1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৪ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
ইসরাইলি মন্ত্রীর টুইটকে ঘিরে তোলপাড় সীতাকুণ্ডে ৫টি চোরাই গরু ১টি পিকাপ একটি দেশী অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৩ জন বিশ্বের প্রভাবশালীদের তালিকায় আলিয়া জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো সমাজসেবক মুহাম্মদ ইয়াছিন সওদাগর সংবর্ধিত বেড়েই চলছে সোনার দাম বঙ্গবন্ধু টানেলে পুলিশ-নৌবাহিনী-ফায়ার সার্ভিসের জরুরি যানবাহনের টোল মওকুফ দক্ষিণ হালিশহরে ২৯০ জেলে পরিবারের মাঝে চাউল বিতরণ কর্মসূচি . ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি গাড়িকে ট্রাকের চাপা, নিহত ১১ পতেঙ্গা লিংক রোডে পাজেরো গাড়ির ধাক্কায় বিদেশি নারী শিক্ষার্থীর মৃত্যু

তাহিরপুরে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৭ জন আহত ২১ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ রবিবার, ৬ জুন, ২০২১
  • ৬৭৫ বার পড়া হয়েছে

আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি 

মুক্তিযোদ্ধার নামে সরকারের দেয়া বন্দোবস্তীয় জায়গা জোরপূর্বকভাবে অবৈধ দখলে নেয়ার লক্ষ্যে গ্রাম্য ফতোয়াবাজরা মসজিদে বসে পূর্ব পরিকল্পনা করে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের ৬ সদস্যের উপর হামলা ও বাড়ীঘর ভাংচুরসহ লুটতরাজ করেছে। ৪ ঠা জুন শুক্রবার জুমআর নামাজের পরপরই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের লাকমা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন (৬৯) লাকমা পুর্বপাড়া গ্রামের মৃত আদু শেখ এর পুত্র। এ ঘটনায় অপরাপর আহতরা হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মিলন বিবি (৫৫),পুত্র রেজুয়ান (১৭), কন্যা আমেনা আক্তার (৩৫),নাতিন সুইটি আক্তার (১৮),আনজুমা আক্তার (১৩) ও মুক্তিযোদ্ধার নাতি শিশু আবু সুফিয়ান (২) প্রমুখ।

এ ব্যাপারে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সন্ত্রাসী ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে আজ ৬ জুন রোববার রাতে তাহিরপুর থানায় একটি মামলার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হচ্ছে লাকমা গ্রামের মৃত চান মিয়ার পুত্র বাচ্চু মিয়া (৬৫),মৃত আব্দুল খালেক এর পুত্র সাহাব উদ্দিন (৫০),আব্দুল আজিদ এর পুত্র সুলতান মিয়া (৪৫),মৃত আব্দুল মজিদ এর পুত্র মহর উদ্দিন (৬৯),মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র সুরুজ মিয়া (৫৫),মৃত শফি মেস্তরীর পুত্র বাবুল মিয়া (৪৫),মৃত লতু মিয়ার পুত্র আব্দুস ছাত্তার (৪৫),মৃত সিরাজের পুত্র মুক্তা মিয়া (৩০) ও রতন মিয়া (২৬),সুলতানের পুত্র শিব্বির মিয়া (২২), শফি মেস্তরীর পুত্র জামাল মিয়া (৩৬),আমান উল্লাহর পুত্র রিফাত মিয়া (৩০),মৃত আফছর উদ্দিনের পুত্র আব্দুল জহুর (৩৬),নাফরমানি পাগলার পুত্র সাদ্দাম (২৫),মৃত মন্তাজ মিয়ার পুত্র আলাল উদ্দিন (৫০),মৃত আবু তালিবের পুত্র দুলু মিয়া (৬৫),দুলুর পুত্র কামরুল (৩৫),মৃত মন্তাজ মিয়ার পুত্র শাফি উদ্দিন (৩৫),মৃত শফি মেস্তরীর পুত্র সুমন (২৫),জামাল মিয়ার পুত্র মইনুল (২০) ও সাদেক (৫০) প্রমুখ।
মামলার অভিযোগে প্রকাশ,নাশকতাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার ঘটনায় একাধিক মামলা মোকদ্দমার আসামী বাচ্চু মিয়া জাল জালিয়াতির আশ্রয়ে,মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের বন্দোবস্ত পাওয়া জমি অন্যের কাছে বিক্রয় করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ দায়ের করলে সন্ত্রাসী বাচ্চু ও তার গোত্রীয় লোকজন তাকে খুন করার চেষ্টা করে। গ্রামবাসী জানান,তাহিরপুর থানার বড়ছড়া মৌজার ১৯৮ নং জেএলস্থিত ১ নং খতিয়ানের এস.এ ৩/৯১৭,৩১/৮২১ নং দাগভূক্ত ২.০০ একর জমি আমি সরকার বাহাদুর হইতে ১৯৮৯ইং সনে ১৬২৯/৮৯ নং বন্দোবস্ত
মোকদ্দমামূলে গত ২২/০১/১৯৯৫ইং তারিখে ২৭৬ নং দলিল সম্পাদন এবং ৫৪১/৯৫-৯৬নং নামজারী মোকদ্দমামূলে বন্দোবস্ত প্রাপ্ত হয়ে যথারীতি ভোগ দখল করে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন। কিন্তু বাচ্চু ও তার বাহিনীর লোকজন বন্দোবস্তীয় জায়গা হইতে ঐ মুক্তিযোদ্ধাকে উচ্ছেদ করে তার জায়গা ও সহায় সম্পত্তি গ্রাস করার অসদুদ্দেশ্যে বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত থেকে সময়ে সময়ে তাকে খুন করার নেশায় মেতে উঠে। এ ঘটনায় বাচ্চুগংদের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় জিডি নং ৪০৮ তাং ১৩/১১/২০১৪ইং দায়ের করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। গত ১লা জুন মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার সময় লাকমা চকবাজারস্থ আব্দুল হাই
এর চায়ের দোকানে এসে বাচ্চু ও তার বাহিনীর লোকজন মুক্তিযোদ্ধার জায়গা দখল করে নেয়ার ব্যাপারে তাকে দেশের প্রচলিত আইনের বিপরীতে কথিত সমাজের দোহাই দিয়ে সালিশ বিচারে বসার জন্য  চাপপ্রয়োগ করে। মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন বাচ্চুগংদের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় ঐ ফতোয়াবাজরা তার জায়গা গ্রামের মসজিদের নামে জোরপূর্বক দখল করে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ভীত মুক্তিযোদ্ধা
সুনামগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন এর কাছে প্রথমোক্ত ৫ জনের বিরুদ্ধে ১টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ফতোয়াবাজরা ঐ অভিযোগ দায়েরের সংবাদ জানতে পেরে ৪ ঠা জুন শুক্রবার বাদ জুমআ গ্রামের মসজিদে বসে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় নানা ফতুয়া জারী করে সরলপ্রাণ তৌহিদী জনগনকে
তার বিরুদ্ধে উস্কানী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের উপর হামলা ও তার বাড়ীঘর লুটতরাজ করার পরিকল্পনা গ্রহন করত: বেআইনী জনতাবদ্ধে মিলিত হয়ে পরিকল্পিত খুন ও লুটতরাজের লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ফতোয়াবাজ বাচ্চু ,জামাল ও আব্দুস ছাত্তার, মুক্তিযোদ্ধার বাড়ীর বসতঘরে অনধিকার প্রবেশ করে প্রথমে তার মেয়ে আমেনা আক্তার কে চুলমুঠো ধরে শ্লীলতাহানী ঘটায়। আড়াই বছরের শিশু আবু সুফিয়ানসহ আমেনা আক্তারকে লোহার রড,বাঁশের লাঠি ও কাঠের রুইল দ্বারা মারপিটক্রমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লীলাফোলা জখম করে ঘরের মেঝেতে ফেলে দেয়। এই ঘটনাটি দেখে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে রেজুয়ান তার স্মার্টফোনে ভিডিও ধারন করলে সন্ত্রাসী মইনুল,রতন ও বাবুলগং রেজুয়ানকে দৌড়িয়ে নিয়ে তার বসত ঘরের সামনে মেঝেতে ফেলে লোহার রড,কাঠের রুইল ও বাঁশের লাঠি দ্বারা এলোপাতাড়ি মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। প্রাণরক্ষার জন্য মুক্তিযোদ্ধার ছেলে রেজুয়ান তার হাতে থাকা স্মার্টফোনটি গোপন স্থানে ফেলে দিয়ে সন্ত্রাসীদের কাছে প্রাণভিক্ষা প্রার্থনা করে। এই
সময় “আল্লাহর দোহাই লাগে আমার ছেলেকে মারিছনা”বলে ফতোয়াবাজদেরকে ক্ষান্ত করার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসী মুক্তা,রতন,বাবুলগং মুক্তিযোদ্ধাকে খুন করার লক্ষ্যে ঘর হতে ধরে নিয়ে হাতে থাকা লোহার
রড,বাঁশের লাঠি ও কাঠের রুইল দ্বারা এলোপাতাড়িভাবে মারপিটক্রমে ঘরের সামনে মেঝেতে ফেলে দেয়। সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্তিযোদ্ধাকে রক্ষার জন্য তার নাতিন আনজুমা আক্তার এগিয়ে গেলে রিফাত,রতন,ছত্তার,শাফি উদ্দিনগং আমার নাতিন সাক্ষী আনজুমা আক্তারকে মারপিট করতে থাকে। সন্ত্রাসীদের কবল থেকে স্বামী ও নাতিনকে রক্ষা করার জন্য মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মিলন বিবি এগিয়ে আসলে
ছাত্তার,বাবুল,সুলতান ও রতনগং মিলন বিবিকে চুলমুঠো ধরে নারীজাতীয় শ্লীলতাহানী ঘটায় এবং বেদম মারপিট করে বিবস্ত্র করে মেঝেতে ফেলে এলোপাতাড়ি মারপিটক্রমে জখম করে। সন্ত্রাসী বাবুল ও
মুক্তা মুক্তিযোদ্ধার নাতিন সুইটি আক্তারকে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করে তার বসতঘরের দক্ষিণে পুকুরে ফেলে দেয়। পরে সুইটি আক্তার পুকুর হতে সাতড়িয়ে পাড়ে উঠে তাদের বসতঘরে গিয়ে আত্মরক্ষা করলে বখাটে সন্ত্রাসী মুক্তা,শিব্বির,সাদ্দাম ও সুমনগং বসতঘরে গিয়ে সুইটি আক্তারকে কাপড়ে টানা হেছড়া করে এবং চুলমুঠো ধরিয়া শ্লীলতাহানী ঘটায়। এসব ঘটনার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ শিব্বির ৫ হাজার টাকা মূল্যের ১টি গ্যাসের চুলা, রিফাত দেড় হাজার টকা মূল্যের ১টা গ্যাস সিলিন্ডার,সাদেক পাতিল ও ১টা লোহার কড়াই, সন্ত্রাসী শিব্বির ছয়শত টাকা মূল্যের ১টি শাবল, মুক্তা মিয়া ছয়শত টাকা মূল্যের ২টা কুদাল,
দেড়শত টাকা মূল্যের ১টি বটিদা ও চারশত টাকা মূল্যের ১টি লোহার দা,সুলতান পাঁচশত টাকা মূল্যের ১টি আরএফএল চেয়ার, সুমন চারশত টাকা মূল্যের ১টি সিলভারের কলসী,রতন দেড় হাজার টাকা মূল্যের ১টা
মোবাইল ফোন,মইনুল দুই হাজার টাকা মূল্যের ২টি আরএফএল এর টোল ও লেফতোষক বালিশ,বাচ্চু মিয়া,সাহাব উদ্দিন,সুরুজ মিয়া,বাবুল মিয়া,জামাল মিয়া,আব্দুল জহুর,দুলু মিয়া ও কামরুলগং বারো হাজার
টাকা মূল্যের ৩ বান্ডিল ঢেউটিন প্রকাশ্য দিবালোকে লুটতরাজ করে নেয়। ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের লোকজনকে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সন্ত্রাসীগন কর্তৃক হামলা লুটতরাজের
প্রস্তুতির ঘটনার ভিডিও চিত্র মুক্তিযোদ্ধার কাছে আছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়,ফতোয়াবাজদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মুক্তিযোদ্ধার কন্যা আমেনা বেগম খোলা আকাশের নীচে মানবেতর দিন
কাটাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন ও তার পরিবারের লোকজন বর্তমানে ভিটেবাড়ি ছাড়া।
চেয়ারম্যান মোঃ খসরুল আলম ও ইউপি সদস্য মোঃ জম্মাত আলী বলেন,ঘটনার সঙ্গে জড়িত যেই থাকুকনা কেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক। তাহিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা
সংসদের সাবেক কমান্ডার রফিকুল ইসলাম ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জাহান বলেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা তার পরিবারের উপর হামলা ভাংচুর লুটতরাজের তীব্র নিন্দা ও
প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঘটনাটি জানামাত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ওসি সাহেবকে ঘটনার কথা অবগত করে এ ব্যাপারে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছি। তাহিরপুর থানার ওসি মোঃ আব্দুল
লতিফ তরফদার বলেন, ঘটনাটি জানামাত্র আমি একজন এসআই পাটিয়ে ঘটনাস্থলে শৃঙ্খলা রক্ষা করেছি। ক্ষতিগ্রস্থ মুক্তিযোদ্ধার পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া মাত্র এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের উপর হামলা,বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটতরাজের খবরটি জানতে পেরে আমি তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ প্রশাসনকে বলে
দিয়েছি এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। তিনি বলেন,অপরাধীরা যত শক্তিশালীই হউকনা কেন আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যে জায়গা বন্দোবস্ত দিয়েছি তার এক ইঞ্চি জায়গাও কোন ফতোয়াবাজ বা
দখলবাজদের দখল করতে দেবনা। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন ও তার পরিবারকে সকল প্রকার আইনগত সহযোগীতা প্রদানের জন্য পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla