1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হলেন শিল্পপতি খলিলুর রহমান বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করেছে ২১নং জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের আলম আশিক দেশে ২০ হাজার শিশু ডায়াবেটিসে ভুগছে মনজুর আলম প্রতিষ্ঠিত নতুন ৩ টি জামে মসজিদ জুম্মার নামাজ আদায় এর মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে –  সিমিন হোসেন পতেঙ্গা চরপাড়ায় অবৈধ অনুমোদহীন আইসক্রীম ফ্যাক্টরীঃ প্লাস্টিক ফ্যাক্টরী লোকেরাই আইসক্রীম ফ্যাক্টরীরও কর্মী গনচিনি, চ্যাকারাইন, লোংরা পানি ও বিষক্ত ক্যামিক্যাল ব্যবহার সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখীতে ‘সবুজ চুড়ি আন্দোলনে ২৫শ তালগাছ রোপন সাংবাদিক ওমর ফারুকের ইন্তেকাল ২৯ শে এপ্রিল নিহতদের স্মরণে সাহিত্য পাঠচক্রের স্মরণ সভা পথচারীদের মাঝে শরবত, পানি ও গামছা বিতরণ করলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর 

ইতিকাফ : মাহে রমজানের শেষ দশকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

ইতিকাফ মাহে রমজানের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণইবাদত। মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই ইতিকাফ করতেন। সাহাবায়ে কেরামও ইতিকাফ করতেন। ইতিকাফের মাধ্যমে মুসলমানগণ আল্লাহর জিকির ও ইবাদতের মাধ্যমে শবেকদর তালাশ করেন। সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত মাগফিরাত ও নাজাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করে থাকেন।
রমজানের শেষ দশকের একটি আমল হলো ইতিকাফ করা। ইতিকাফ হলো এই মুবারক দিনগুলোয় ইবাদত-বন্দেগীর উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান ও রাতযাপন করা। ইতিকাফ শরীয়তসম্মত একটি আমল হওয়ার ব্যাপারে আল কুরআনে ইঙ্গিত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে এ অবস্থায় যে তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত [সুরা আল-বাকারা : ১৮৭] ইতিকাফ বিষয়ে সহিহ বুখারিতে বর্ণিত এক হাদিসের শেষাংশে রয়েছে : যে আমার সাথে ইতিকাফ করতে চায় সে যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে কেননা এই রাত আমাকে দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে [বুখারি] তাই যার শক্তি সামর্থ্য আছে তার উচিত হবে ইতিকাফে বসে শেষ দশকের রাতগুলো যাপন করা। ইতিকাফকারী নিজকে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর আনুগত্য দুআ-মুনাজাত যিকির ইত্যাদির জন্য সে নিজকে মসজিদে আঁটকে ফেলে। দুনিয়াবী সকল দৌড়ঝাঁপ থেকে মুক্ত হয়ে সে মসজিদের পবিত্র আবহে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলে। মন ও শরীর উভয়টাকেই সে নিরঙ্কুশভাবে রাব্বুল আলামীনের দরবারে সঁপে দেয়। যা কিছু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে শুধু তাতেই নিজকে সংশ্লিষ্ট করে নেয়। আর এভাবে সে শুধুই আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। যা করলে আল্লাহ রাজি হন শুধু তাতেই নিজকে নিয়োজিত করে। ইতিকাফের মাধ্যমে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পেয়ে থাকেন। আর মাহে রমজানে ইতিকাফের গুরুত্বও ফজিলত অনেক বেশি। ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য হলো দুনিয়ার সব সম্পর্ক ছিন্ন করে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে আল্লাহতাআলার নৈকট্য লাভ করার জন্য সুসম্পর্ক স্থাপন করা।
ইতিকাফ ৩ প্রকার। যথা–১. ওয়াজিব ২. সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ৩. নফল ইতিকাফ।
১. ওয়াজিব ইতিকাফ : কোনো কারণবশত যদি কেউ ইতিকাফের নিয়ত বা মান্নত করে তা আদায় করা ওয়াজিব।
রোজাসহ এইরূপ ইতিকাফ আদায় বা পালন করা আবশ্যক।
২. সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ : যা মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন করা হয়। মসজিদ এলাকার কিছুসংখ্যক লোক ইতিকাফ
করলে সবার পক্ষ থেকেই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু কেউই যদি আদায় না করে তবে সবাই গুনাহগার হবে। হজরত
আয়েশা রা. বলেন রাসুল সা. সবসময় রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন।
৩. নফল ইতিকাফ : নফল ইতিকাফের জন্য কোনো মাস বা নির্ধারিত সময়ের প্রয়োজন হয় না। যে কোনো মাসে যে
কোনো সময়ে এই নফল ইতিকাফ করা যায়।
মাহে রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ আত্মিক উৎকর্ষ সাধন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুবর্ণ সুযোগ। লাইলাতুল কদরের পূর্ণ ফজিলত পাওয়ার উদ্দেশ্যে মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা হয়। এ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে রাসুল সা. মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন। যে ব্যক্তি যত বেশি গভীরভাবে আল্লাহকে ভালোবাসার জন্য আত্মনিয়োগ করবে সে তত বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম হবে। মানুষ একান্তভাবে আল্লাহর ধ্যানে নিয়োজিত থাকার প্রধান মাধ্যম হলো ইতিকাফ। ইতিকাফ মানুষের ওপর এমন আধ্যাত্মিক প্রভাব সৃষ্টি করে যার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন হয়। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ অধিক নেকি অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়ক হয়। আর এই ইতিকাফ মুমিন মুত্তাকিনদের জীবনের মুক্তির বিশেষ পাথেয়।
ইতিকাফের তাৎপর্য হলো সৃষ্টজীব থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সুনির্দিষ্ট বলয়ের মধ্যে নিজকে আবদ্ধ করে নেয়া। আর আল্লাহ সম্পর্কে বান্দার জ্ঞান যত বাড়বে আল্লাহর মহব্বত হৃদয়ে যত পোক্ত হবে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে যতটুকু অগ্রসর হবে দুনিয়ার প্রতি প্রেম ভালোবাসা ততই অর্ন্তনিহিত হবে। ইতিকাফ হলো
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে পালিত জিবরঈল আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। জিবরাঈল আ. প্রতি রমজানেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন শুনাতেন এবং নিজেও তাঁর থেকে শুনতেন। আর যে বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াফাত হয় সে বছর তিনি দুবার কুরআন শুনান এবং শোনেন।
ইবনে আব্বাস রা.-এর বর্ণনায় বুখারিতে আরো এসেছে : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক দানকারী ছিলেন তবে তিনি সবচে বেশি দান করতেন যখন জিবরাঈল আ.-তাঁকে কুরআন শুনাতেন। আর জিবরাঈল আ. রমজানের প্রতি রাতেই তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন শেখাতেন। যখন জিবরাঈল আ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি বেগবান বাতাস থেকেও অর্থকড়ি ব্যয়ের ক্ষেত্রে অধিক দানশীল হতেন।
ইতিকাফের ফজিলত রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোর যেকোনো একটিতে শবে কদর রয়েছে। আর শবে কদরের ইবাদত তিরাশি বছর চার মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম শবে কদর প্রাপ্তির আশা নিয়েই ইতিকাফ করতেন। তিনি প্রথম দশকেও ইতিকাফ করেছেন মধ্য দশকেও করেছেন এরপর শেষ দশকে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন : আমি প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছি এরপর মধ্য দশকে এরপর আমাকে দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে তা শেষ দশকে। অতএব তোমাদের মধ্যে যার ইতিকাফ করা পছন্দ হয় সে যেন ইতিকাফ করে [মুসলিম] রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করা কখনো বাদ দেননি। তিনি প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করতেন। আর যে বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াফাত ফরমান সে বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। উপরন্তু যখন তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতে প্রতিযোগিতা শুরু করলেন তিনি ইতিকাফ করা ছেড়ে দিলেন এবং তা শাওয়ালের প্রথম দশকে কাজা করে নিলেন। ইতিকাফ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন বিষয় থেকে নিজকে দূরে রেখেছেন যা তার জন্য বৈধ ছিল। যেমন স্ত্রীসঙ্গ ও নিদ্রাগমন। রমজানের শেষ দশকে কঠোর মেহনতি হওয়া এবং লুঙ্গি বেঁধে নেয়ার ব্যাপারে আয়েশা রা.-থেকে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তার অর্থ এটাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন। এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াফাতের পরও তাঁরা ইতিকাফ করেছেন।
আসুন এবার আমরা ইতিকাফের কিছু আহকাম ও মাসাইল নিয়ে আলোচনা করি।
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের অনুসরণ করে ইতিকাফের উদ্দেশ্য বা¯তবায়নের জন্য চেষ্টা
করা।
২. নিয়ত করে ইতিকাফ শুরু করে দেয়ার পর ইতিকাফ পূর্ণ করা জরুরী।
৩. কমপক্ষে কত দিন ইতিকাফ করলে ইতিকাফ হিসেবে ধরা হব বিষয়টি অনির্দিষ্ট। তবে ইতিকাফকারী যেদিন থেকে
ইতিকাফ শুরু করতে ইচ্ছুক সেদিন সূর্যা¯েতর পূর্বেই তাকে নিজ ইতিকাফের জায়গায় পৌঁছে যেতে হবে।
৪. নিজের জন্য একটা জায়গা বেছে নেয়া জরুরী যেখানে নীরবে আল্লাহর জিকির-আজকার করতে পারবে। প্রয়োজনের
সময় আরাম করতে পরবে। কাপড় পরিবর্তন করতে পারবে। পরিবারের কেউ এলে তার সাথে সাক্ষৎ করতে পারবে।
৫. ইতিকাফকারী মসজিদের বিভিন্ন প্রান্তেনফল নামাজ আদায় করতে পারবে। তবে ইতিকাফকারীর জন্য উত্তম হলো
অধিক নড়াচড়া ও নফল নামাজ না পড়া। এর প্রথম কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজকে লুকিয়ে
রাখা যায় মসজিদের অভ্যন্তরে এমন একটি জায়গা তৈরি করে নিতেন। আর দ্বিতীয় কারণ যখন কেউ নামাজ পড়ার
জায়গায় বসে থাকে তখন ফেরেশতারা তার প্রতি রহমত বর্ষণের দুআ করতে থাকে।
৬. ইতিকাফ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী মিলিত হওয়া চুম্বনস্পর্শ নিষেধ। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : তোমরা
মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে না।
ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে :
এক. মানবীয় প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি আছে। যেমন পায়খানা, প্রস্রাব, পানাহার, যদি তা মসজিদে পৌঁছে
দেওয়ার মত কেউ না থাকে। অনুরূপভাবে যে মসজিদে ইতিকাফ করা হচ্ছে তাতে যদি জুমার নামাজ না হয়, তাহলে
জুমা আদায়ের জন্য অন্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি আছে।
দুই. এমন সব নেক-আমল বা ইবাদত-বন্দেগির জন্য বের হওয়া যাবে না যা ইতিকাফকারীর জন্য অপরিহার্য নয়।
যেমন রোগীর সেবা করা, জানাজায় অংশ নেয়া ইত্যাদি। তবে যদি ইতিকাফের শুরুতে এ জাতীয় কোনো শর্ত করে
নেয়া হয়, তবে তার কথা ভিন্ন।
তিন. এমন সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না যা ইতিকাফ বিরোধী। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, চাষাবাদ
ইত্যাদি। ইতিকাফ অবস্থায় এ সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ বাতিল হয়ে যাবে।
পরিশেষে : -আমরা যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চাই লাইলাতুল কদরের সুমহান মর্যাদা লাভ
করতে চাই সর্বোপরি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে চাই তাদের জন্য উচিত হলো রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা।
আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। হে আল্লাহ! তোমার করুণাধারায় আমাদের সিক্ত করো। আমিন।
লেখক : ফখরুল ইসলাম নোমানী, ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla