মাহমুদুল হক আনসারী
১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন। এ দিন পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম প্রতিষ্ঠার দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। অফুরন্ত আত্মত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান বিজয়ের ৫১ বছর পূর্ণ হলো।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় এই মহান বিজয়। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারী বেসরকারি সবগুলো প্রতিষ্ঠানই মহান বিজয় দিবসের দিনটিকে অত্যন্ত গাম্ভীর ও তাৎপর্যের সাথে পালিত হবে। সবগুলো সরকারি বেসরকারি স্কুল কলেজ বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হবে। এ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে দৈনিক সাপ্তাহিক পত্রিকা এবং বিভিন্ন চ্যানেলে প্রবন্ধ নিবন্ধ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারী বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল, এতিমখানা এবং জেলখানায় উন্নতমানের খানাপিনার আয়োজন করা হবে। এছাড়াও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভাব গাম্ভীর্যের সহিত মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের আত্মার শান্তিকামনায় বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন ‘ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। পরে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি বীর পুলিশ সদস্যরা ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধের বুলেটটি ছুড়ে। তারপর একে একে অস্ত্র হাতে বাঙালিরা পাক বাহিনীদের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। এই মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে।
বিজয় দিবস যেন তেনো কথা নয়। এর পেছনে অনেক রক্ত , ঘাম , অর্থ , সাধনা খরচ করতে হয়েছে। স্বাধীন দেশের বিজয়কে নিয়ে কোনোভাবেই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র গ্রহণযোগ্য নয়। মহান বিজয় দিবস দেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিবস। দিবসের তাৎপর্য মূল্যবোধ এবং গুরুত্ব সার্বিকভাবে অনুধাবন করতে হবে। রক্তের সাথে বেইমানি করা যায়না। স্বাধীনতার শুরু থেকে আন্দোলন সংগ্রামে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র এবং মুনাফিক ছিল। তাদের ব্যাপারে দেশের আপামর সচেতন জনগণকে সজাগ থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের দেশ বিরোধী মাতৃভূমি বিরোধী চক্রান্ত প্রতিরোধ প্রতিহত করতে হবে। বিজয়ের সার্বিক উদ্দেশ্য এবং কল্যাণ সকল নাগরিকের অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মহান এ দিবসে আমাদের নতুন করে শপথ গ্রহণ করতে হলেও মাতৃভূমির যথাযত মর্যাদা সম্মান রক্ষার জন্য , এখনো আমরা বহুদিকে নানাভাবে পিছিয়ে আছি। আমাদের বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে।
ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে হবে। ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের অগ্রগতি শান্তি সমৃদ্ধি এবং স্বাধীনতা যারা চায়নি। তারা এখন তৎপর রয়েছে। আমাদের অগ্রগতি বহু হয়েছে। আমরা পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি। আমরা জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারি সেটা আমাদের সরকার দেখাতে সক্ষম হয়েছে। উন্নয়নের অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। কর্মসূচি অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ের সাথে তাদের কর্মজীবন পরিচালনা করছে। বর্তমান অগ্রগতি উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। উন্নয়ন বিরোধী সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
আমাদের মহান দেশ কীভাবে চলবে সেটা দেশের জনগণ ঠিক করবে। অহেতুক ও অন্যায়ভাবে কোনো ধরনের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে দেশি বিদেশী সব ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ স্বাধীন জনগণ মেনে নেবেনা। আমার দেশের ভাল মন্দ সিদ্ধান্ত এদেশের জনগণই করবে। বহিরাগত কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত এবং চাপ কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া হবেনা। গণতান্ত্রিক পরিবেশ জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে এদেশ পরিচালিত হবে। স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জনগণ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সদা প্রস্তুত থাকবে।