1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৮ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
উত্তর চট্টগ্রামে এই প্রথম ফ্যাকো অপারেশন শুরু করছে চট্টগ্রাম গ্রামীণ চক্ষু হাসপাতাল সীতাকুণ্ডে বৃষ্টির জন্য ইস্তাহার নামাজ আদায় শনিবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্যে ভোটের যুদ্ধ সন্দ্বীপে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা অভিযুক্ত স্বামী গ্রেফতার  চট্টগ্রামে র‌্যাবের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেফতার ৪ চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহাসড়কে অবৈধ গাড়ির অরাজকতা বন্ধ করতে আবারো বিআরটিএ’র অভিযান আমি আজ কথা দিচ্ছি  আপনাদের একা রেখে পালিয়ে যাব না, সুখে দুঃখে আপনাদের পাশে থাকব, আমি আপনাদের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই- ওয়াসিকা চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিআরটিএ’র সাঁড়াশি অভিযান, জরিমানা অর্ধলাখ মে মাসেও থাকবে তীব্র গরম, তাপমাত্রা ছাড়াতে পারে ৪৪ ডিগ্রি

দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাত প্রদানের গুরুত্ব ও বাস্তবায়ন থাকা চাই

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৫২ বার পড়া হয়েছে

মাহমুদুল হক আনসারী

ইসলাম, মানবতা, শৃংখলা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ধর্ম। ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য চির কল্যাণকর এক পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সুখী, সমৃদ্ধশীল, ভারসাম্যপূর্ণ মানবিক জীবন গঠনই ইসলামের প্রতিশ্রæত বিষয়ের অন্তর্গত। ধনী-দরিদ্রের পর্বতসম পার্থক্য দূরীকরণ ও সমাজের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে অনন্য এক নাম জাকাত। ধনী-দরিদ্রের সেতুবন্ধন তৈরিতে এ বিধান দিয়েছে ইসলাম।ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মাঝে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্তম্ভ হচ্ছে জাকাত। সকল ধর্মেই আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন তথা গরীব, দুর্বল, অক্ষম ও বঞ্চিতদের প্রতি সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণের মাধ্যমে সামাজিক ভারসাম্য স্থিতিশীল রাখার উপদেশ ও নির্দেশ রয়েছে।

ঐশী জীবনবিধান ইসলাম তার সূচনালগ্ন থেকেই এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে আসছে। মাদানি জীবনে এসে সুনির্দিষ্টভাবে জাকাতের বিধান কার্যকর করে দরিদ্র ও নিঃস্ব শ্রেণির লোকদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুণর্বাসিত করার এক ফলপ্রসূ ও বাস্তববধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ধনীদের সম্পদে অসহায় ও বঞ্চিতদের সুনির্দিষ্ট অধিকার নিশ্চিত করে জাকাত ব্যবস্থা আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে অভিনব অবদান রেখেছে।

বর্তমান বিশ্বে একটি বহুল আলোচিত বিষয় হলো আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। উন্নয়নশীল দেশের দারিদ্র বিমোচন এবং সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে নিঃস্ব ও দরিদ্র শ্রেণিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুণর্বাসিত করা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সে কারণেই চিরন্তন ও শাশ্বত ধর্ম ইসলাম জাকাতের ন্যায় একটি ফলপ্রসু ও কার্যকর বিধানের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী রূপরেখা প্রদান করেছে। যা মানব রচিত সব অর্থনৈতিক মতবাদের উপর ইসলামি অর্থব্যবস্থার সার্বজনীনতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে।

জাকাত নির্ধারণ বন্টণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কী ভূমিকা পালন করে তা সকলের জানার প্রয়োজন আছে। সেটা সমাজে বাস্তবায়ন জরুরী।জাকাত সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্যই হলো সমাজের অসহায়, গরিব ইয়াতিম ও নিঃস্ব লোকদের পূনর্বাসিত করা। ইহা এককভাবে এবং সামষ্টিগতভাবে সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধি করে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮২ সালে ইসলামি শরিয়া আইনে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাকাত বোর্ড গঠন করেছে।

এই নিবন্ধে জাকাতের শাব্দিক, পারিভাষিক পরিচয়, বিভিন্ন নবীদের সময়ে জাকাত আদায় জাকাত দেয়া সম্পদের ব্যয়ের খাতসমূহ এবং জাকাত সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করা হয়েছে।সর্বোপরি বিনিয়োগ ও ব্যবসায় গতিসঞ্চার, মজুদদারী হ্রাস, পুঁজিবাদের মূলোৎপাটন, অর্থের ঘূর্ণায়মানতা বৃদ্ধি, বেকারত্ব হ্রাস ও ধনী-দরিদ্রের পর্বতসম বৈষম্যের অবসানের মধ্যদিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাকাত যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তা বিশুদ্ধভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

সমাজের ধনী ও পুঁজিপতিদের সম্পদে দরিদ্রের বৈধ হক জাকাত সংক্রান্ত অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে এবং তা যথাযথভাবে উৎপাদনমূখী কল্যাণকর খাতসমূহ তথা হস্তচালিত ও তাঁতশিল্প, মৎসচাষ, পোলট্রি ফার্ম, গোবাদি পশু-পাখি পালন, মৌমাছি চাষ, বাঁশ ও কাঠের সামগ্রী উৎপাদনের মত ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প বিনিয়োগ করতে পারলে একদিকে যেমন এসব শিল্পে বহুলোকের কর্মসংস্থান হবে অন্যদিকে দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে; যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

জাকাতের পরিচয়

– জাকাত আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো- পবিত্র হওয়া, বৃদ্ধি হওয়া। জাকাত দিলে জাকাতদাতার মাল পবিত্র হয় এবং সাওয়াব বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘(হে নবি!) তাদের মালামাল থেকে জাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দোয়া কর, নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য সান্তনা স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ সবকিছুই শোনেন, জানেন।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ১০৩)

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, জীবন-যাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের পর পূর্ণ এক বছরকাল সুনির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চিত সম্পদের শরিয়ত নির্ধারিত পরিমাণ মোতাবেক শতকরা আড়াই ভাগ (২.৫০%), ইসলামি শরিয়ত নির্ধারিত খাতে কোনো প্রকার বিনিময় ব্যতিত স্বত্ব হস্তান্তর করাকে জাকাত বলে।

অর্থাৎ জাকাত হলো সম্পদের সেই নির্ধারিত অংশ যা আল্লাহ তাআলার নির্দেশে নির্ধারিত খাতে ব্যয় করা নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী সব মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘জাকাত হল কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৬০)স্বচ্ছল মুসলিম নর-নারীর বাধ্যতামূলকভাবে সামাজিক সহায়তা দান, জনকল্যাণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার সঞ্চিত সম্পদের যে সুনির্দিষ্ট অংশ নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে আল্লাহর হুকুম পালনার্থে প্রদান করে তাই জাকাত।ইসলামি শরিয়তে জাকাতের বিধান নাযিল হওয়ার আগেও আরবি ভাষায় এ শব্দটির প্রচলন ছিল। জাহেলি যুগের বিভিন্ন কাব্যমালায় শব্দটির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। ইসলাম ব্যতিত অন্যান্য আসমানি গ্রন্থে এবং পূর্ববর্তী সব নবিগণের উপর যে জাকাতের বিধান কার্যকর ছিল তা পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতগুলো থেকে জানা যায়-

আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুব আলাইহিমুস সালাম সম্পর্কে বলেন-

‘আমি তাঁদেরকে নেতা করলাম। তাঁরা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতেন। আমি তাঁদের প্রতি ভালো কাজ করার, নামাজ প্রতিষ্ঠার এবং জাকাত আদায় করার জন্য ওহি পাঠিয়েছি। মূলত তাঁরা আমার ইবাদতে নিয়োজিত ছিল।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৭৩)

হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে-

‘এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা বর্ণনা করুন, তিনি প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রাসুল, নবি। তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে নামাজ ও জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে পছন্দনীয় ছিলেন।’ (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৫৪-৫৫)

যখন আমি বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম ও নিংস্ব-দরিদ্রদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে এবং জাকাত প্রদান করবে, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে, তোমরাই অগ্রাহ্যকারী।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৩)

উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, সমাজের ধনী- দরিদ্রের মাঝের ভারসাম্য রক্ষা এবং আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে আগের সব উম্মতের উপরই জাকাতের বিধান ছিল। ইসলামের এ মৌলিক স্তম্ভটির গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে পবিত্র কুরআনুল কারিমের ৮২ স্থানে জাকাতের আলোচনা এসেছে। তন্মধ্যে নামাজের সঙ্গে জাকাতের কথা এসেছে ৩৭ বার।

আর্থ-সামাজিক সমস্যার সমাধানকল্পে ইসলাম যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, গরীব ও নিঃস্ব শ্রেণি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেছে , ইসলামের শুভ সূর্যদয়কালীন মক্কার অবস্থাই তার বড় প্রমাণ।

অল্প সংখ্যক নতুন মুসলিমগণ ছিল প্রচন্ড বাধার সম্মুখীন ও বিপদগ্রস্ত। তাদের হাতে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক শক্তি বলে কিছুই ছিল না। তখনও এ মানবিক সামষ্টিক গরিব-মিসকিনদের বিষয়টি মোটেই উপেক্ষিত হয়নি, বরং গুরুত্বের সাথে বিষয়টি বিবেচিত হয়েছে।ইসলাম তার জন্য বিশেষ ও স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আল কুরআন এ পর্যায়ে কখনো মিসকিনদের খাদ্যদান ও সে জন্য অন্যদের উৎসাহিত করণের গুরুত্ব দিয়েছে, কখনো আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে ব্যয় ও বন্টনের কথা বলে উৎসাহিত করেছে। কখনো বলেছে এ হচ্ছে (সাহায্য) প্রার্থী, বঞ্চিত, দরিদ্র, নিঃস পথিকের অধিকার আদায়। কোথাও সুস্পষ্ট ভাষায় জাকাত দেয়ার তাগিদ করেছে। পাশাপাশি এ বিধান লংঘন ও অমান্য করলে কঠোর শাস্তির ভয় দেখিয়েছে।

নগদ টাকা, কৃষি সম্পদ, সোনা-রূপা, ব্যবসায়ী সম্পদ, খনিজ সম্পদের জাকাত এবং পশু সম্পদের জাকাত- এ ছয় প্রকারে জাকাত দেওয়া হয়।

আল্লাহ তাআলা জাকাতের ব্যায়ের খাতগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-

‘জাকাত হল কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৬০)

‘জাকাত দেয়ার বিধান হলো একজন নিঃস্ব বা ফকিরকে এমন পরিমাণ জাকাতের অর্থ প্রদান করতে হবে যাতে সে সাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে এবং পরবর্তীতে তাকে যেন জাকাতের মুখাপেক্ষী হতে না হয়।আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বলতে এমন একটি পক্রিয়া বুঝায় যার দ্বারা সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গের আশা-আকাঙ্খা মেটানোর সুযোগ সৃষ্টি করে ।

অন্য কথায়-সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের জীবন মানের সার্বিক উন্নয়ন, তাদের সাংস্কৃতিক ভাবধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সাধনকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বলে।মানবজীবনে আল্লাহর হুকুম মেনে চলার নামই ইবাদত। ইবাদত প্রধানত- দুইভাগে বিভক্ত। আর তাহলো-

– দৈহিক : দৈহিক ইবাদাতের মধ্যে নামাজ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

– আর্থিক : আর্থিক ইবাদাতের মধ্যে জাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম।ইসলামী জীবন দর্শনের মূল কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা উভয়টি ফরজ হিসেবে সাবস্ত্য এবং অবশ্যক পালনীয় কাজ। এ কারণেই হজরত ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

‘তোমাদের নামাজ ও জাকাতের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে জাকাত আদায় করলো না তার নামাজ গৃহীত হবে না।’ইসলাম একদিকে নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে অক্ষম পিছিয়ে থাকা মানুষকে আশ্রয় প্রদানের মানসিকতা সৃষ্টি করতে চায়। আবার সমাজে এমন একটি শক্তিশালী সংস্থা গড়ে তুলতে চায়- যা নিঃস্ব, দরিদ্র, অক্ষম, অসহায়, নিপীড়িত মানততার সাহায্যের দায়িত্ব পালন করবে। ধনী-দরিদ্রের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।এ মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে চিরন্তন ও শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা ইসলাম আইনগতভাবে গোটা দেশের সঞ্চিত সম্পদ থেকে ২.৫% এবং বাণিজ্যিক মূলধন থেকে বার্ষিক ২.৫% ভাগ জাকাত গ্রহণের নির্দেশ দেয়।

এছাড়াও গৃহপালিত পশু, স্বর্ণালংকার, খনিজ পদার্থ প্রভৃতির উপরও বার্ষিক নির্দিষ্ট হারে জাকাত ধার্য করা হয়েছে। জাকাত হিসেবে সংগৃহীত এ গোটা সম্পদ ইসলাম গরিব-দুঃখী, অক্ষম, অসহায়, বন্যার্ত, বঞ্চিত, সামাজিক কর্মকান্ড, আর্ত-মানবতার সেবা এবং সার্বিকভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার করতে ফরমান জারি করেছে। এটা এমন একটা সামাজিক বীমা যার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক দিক থেকে সামাজিক ভারসাম্য ফিরে আসা অনেকাংশেই সম্ভব।

গোটা দুনিয়ার মুসলিম সমাজে ইসলামের উল্লেখিত নির্দেশ জাকাতের বিধান প্রতিষ্ঠা হলে পৃথিবীর কোন মুসলিম, দুঃস্থ ও দরিদ্র থাকবেনা। ইসলামের জাকাতের বিধান পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশের প্রতিষ্ঠা হওয়া জরুরী। দারিদ্র্য মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য ধনী মুসলিমদের জাকাতের অর্থ সামাজিকভাবে প্রদান করা দরকার। পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত মুসলিম দেশসমূহে জাকাত ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ থাকা উচিত। আজকের পৃথিবীতে অনেক মুসলিম দেশ অর্থবিত্তে ধনী। অপরদিকে অসংখ্য মুসলিম দেশের জনগণ অসহায় অনাথ দারিদ্র্য। তাদের জন্য সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক পরিমÐলে জাকাত ভিত্তিক অর্থনৈতিক সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলা দরকার। এর মাধ্যমে গোটা পৃথিবী হতে মুসলিম সমাজের অর্থনৈতিক সফলতা অর্জন করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক জাকাত বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়ার দারিদ্র্য পীড়িত মুসলিম সমাজেকে স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla