1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হলেন শিল্পপতি খলিলুর রহমান বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করেছে ২১নং জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের আলম আশিক দেশে ২০ হাজার শিশু ডায়াবেটিসে ভুগছে মনজুর আলম প্রতিষ্ঠিত নতুন ৩ টি জামে মসজিদ জুম্মার নামাজ আদায় এর মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে –  সিমিন হোসেন পতেঙ্গা চরপাড়ায় অবৈধ অনুমোদহীন আইসক্রীম ফ্যাক্টরীঃ প্লাস্টিক ফ্যাক্টরী লোকেরাই আইসক্রীম ফ্যাক্টরীরও কর্মী গনচিনি, চ্যাকারাইন, লোংরা পানি ও বিষক্ত ক্যামিক্যাল ব্যবহার সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখীতে ‘সবুজ চুড়ি আন্দোলনে ২৫শ তালগাছ রোপন সাংবাদিক ওমর ফারুকের ইন্তেকাল ২৯ শে এপ্রিল নিহতদের স্মরণে সাহিত্য পাঠচক্রের স্মরণ সভা পথচারীদের মাঝে শরবত, পানি ও গামছা বিতরণ করলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর 

অতীতের পররাষ্ট্রনীতি ও সার্বজনীন রাষ্ট্রভাবনা

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩
  • ৭৭ বার পড়া হয়েছে

সামছুল আলম দুদু
দীর্ঘ সংগ্রাম ও আন্দোলনের ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ৯ মাসের যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস বড়ই মর্মবেদনার ইতিহাস। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ নীতির পাশাপাশি পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ছিল বিস্ময়কর ঘটনা। স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থার সংবিধান প্রণয়ন গোটা বিশ্বকেই বিস্মিত করেছিল। একটি জাতিরাষ্ট্র কীভাবে বিশ্বসভায় পরিচিতি লাভ করে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল তা কারো অজানা নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো নেতার কারণেই বাঙালি আত্মমর্যাদাশীল জাতির গৌরব অর্জন করে এগিয়ে যাবার সুযোগ লাভ করেছে। বঙ্গবন্ধুর গর্বিত কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেলেও লক্ষ্যে অবিচল থেকে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েছেন বাঙালি জাতিকে। আজ বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির উৎসধারায় একটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। যেজন্যে বিশ্বনেতারা বাংলাদেশকে নিয়ে এত আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কী ছিল বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি? তিনি জানতেন রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করতে হলে বিদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব সু-সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। কারো সঙ্গেই শত্রুতা নয়।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা আমাদের বিরোধিতা করেছিল, গণহত্যাকে সমর্থন করেছিল সেইসব রাষ্ট্রের সঙ্গেও তিনি শত্রুতা করেননি। উল্লেখ্য, কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চীন আমাদের স্বাধীনতার ঘোরতর বিরোধী ছিল। কিন্তু চীনের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের পক্ষেই ছিল। তেমনি আমেরিকাও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে সমর্থন করেনি, তবে সে দেশের সাধারণ মানুষ বাঙালিদের প্রতি সহমর্মী ছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে অতিঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কৌশলগত কারণে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা আইয়ুব শাসনকাল থেকেই। চীন এবং পাকিস্তান ভারতের প্রতিপক্ষ দীর্ঘকাল থেকে। রাজনীতিক বিশ্লেষকদের মতে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতাকে ভারতীয় আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করেছিল চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। তখনকার বাস্তবতায় পাকিস্তান ছিল চীন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক এ এল খতিবের বই – Who killed Mujib – এ এক জায়গায় যা উল্লেখ করেছেন ‘১০ জানুয়ারি ১৯৭২ শেখ মুজিব যখন ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২ যখন আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন, তার কোনোটিতেই ঢাকাস্থ চীনা কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন না। তারা ২৪ জানুয়ারি রেঙ্গুন হয়ে দেশে ফিরে যান। এরপরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ আশাবাদী ছিলেন, চীন খুব শিগগির বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ আব্দুস সামাদ আজাদ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, চীনের জনগণের প্রতি রয়েছে আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা। আমরা চীনের নেতাদের প্রশংসা করি এবং আমরা তাদের বিপ্লবকেও সমর্থন করেছি।’ এ থেকে স্পষ্ট মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা সত্ত্বেও চীনের প্রতি বাংলাদেশ ছিল নমনীয়। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় চীন স্বীকৃতি না দিলেও বাণিজ্যিক যোগাযোগের কথাবার্তা শুরু হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ৩০ আগস্ট চীন স্বীকৃতি দিয়েছিল ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম ভুটান স্বীকৃতি দেয়, এর কয়েক ঘণ্টা পর ভারতও স্বীকৃতি দেয়। এরপর ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের স্বীকৃতি লাভ করতে থাকে বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালে ৪ এপ্রিল প্রবল বিরোধিতাকারী যুক্তরাষ্ট্রও স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন ও সুস্পষ্ট বন্ধুসুলভ পররাষ্ট্রনীতির কারণেই এত দ্রুত স্বীকৃতি আদায় সম্ভব হয়। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথমবারের মতো বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীকে অবাক করেছেন। এই ভাষণের মাধ্যমে বীর বাঙালির দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের মূলমন্ত্র তুলে ধরেন। তিনি বিশ্বনেতায় পরিণত হন। ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত শোষিত আর শোষক আমি শোষিতের পক্ষে।’ তিনি বিশ্ব নিপীড়িত মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠেন।
বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে ১১৬টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং ২৭ আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। আমাদের জাতির পিতা বাংলাদেশের স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে। বঙ্গবন্ধুর শাসনকালেই প্রায় ৭০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান বাংলাদেশ সফর করেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বৈদেশিক সহযোগিতা আদায়ে সক্ষম হন শুধুমাত্র উদার ও নৈতিক পররাষ্ট্রনীতির কারণে। তিনি প্রথম বিবেচনায় যে কয়টি উপাদানের ওপর পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার প্রথম উপাদানটি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ। জনগণের কর্মসংস্থান ও তাদের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের পূর্ণাঙ্গ নিশ্চয়তায় বৈদেশিক দাতা সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করতে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর একান্ত প্রেরণায় মানবিক মূল্যবোধের প্রতি দাতা সংস্থা উদার হস্তে সম্মান জানিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত বদান্যতায় মানবিক বিশ্বের ছায়া পড়েছিল বাংলাদেশের ওপর।
একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের পুনর্গঠনে নতুন উদ্যমে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি মনে করতেন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে বাংলাদেশকে একটি আদর্শ ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটি করতে হলে কারো সঙ্গে বৈরিতা করে সম্ভব নয়, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারলেই মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে। বৈরী ভাবাপন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে মনুষত্ব বিকশিত হতে পারে না। তিনি গোটা বিশ্বকেই শান্তিময় বিশ্ব হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন। দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক ফ্যাঁসিবাদী চক্র তাঁর এই সুমহান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে দিয়েছিল তাকে হত্যার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমা ও কূটনৈতিক কৌশলের ধারক তারই কন্যা শেখ হাসিনা লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন অনেকটাই। দেশ ও জাতির সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় নিয়েছেন বাস্তব পদক্ষেপ। তার দৃষ্টিভঙ্গিতে সার্বজনীন ও সর্বকালীন কল্যাণ রাষ্ট্রভাবনা প্রশমিত হয়। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয়তাবাদ এই দর্শন সর্বকালের জন্যেই প্রযোজ্য। যতদিন পৃথিবী থাকবে, মানুষ থাকবে, ততদিন সভ্যতার স্বার্থেই জাতীয়তাবাদ বিকশিত হতে থাকবে। একটা জাতি রাষ্ট্রের এটাই হবে মূলমন্ত্র। পৃথিবীতে যত জাতি রাষ্ট্র আছে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয়তাবাদের উপর প্রণীত হওয়া উচিত। এক বিশ্ব এক চেতনা, পরস্পরে ভালোবাসা, এটাই বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির বীজমন্ত্র।
লেখক : রাজনীতিক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য
শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla