মিফতাহুল জান্নাত
ছোটকাল থেকে বাবা সব সময় দাদার গল্প শুনাতেন। যখনি বইয়ে যুদ্ধের ‘কবিতা বা গদ্য’ পড়তাম তখন বাবা দাদার গল্প বলে উঠতেন। বলতেন যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাদার সংগ্রাম ও লড়াইয়ের কথা। তখন থেকেই দাদার সংগ্রামের কথা শুনে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান বাড়তে থাকে। তিনি ভারত সরকারের সহায়তায় শরণার্থী শিবির পরিচালনা করেছেন। ছাত্র রাজনীতিতে খুব জনপ্রিয় নাম ছিলো আবু ছালেহ। ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের অবিভক্ত চট্টগ্রামের সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাকশাল চট্টগ্রাম জেলা শাখার প্রথম যুগ্ম-সচিব হিসেবে নিয়োগ দান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন। জীবনের ঝুকি নিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে ঝাপিয়ে পড়েন। শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে নয় ব্যক্তিগত জীবনে ও ছিলেন খুবই সাটামাটা, নিরহংকার মনের। স্বাধীনতা উত্তর দেশ গঠনের কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার জন্য গ্রামে-গঞ্জে ছুটে বেড়ান এবং আওয়ামী লীগকে পুনরায় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলেন। তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে রাজনীতি করেছেন তিনি, কখনো অপরাজনীতি স্পর্শ করতে পারেনি দাদাকে। বাংলাদেশের রাজনীতি অঙ্গনে জননেতা আবু ছালেহ দাদা হচ্ছেন একজন আদর্শবান নেতার পথিকৃৎ। যাকে কখনো লোভ-লালসা স্পর্শ করতে পারেনি, জনগণের সেবা করার লক্ষ্য নিয়েই রাজনীতি করেছেন তিনি। রাজনীতিকে অর্থ উপার্জনের উৎস করেননি কখনো। খুব ক্রান্তিকাল ও দুর্দিন কাটিয়েছেন তবুও কখনো আদর্শ বিচুত হননি। আবু ছাালেহ’র মধ্যে আমি এক জীবন্ত বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে ওনার ধারায় রাজনীতি করে গেছেন, মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আদর্শকে কখনো কলুষিত হতে দেননি। তাই আদর্শের রাজনীতিতে নেতা-কর্মীদের জন্য জননেতা আবু ছালেহ’র মত আদর্শবান নেতারাই হতে পারে অনুপ্রেরণার মূল উৎস।লাল-সবুজ বেষ্টিত পতাকার মাঝে বেঁচে থাকবেন আজীবন।
“স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন”।
তিনি তাই করে গেছেন। দেশকে কেবল স্বাধীন করেননি বুকে আগলে রক্ষাও করেছেন
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে;
মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন,
‘মানুষ’ হইতে হবেু,এই তার পণ’
কীভাবে দেশ ও দশের জন্য রাজনীতি করতে হয় সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি আমরা উনার জীবনী থেকে। যখনই বাসায় যেতাম দাদা খুব আদর স্নেহ করতেন। বাবা কখনো একা গেলে জানতে চাইতেন আমার নাতি নাতনিরা আসেনি কেনো। বাবা খুব ভালোবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন দাদাকে। জনাব আবু ছালেহ দাদা ও দাদী আমাদের খুব আদর করতেন, পাশে বসিয়ে গল্প করতেন আমাদের সাথে। খুব মিস করি দাদার সাথে কাটানো সময় গুলি। দাদাকে দেখতে যাওয়ার আর তাড়া নেই বিষয়টি খুব কষ্ট দেয়। আল্লাহ দাদাকে জান্নাতবাসী করুক আমিন।