1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
একজন মন্ত্রী সমর্থিত আরেকজন এমপি সমর্থিত আর আমি হচ্ছি সাধারণ জনগণ সমর্থিত- তৌহিদ  মিরপুর-পল্লবীর মটস: মানবিক ভ্রাতৃত্ব গঠনে কৃষি ও কারিগরি প্রশিক্ষণে এগিয়ে জাফর হায়াতের মৃত্যবার্ষিকী আজ মানিকগঞ্জে আসিম জাওয়াদের জানাজায় হাজারো মানুষ স্কুল-কলেজের সভাপতি হতে লাগবে এইচএসসি পাস সীতাকুণ্ডে রাজু মীরসরাইয়ে নয়ন, সন্দ্বীপে আনোয়ার চেয়ারম্যান নির্বাচিত আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী আজ পঁচিশে বৈশাখ, কবিগুরুর জন্মদিন ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হলেন শিল্পপতি খলিলুর রহমান বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করেছে ২১নং জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের আলম আশিক

 পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিস: দালালদের ইশারায় চলে ঘুষখোর আমলারা, হয়রানির শিকার সেবা গ্রহীতারা

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২
  • ৩১৫ বার পড়া হয়েছে

পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করাতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা। আইন মেনে কাজ করতে গেলেই বিপদ। সরকার-নির্ধারিত ফি জমা দিয়েও ঠিক সময়ে মিলছে না সাধারণ বা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট। বরং দালালদের শরণাপন্ন হলে ঠিক সময়ে ঠিকই মিলছে সেবা।

পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক ভুক্তভোগী পূর্ববাংলাকে বলেন, দালালদের শরণাপন্ন না হয়ে সরকারি নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে পাসপোর্টের কাগজপত্র জমা দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অফিসে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাগজপত্রে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হলে কাগজপত্র নিয়ে অফিস থেকে বের করে দেয়। সচেতন লোকেরা বলছেন, দালালদের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতে ইচ্ছে করেই পরিস্থিতি জটিল করে রাখা হয়েছে।বিষয়টি তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।

আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে,পাসপোর্ট অফিসে দালালদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র রয়েছে। ওই দালালদের দিয়ে করলে সবকিছু ঠিকঠাক মতো হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট অফিসে আসলে দালাল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে পদে পদে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হতে হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিস ঘিরে ৯০ থেকে ১০০ জনের সংঘবদ্ধ একটি দালালচক্র রয়েছে। ওই দালালদের মারফতে সব কিছু হয়। এখন দালালরা আগের মতো পাসপোর্ট অফিসে অবস্থান না করলেও বাইরে থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে সবকিছু লেনদেন করে।

এইসব দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট না করলে নানান ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে মাসের পর মাস ঘুরাতে থাকে। দালালদের সরকারি নির্ধারিত ফি’র সাথে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি দিলে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পাসপোর্ট হাতে এনে দিচ্ছে।

সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের একটি ভাগ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে চলে যায়। শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে— চট্টগ্রাম বিভাগীয়  ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ সেবা গ্রহীতারা মাসের পর মাস ঘুরে দালালদের শরণাপন্ন না হয়ে কাগজপত্র জমা দিতে পারলেও দ্রুত পাসপোর্ট ডেলিভারি পেতে প্রত্যেক সেবাগ্রহীতাকে ২ হাজার ১ শ’ টাকা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। টোকেন না নিলে পুলিশ ভেরিফিকেশন জটিলতায় আটকে যাচ্ছে পাসপোর্ট।

এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, পাসপোর্ট অফিস থেকে দেয়া স্লিপে উল্লেখ করা নির্ধারিত সময়ে অনেকেই পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ বলেছেন তাদের ১২ দিন অতিরিক্ত সময় লেগেছে। আর সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ পাসপোর্ট করার সময় দালাল বা অন্যের সহযোগিতা নিয়েছেন। আবার তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই দালালের সহযোগিতা নিয়েছেন। ‘

পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক বলেন, কারা দালাল, কারা  টাকা (ঘুষ) নেয় তাদেরকে আপনারা ধরে দিন । কয়েকজন অফিস স্টাফ ও দালালদের নাম বললে তিনি কয়েকজনকে চিনেন বলে জানান।দালালদের ধরে দেবার দায়িত্ব কী সাংবাদিকদের ? তিনি এমনভাবে বললেন তথ্য নেয়া ও জনগণকে জানানোর জন্য সংবাদ প্রকাশ করার চেয়ে দালালদের ধরে আনার কাজই যেন সাংবাদিকের আসল কাজ।

দীর্ঘদিন করোনার কারণে বিদেশ যাওয়া বন্ধ থাকায় অনেকটা স্থবিরতা ছিলো পাসপোর্ট অফিসের কাযক্রমেও। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ভিসা খুলে দেওয়ায় বিদেশ যাওয়ার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। বেড়ে গেছে পাসপোর্ট বানানোর কাজও। আর এ পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে হয়রানীর শিকার হচ্ছে গ্রাহকেরা। ইতিপূর্বে পাসপোর্ট অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, দালাল কর্তৃক হয়রানীর শিকার হলেও এখন এ হয়রানীতে যুক্ত হয়েছেন স্বয়ং পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের স্বয়ং পরিচালক। ভূক্তভোগীদের অভিযোগে এমন হয়রানীর চিত্র উঠে আসে।

আইনুল হাসান নামের এক পাসপোর্ট গ্রাহক পরিচালক কর্তৃক হয়রানী ও নাজেহালের শিকার হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, মহা-পরিচালক, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, অতিরিক্ত মহা-পরিচালক, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম, বিভাগীয় পরিচালক, মুনসুরাবাদ পাসর্পোট ও ভিসা অফিস চট্টগ্রামকে দেয়া হয়েছে।অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, জেলার বোয়ালখালী উপজেলার আইনুল হাসান নামের ওই ব্যক্তি পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে একটি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন। পাসপোর্ট অফিস তাদের অফিসিয়াল কাজ শেষ করে ওই গ্রাহকের হাতে একটি ডেলিভারী স্লিপ দেয়, যাহার নম্বর-৪১০২-০০০০৫৫১২৪। নিদিষ্ট সময়ে ওই গ্রাহক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট আনতে গেলে ডেলিভারী কাউন্টার থেকে জানানো হয় তার চেহারার সাথে অন্য একজনের চেহারা মিলে গেছে তাই পাসপোর্ট দিতে সমস্যা হচ্ছে। তাকে ১০১ নম্বর কক্ষে যোগাযোগ করতে বলেন। ১০১ কক্ষে গেলে ২০৬ এ যোগাযোগ করতে বলেন। ২০৬ এ গেলে ২০৪ এ যোগাযোগ করতে বলেন। ২০৪ কক্ষে গিয়ে চেয়ারে বসা একজন নারী কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ২ ঘন্টা অপেক্ষায় রেখে শেষ পর্যন্ত উপ-পরিচালকের সাথে কথা বলতে বলেন। ২০৩ উপ-পরিচালকের কক্ষে গেলে দরজায় থাকা আনসার বাহিনীর সদস্য আইনুলকে ভেতরে যেতে বারণ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা বসে থেকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পেলেও পাসপোর্ট পেতে সমস্যার কথা বলতে চাইলে পাসপোর্টের জন্য ঢাকায় যেতে বলে ও আনসার সদস্যকে দিয়ে আইনুলকে উপ-পরিচালক বের করে দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে কথা বলতে আইনুল উপ-পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলেও পারেনি। এভাবে শুধু আইনুল নয় আরো অনেক গ্রাহক পাসপোর্ট অফিসে হয়রানীর শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

গ্রাহকদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা প্রার্থীরা। সমস্যা সমাধানে যে কর্তা ব্যক্তি এগিয়ে আসার কথা উল্টো তার কাছে প্রতিকার চাইতে গিয়ে আরও বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। বিশেষ করে পাসপোর্ট নবায়ন ও সংশোধনীর ক্ষেত্রে এ সমস্যায় পড়তে হয় বেশি। এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য গেলে দায়িত্বরত উপ-পরিচালক মাসুম হাসান ঢাকায় যেতে বলেন। তবে সেবা প্রার্থীদের অভিযোগ-উপ-পরিচালকের অনুগত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টাকা দিলেই তাৎক্ষণিক সেবা মেলে নতুবা ঘুরতে হয় বছরের পর বছর।

বাঁশখালী উপজেলার মো. রিদোয়ান নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার এমআরপি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য চলতি বছরের পাঁচলাইশ অফিসে ফাইল জমা দিই। আগের পাসপোর্টে এনআইডির চেয়ে এক বছর কম থাকায় সংশোধনের আবেদন করি। ওই পাসপোর্ট নিদিষ্ট সময়ে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আটকে যায়। পরে অফিস কর্মকর্তাদের পরামর্শে আদালতের হলফনামা জমা দিলেও পাসপোর্ট আটকে থাকে। নিরুপায় হয়ে নিদিষ্ট সময়ের ৭ মাস পর এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য অফিসটির প্রধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মাসুম হাসানের সাথে বেশ কয়েকবার দেখা করার চেষ্টা করলেও আনসার সদস্য ইদ্রিসের বাধায় ব্যর্থ হই।

এ সময় পাঁচলাইশ অফিসের কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ দেখিয়ে এই ভুক্তভোগী বলেন, পাসপোর্ট পেতে ঢাকায় যেতে হলে চট্টগ্রামে এতো বড় অফিস ও এসব কর্মকর্তাদের কেন রাখতে হবে? এসব কর্মকর্তার কারণে আমার অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। আরও ৬ মাস আগে আমার বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসব অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে আমার মতো অনেকে আটকে যাচ্ছে। এই পাসপোর্ট পেতে আসা-যাওয়াসহ তার ২৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

একই ঘটনা ঘটেছে বাঁশখালীর আলমগীরের সাথেও। উপজেলার শেখের খীলের এই বাসিন্দা বলেন, আমার আগে থেকেই পাসপোর্ট ছিল। ওই পাসপের্টটি নবায়ন করতে দিলে এনআইডির সাথে মিল না থাকায় তা আটকে যায়। পাসপোর্ট অফিসের সহযোগিতা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে এক দালালের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে প্রায় দুই বছর পর ওই পাসপোর্ট হাতে আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুঁটিনাটি সংশোধনী থাকলে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে সেবা গ্রহীতাদের পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পাঠানো হলেও অকারণে ডাটা সেন্টারে পড়ে থাকে এসব পাসপোর্ট। সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধান মেইল বা ফোন করলে আটকে থাকা পাসপোর্ট প্রিন্টের জন্য ছেড়ে দেয় ডাটা সেন্টার। কিন্তু চট্টগ্রাম পাঁচলাইশের আঞ্চলিক অফিস, চান্দগাঁও কর্মকার্তাদের পকেটে টাকা না গেলে এসব পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতারা কোন সেবা পান না। টাকা পেলেই পরে মেইল বা ফোন করে ওই সব গ্রাহকদের সেবা দেয়া হয়। পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাসুম হাসানের বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ায় তিনি নাকি কাউকে পরোয়া করেন না এবং নিউজ করলেও তার কোনো সমস্যা নেই বলে তিনি সংবাদকর্মিদের সাথে আস্ফালন করেন।

বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের চট্টগ্রামের পরিচালক মো. আবু সাইদ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার কাছে মাঝে মধ্যে আসে। এখানে বসে আমি চেষ্টা করি সেবা গ্রহীতাদের সেবা দেয়ার। উপ-পরিচালক একটা ফোন দিলে খুঁটিনাটি সমস্যায় আটকে থাকা গ্রাহকেরা সেবা পেয়ে যায়। এসব বিষয়ে কর্মকর্তাদের আরো সচেতন হওয়া উচিৎ।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla