীক্বতের কাজ করে না তারাও জান্নাতে যাবে; তবে কেউ যদি তরীক্বতের ছবক নিয়ে আদায় না করে তাহলে সে জাহান্নামে যাবে! কারণ সে সিলসিলার উর্ধ্বতন পীর-মাশায়েখদের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করেছে।
তাওয়াজ্জুহ কী?
তিনি সবসময় শিক্ষার্থীদের তাওয়াজ্জুহ ও কুরআনুল করিমের ফয়েজ দিয়ে রূহানি সম্পদে ভরপুর করে দিতেন। আছরের নামাজের পর মুরিদানদের সাথে নিয়ে মুরাক্বাবায় বসতেন। মুরাক্বাবার হালত কেমন হতে পারে তা স্বচক্ষে এবং অন্তর চক্ষু দিয়ে না দেখলে কেউ অনুভব করতে পারবেনা। তাওয়াজ্জুহ বলতে বুঝায় আত্মিক শক্তি বা প্রভাব। পীর আউলিয়াগণ তাঁদের অন্তরস্থিত আত্মিক শক্তি বা প্রভাবের সাহায্যে মুরিদদের গুনাহের পাহাড় ধ্বংস করে; অন্তরে আল্লাহর যিকির জারি বা চালু করে দেওয়ার পদ্ধতিকে তাওয়াজ্জুহ বলে। মুরিদানরা ছবক ঠিকমতো আদায় করছে কিনা? তিনি তা সূক্ষ্মভাবে তদারকি করতেন। কোনো ক্ষেত্রে ভুল হলে শোধরিয়ে দিতেন।
প্রোগ্রাম কেন করতেন?
মানুষের মাঝে আত্মচেতনা জাগিয়ে তোলার জন্য এবং সত্য কে জানার জন্য এ খ্যাতিমান মহাপুরুষ, সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবারে একটি মাহফিলের আয়োজন করতেন। যেখানে সাধারণ মুসলমান ছাড়াও উচ্চ শ্রেণীর আলিম, মুফাচ্ছির, মুফতী-মুহাদ্দিস, ফকীহ, পীর-মাশায়েখ, কাজী, আধ্যাত্বিক তত্ত্ববিদ, ধর্ম তত্ত্ববিদ ও সুফী-দরবেশগণ উপস্থিত থাকতেন। তিনি খুবই অল্প কথা বলতেন। অহেতুক কোন কথা বলতেন না। কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাত্ত্বিক আলোচনা করতেন সবসময়। মারেফাতি জ্ঞানেই তাঁর সিনা ছিলো পরিপূর্ণ যাকে তাসাউফের ভাষায় ইলমে লাদুন্নী এবং কাশফ্ বলা হয়। এ জ্ঞান অত্যন্ত দুর্লভ ও অদৃষ্টপূর্ব।

মিশন কী?
এ মহান আত্মিক শুদ্ধপুরুষ, ইসলামের সুমহান দাওয়াত প্রচারে বাংলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চষে বেড়িয়েছেন। এ মহান অলিয়ে কামেলের বড় কারামত হচ্ছে, গোমরাহী জাতিকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তুষ্ট অর্জনের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। অন্যায় ও অসত্য পথ থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রেখেছেন।
তিনি কেন সংস্কারক নন?
মাজার কেন্দ্রীক কুসংস্কার গুলোকে তিনি ঘৃণা করতেন। যেমন, মাজার/কবরে সিজদা দেওয়া, অপ্রয়োজনে মোমবাতি বা আগরবাতি জ্বালানো, মাজারে বা কবরে চুমু দেওয়া, বেপর্দায় নারী পুরুষের অবাধ চলাফেরা, পীরালীর নামে ব্যবসা, অপ্রয়োজনে ছবি তুলা, কবর বা মাজার কে কেন্দ্র করে শরীয়ত বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করা, মাজারের নাম দিয়ে দান বক্স বা হাদিয়া বক্স বসানো। শরীয়তের বহির্ভূত কাজকে তরীক্বতের নামে চালিয়ে দেওয়াকে ভন্ডামীর নামান্তর মনে করতেন।

বাগান কী জনশূণ্য ছিলো? তিনি কী মরে ও অমর?
এ আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ ২৭ জন খলিফা এবং পঁয়তাল্লিশ হাজার মুরিদান রেখে ১৯৫৪ সালের ৬ ই রবিউল আউয়াল দিবাগত রাত ১ টার দিকে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। সেদিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশে দু’এক ফোটা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছিল; সারাদিন সূর্য্যরে মুখ দেখেনি কেউ। পীর আজমগড়ী (রহ.) তাঁর ইন্তোকালের খবর শুনে কিছু দিন পর হালিশহর দরবারে এসেছিলেন। এবং বলেছিলেন, “আমার মুনীরের ইন্তেকালের সময় মহান আল্লাহর রহমতের ফিরিস্তাগণ খোশ আমদেদ বা অভ্যর্থনা জানাতে সাত আসমানে রহমতের ফুল বর্ষণ করেছিল।” তাঁর বেলায়াতের স্তর সম্পর্কে পীর হজরত আজমগড়ী (রহ.) বলেছিলেন, “আমার মুনীরের বেলায়াতের স্তর খুবই সুউচ্চ। আমার মুনীরের মাজার খুবই সুন্দর ও নান্দনিক ভাবে তৈয়ার কর।” কত হাজার হাজার মানুষ পেয়েছে এ অমূল্যধন! কত মানুষ পেয়েছে আল্লাহর রেজামিন্দ! বর্তমান সময়ে এমন সাধক পুরুষ পাওয়া দুষ্কর। আল্লাহ তা’লা আমাদের কে এ মহান ব্যক্তির আধ্যাত্মিক জীবন-দর্শন অনুস্মরণ ও অনুকরণ করার তৌফিকে ধন্য করুক এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করার সক্ষমতা দান করুক এটাই হোক সকলের প্রার্থনা।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla