1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :

ঈদের আনন্দ পূর্ণ হোক সম্প্রীতির ছোঁয়ায়

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

এইচ এম আবদুর রহিম অতিথি প্রতিবেদক

কর্মব্যস্ত জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে মাঝে মধ্যে উৎসবের প্রয়োজন হয়। শীতল হয়ে যাওয়া আত্মীয়তার বন্ধন, সামাজিক সম্পর্কগুলো সজীব ও প্রাণবন্ত করতে প্রয়োজন হয় কোনো সম্মিলনের। যেন মানুষ প্রতিদিনের একঘেয়ে জীবনের সঙ্কীর্ণ গণ্ডি থেকে বের হয়ে আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারে। প্রাণে নতুন শক্তি ও কর্মপ্রেরণা জোগাতে পারে।

পৃথিবীজুড়ে সব জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন উৎসব আছে। উৎসব জাতিগত ঐক্যের চেতনা সৃষ্টি করে। উৎসবের দিনগুলোও যেকোনো জাতির স্বাতন্ত্র্য ও পৃথক পরিচয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও প্রতীক। একটি জাতির স্বতন্ত্র পরিচয় সত্তা নির্মাণ করতে, তাদের মধ্যে ঐক্যবোধ, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের চেতনা জাগ্রত করতে সম্মিলিত আনন্দ ও উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সব জাতির মতো মুসলিম উম্মারও রয়েছে দু’টি উৎসব; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। ‘ঈদ’ শব্দটি ‘আওদ’ থেকে উৎকলিত। আওদ অর্থ ঘুরে আসা প্রত্যাবর্তন করা। ঈদ মানে প্রতি বছর ঘুরে ফিরে আসে এমন একটি দিন। আরবিতে বিশেষ দিবস বা উৎসবের দিনকে ঈদ বলে।

ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মার একটি উৎসবের দিন। ঈদের সাথে সংযুক্ত হয়ে হয়েছে ফিতর। ফিতর অর্থ রোজা ভাঙা বা ইফতার করা। ঈদুল ফিতরের দিন মুসলমানরা আনন্দিত হয়। রমজানের রোজা সফলভাবে রাখতে পারা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তির কারণেও। এটা রোজাদার মুসলমানদের জন্য পুরস্কারের দিন। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য আনন্দ উৎসবের দিন রয়েছে। আমাদের আনন্দ উৎসবের দিন হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত আউস আল আনসারি রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ফেরেশতারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান এবং মুসলমানদের উদ্দেশে বলতে থাকেন। হে মুসলমানরা! তোমরা দয়ালু প্রতিপালকের দিকে এগিয়ে এসো। উত্তম প্রতিদান ও বিশাল সওয়াব প্রাপ্তির জন্য। তোমাদের রাত্রিবেলা নামাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তোমরা সে নির্দেশ মোতাবেক নামাজ পড়েছ। তোমাদের দিনে রোজা রাখতে বলা হয়েছিল, তোমরা সে নির্দেশ পালন করেছ। এক মাস রোজা রেখেছ। গরিব-দুঃখীদের আহার করানোর মাধ্যমে নিজের প্রতিপালককে আহার করিয়েছ। এখন নামাজ পড়ে এসব পুণ্য কর্মের প্রতিদান ও পুরস্কার গ্রহণ করো।’ ঈদের নামাজ পড়ার পর একজন ফেরেশতা ঘোষণা দেন, শোনো নামাজ আদায়কারীরা! তোমাদের মহান রাব্বুল আল-আমিন মাফ করে দিয়েছেন, সব গুনাহ থেকে মুক্ত অবস্থায় নিজ নিজ আবাসে ফিরে যাও। আজ পুরস্কার দেয়ার দিন। আকাশে এই দিনের নামকরণ করা হয়েছে ‘পুরস্কারের দিন’। (মুজামুল কাবির লিত তাবারানি-৬১৭,৬১৮)।

হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘ঈদের দিন আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, তারা আমার ফরজ আদায় করে প্রার্থনার জন্য বের হয়েছে। আমার মর্যাদা, বড়ত্বের কসম! আমি অবশ্যই তাদের প্রার্থনা কবুল করব। তারপর আল্লাহ বান্দাদের উদ্দেশে বলেন, ফিরে যাও আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। তোমাদের পাপগুলো নেকি দিয়ে পরিবর্তন করে দিয়েছি। এরপর সবাই ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।’

আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও তাদের খোঁজখবর নেয়ার সুযোগও হয় ঈদের সম্মিলন ও দাওয়াতে। ইসলামে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা ফরজ। সারা বছর কর্মব্যস্ততার কারণে আমরা অনেক আপনজনকেই ভুলে থাকি। সবার খোঁজখবর সঠিকভাবে নেয়া হয়ে ওঠে না। ঈদের উৎসবে সবাই একত্রিত হওয়ার সুযোগ পায় আমাদের দেশে অনেক কর্মজীবী মানুষ বাবা-মায়ের সাথে সাক্ষাৎ ও সময় কাটানোর সুযোগ পায় ঈদের ছুটিতে। ঈদের উৎসবে একটু আনন্দের মধ্যে থাকা, খেলাধুলা করা বা উপভোগ করার শিক্ষা আমরা নবীজীর জীবন থেকে পাই। একটি ঈদের দিনের বর্ণনা পাওয়া যায় এ রকম- ‘আয়েশা রা: বলেন, আমার ঘরে দু’জন মেয়ে বুআস যুদ্ধের গান গাইছিল। তারা গায়িকা ছিল না। হজরত আবুবকর রা: ওই মেয়ে দু’টিকে শক্ত ধমক দিয়ে বললেন বাদ্য! তাও রাসূলের ঘরে। রাসূল সা: বললেন, ওদের ছেড়ে দাও। প্রতিটি জাতির ঈদ ও খুশির দিন থাকে। আজ আমাদের ঈদের দিন।’ (সহিহ বুখারি-৯৫২) আরেকটি রেওয়ায়াতে আয়েশা রা: বলেন, এক ঈদের দিন দু’জন কৃষ্ণাঙ্গ ঢাল ও বর্শা দিয়ে খেলছিল। আমি রাসূলকে বললাম অথবা রাসূল সা: নিজেই আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বর্শার খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম হ্যাঁ। রাসূল সা: আমাকে তার পেছনে দাঁড় করালেন। আমি রাসূল সা:-এর কাঁধে চেহারা রেখে খেলা দেখতে লাগলাম। রাসূল সা: বললেন, হুঁশিয়ার! হে বনি আরফাদা। (কোন পক্ষে উৎসাহ দিলেন বা সাবধান করলেন) (সহিহ বুখারি-৯৫০)

দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর এই অবসর যাপন ও বিনোদন এক অনাবিল প্রশান্তি ও আনন্দ বয়ে আনে আমাদের জীবনে। আত্মীয়তা, ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যরে বিভায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কয়েকটি দিন। আমাদের অবসাদক্লিষ্ট জীবনের মরা গাঙে প্রাণশক্তির জোয়ার আসে। নতুন উদ্যম ও কর্মপ্রেরণা নিয়ে আমরা আবার কাজে ফিরতে পারি। ঈদ হলো পাপ মুক্তির সফলতা ও বিজয়ের আনন্দ! এ বিজয় শয়তানের ওপর ইনসানের। মনের সব কালিমা দূর করে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান অভিমান বির্সজন দিয়ে সবাই হাতে হাতে মেলানো, বুকে বুক মেলানো, গলায় গলা মিলানো, সবার দেহ-মন এক হওয়ার আনন্দ হলো ঈদের আনন্দ। নিজের মনের হিংসা ঘৃণা, লোভ, অহঙ্কার, অহমিকা, আত্মম্ভরী, আত্মশ্লাঘা, রাগ-ক্রোধ, বিদ্বেষ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার আনন্দ। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ঐক্য, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির আনন্দ। ঈদুল ফিতরের জন্য ২৯ রমজান ঈদের চাঁদ দেখা সুন্নত; এদিন চাঁদ উদিত না হলে ৩০ রমজানও চাঁদ উদিত না হলে ৩০ রমজান ও চাঁদ দেখা সুন্নত; যদিও এদিন চাঁদ দেখা না গেলে পরদিন ১ শাওয়াল তথা ঈদুল ফিতর হবে। ঈদের চাঁদ তথা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। ঈদের রাত হলো ইবাদতের বিশেষ রাতগুলোর অন্যতম। ঈদের রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত। সারা বিশ্বের মুসলমানের সার্বজনীন আনন্দ-উৎসব ঈদুল ফিতর। বছরজুড়ে নানা প্রতিকূলতা, দুঃখ-বেদনা সব ভুলে ঈদের দিন মানুষ সবার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হয়। ঈদগাহে কোলাকুলি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করে। ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করে।

মাহে রমজানের এক মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজের অতীত জীবনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার পবিত্র অনুভূতি ধারণ করে পরিপূর্ণতা লাভ করে ঈদের খুশি। আর আনন্দ ও পুণ্যের অনুভূতিই জগতে এমন এক দুর্লভ জিনিস, ভাগাভাগি করলে তা ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। ঈদুল ফিতর বা রোজা ভাঙার আনন্দ-উৎসব এমন এক পরিচ্ছন্ন আনন্দ অনুভূতি জাগ্রত করে, যা মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত করে এবং আল্লøাহর সন্তুষ্টিও নৈকট্য লাভের পথপরিক্রমায় চলতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করে। প্রকৃত পক্ষে ঈদ দরিদ্র, সুখী-অসুখী, আবালবৃদ্ধবনিতা সব মানুষের জন্য কোনো না কোনোভাবে নিয়ে আসে নির্মল আনন্দের আয়োজন। ঈদ ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেয় এবং পরস্পরের জন্য ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়।

মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আমাদের প্রার্থনা হলো- জগতের সব মানুষের সুখ, শান্তি সমৃদ্ধি। পৃথিবী সর্বপ্রকারের হিংসা বিদ্বেষ ও হানাহানি মুক্ত হোক! সন্ত্রাসের বিভীষিকা দূর হোক! আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধন দৃঢ়তর হোক! আগামী দিনগুলো সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হোক হাসিখুশি ও ইদের আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। ব্যক্তি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক। এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। তাই আসুন, ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিই সবার প্রাণে-মনে। বুকে মিলিয়ে আসুন সবাই সবার হয়ে যাই। সবাইকে ঈদুর ফিতরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন- ‘ঈদ মোবারক আসসালাম!

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla