গাছ স্রষ্টার সৃষ্টির এক অনন্য নিদর্শন আর তাই গাছের সাথে মানুষের সম্পর্কটাও যুগ যুগান্তরের। অপরদিকে গাছ অক্সিজেন ফ্যাক্টরী হিসেবে খ্যাত। চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বাক্ষী হয়ে অক্সিজেন, গা জুড়ানো নির্মল বাতাস এবং ছায়া দিতে দাঁড়িয়ে আছে ৬ টি ফুল কড়ই গাছ। বন্দর ভবনের বাম পাশ দিয়ে একটু হেটে গেলেই রাস্তার পশ্চিম পাশে দেখা মিলবে সুবিশাল আকৃতির গাছ ৬টিকে। যা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কালের সাক্ষী হয়ে থাকা চির সবুজ এ গাছগুলোর আনুমানিক বয়স কালের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন ২৯৭৪ সাল থেকে চাকুরী শুরু আমার এ বন্দরে। গাছগুলোর বয়স শত বছরের উপরে হবে। বন্দরে কর্মরত এক চাকুরিজীবীর কাছে গাছের সাথে বন্দরের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস কী? এমন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন গাছগুলো বন্দরের সুখ-দুঃখ হাসি কান্না হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসজুড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা কামাল বলেন, আমার বয়স ৬০ এর কাছাকাছি আমি ছোট থেকেই গাছগুলোকে প্রায় একই অবস্থা দেখছি। গাছগুলো আমার জন্মের বহু আগের। তীব্র গরমের মাঝে হাজারো ক্লান্তি নিয়ে পথিক যখন গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয় ঠিক তখনি গাছ যেন তার হৃদয় নিংরানো সব প্রশান্তিটুকু বিলিয়ে দিয়ে মুহুর্তেই পথিকের ক্লান্তি দূর করে দেয়। অন্যদিকে এই গাছগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ২০টিরও বেশী ভাসমান দোকানপাট। ছায়াঘেরা এ দোকানের টুলে নির্মল হাওয়ায় চা খেয়ে খোশ গল্পে মেতে ওঠেছেন পথচারীসহ চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমে আসা সিএন্ডএফ এর কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অন্যদিকে গাছের ছায়া থাকায় এসব দোকানিদের দিতে হয় না অতিরিক্ত কোনো ছাউনি।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের যাত্রার শুরু থেকেই অবস্থান গাছগুলোর। যদিও ১৮৭৭ সনে কাঠের একটি জেটি দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল এ বন্দর। পরবর্তীতে ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে স্থায়ী বন্দর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় আর তখনই এ ফুল কড়ই গাছগুলো রোপন করা হয় যা আজও কালের সাক্ষী হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের সামনে মাথা উচু করে ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টিনন্দন এ বিশালদেহী গাছগুলো নিঃসন্দেহে যে কারো মনে কেড়ে নেবে এক নিমিষেই। একদিকে যেমন গাছগুলোর কারনে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরকে অধিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত করে তুলেছে গাছগুলো।