আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ
বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের পুত্র গীতিকার শাহ নূরজালাল বাবুল বলেছেন, আমার বাবা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ও আমার চাচা গানের সম্রাট বাউল কামাল উদ্দিন (কামাল পাশা) এর চাইতে বড় আওয়ামীলীগার কেউ ছিলেননা। কিন্তু সুনামগঞ্জে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে গত ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠায় অবদানকারীদেরকে মরণোত্তর ক্রেস্ট প্রদান করতে গিয়ে ভাটিবাংলার এ দুজন গণসংগীত শিল্পীকে স্মরণ করাতো দূরের কথা ন্যূনতম স্বীকৃতি পর্যন্ত প্রদান করেনি। এতে আমরা সুনামগঞ্জের বাউল সমাজ দু:খিত ও মর্মাহত হয়েছি। তিনি বলেন, দিরাই-শাল্লা তথা সুনামগঞ্জ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক শীর্ষ জনপদ। যে জনপদে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ ও বিশ্ববরেণ্য পার্লামেন্টেরিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপি হিসেবে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন। এবং প্রতিবারই তাদের নির্বাচনী সভামঞ্চে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম,গানের সম্রাট কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) ও জ্ঞানের সাগর দূর্বিন শাহ নৌকা,স্বাধীনতা,স্বায়ত্বশাসন ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে গান গেয়েছেন। তিনি বলেন,আওয়ামীলীগ সরকার সংস্কৃতিবান্ধব সরকার। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উদ্যোগী হয়ে দিরাইয়ের বিশাল জনসভায় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমকে উপস্থিত রেখে গণতন্ত্র ও স্বৈরাচার বিরোধী গান শ্রবন করেন। কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ কেন এবং কোন কারণে সুনামগঞ্জের গুণীজন সাধক মহাজনদের স্বীকৃতি দিলনা তা আমরা ভেবে পাচ্ছিনা।
২১ মার্চ রবিবার দিবাগত রাতে সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের উকারগাঁও গ্রামে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের মুর্শিদ মৌলা বক্স মুন্সীর বার্ষিক ওরস মোবারক উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। মৌলা বক্স মুন্সীর মাজারের খাদেম ফরিদ মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা গীতিকার ফোরামের সভাপতি বাউল শাহজাহান সিরাজ, বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ সুনামগঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল,গীতিকবি ডাঃ এমরুল কয়েস,শিমুলবাক ইউনিয়নের মেম্বার নুরুল আমিন, মেম্বার তাজ উদ্দিন,হযরত জাফর শাহ রহ: এর মাজারের খাদেম জুনাব আলী ও শাহ হুসেন মিয়াসহ স্থানীয় সংস্কৃতানুরাগী ব্যক্তিবর্গরা।
আলোচনার পরে রাতব্যাপী বাউল গানের আসরে সংগীত পরিবেশন করেন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের শিষ্য বাউল রণেশ ঠাকুর,বাউল সোনাফর আলী,গীতিকার বাউল শাহজাহান সিরাজ,গীতিকার বাউল আল-হেলাল, গীতিকার বাউল আলাউদ্দিন,বাউল জহুর আলী শাহ,বাউল আউয়াল শাহ,বাউল হাফিজুর রহমান,বাউল সফর আলী,বাউল আপ্তানূর,বাউল আনোয়ার,বাউল সোলেমান ফকির, বাউল চাদনী আক্তার,শিল্পী জিয়াউর রহমান,রেনু মিয়া ও বাউল আব্দুল আলীসহসহ স্থানীয় সংস্কৃতানুরাগী ব্যক্তিবর্গরা।
সভায় জেলা গীতিকার ফোরামের সভাপতি বাউল শাহজাহান সিরাজ বলেন, বাউলদের চাইতে বড় আওয়ামীলীগার আর কেউ হতে পারেনি ভবিষ্যতেও পারবেনা। নির্বাচন আসলেই আওয়ামীলীগ নেতারা বাউল শিল্পীদের খোজখবর নেন। আমরা বাউলরা নৌকার গান গেয়ে প্রার্থীদের জয়লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। আমাদের অগ্রজ সাধক গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশা,বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ও জ্ঞানের সাগর দূর্বিণ শাহ বঙ্গবন্ধুর জীবদ্বশায় তাই প্রমাণ করে গেছেন। কিন্তু নির্বাচনী বৈতরনি পার হওয়ার পরে আওয়ামীলীগ নেতারা আমাদের কোন খোজখবর নেননা। মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে আমাদের একজন বাউল শিল্পীকেও তারা গান গাইতে ডাকেননি। যে টাকায় ঢাকা থেকে দুজন শিল্পীকে বায়না করে তারা সুনামগঞ্জে এনে গান গাইয়েছেন সেই টাকা দ্বারা ইচ্ছে করলে করোনাকালীন দুর্যোগে সুনামগঞ্জের ৫শত বাউল শিল্পীকে সহযোগীতা দিতে পারতেন।
লোকগীতি গবেষক সাংবাদিক শিল্পী আল-হেলাল বলেন,সুনামগঞ্জ হচ্ছে পঞ্চরত বাউলের দেশ। তাদের মধ্যে গানের স¤্রাট কামাল পাশা,বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ও জ্ঞানের সাগর দূর্বিণ শাহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্ধশায় সরাসরি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে গভীরভাবে মিশে ছিলেন। ভাটির জনপদকে নৌকার দূর্গ হিসেবে গড়ে তুলতে তারা নিরলস সাধনা করেছেন। শত শত সাংবাদিক সাহিত্যিক গবেষকদের লেখা ও রচনায় এই ৩ সাধকের অবদানের কথা লেখা হয়েছে। এছাড়াও সাবেক পররাস্ট্রমন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ,সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপিসহ আওয়ামীলীগের মূলধারার নেতাকর্মীরা সবসময় এই ৩ সাধকের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতেন এবং নিজেদের বক্তব্য বিবৃতিতে তাদের কথা বলতেন। কিন্তু বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগ কোন কারণে মুজিববর্ষে তাদের অবদানের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিলনা তা বুঝতে পারলামনা।
উল্লেখ্য মুর্শিদ মৌলা বক্স মুন্সী একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের মুর্শিদ ছিলেন। তার আধ্যাত্মিক মরমী চিন্তাধারায় আকৃষ্ট হয়ে শাহ আব্দুল করিম তাঁকে মুর্শিদ মান্য করেন। প্রয়াত এই মরমী সাধক স্মরণে তাঁর নিজ বাড়ীতে প্রতিবছরের ৭ চৈত্র বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে মৌলা বক্স মুন্সীর নিজ মোকাম প্রাঙ্গনে দোয়া,জিকির, তবারক বিতরন ও বাউল গানের আয়োজন করা হয়। সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত বিস্তারিত কর্মসুচি পালনের মধ্যে দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে এই ওরস মোবারক। বক্তারা মুর্শিদ মৌলা বক্স মুন্সীর মাজারের স্যানিটেশন সুবিধাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহবাণ জানান।