1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
২৯ শে এপ্রিল নিহতদের স্মরণে সাহিত্য পাঠচক্রের স্মরণ সভা পথচারীদের মাঝে শরবত, পানি ও গামছা বিতরণ করলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর  হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর পথচারীদের মধ্যে শান্তির শরবত বিতরণ করলেন চট্টগ্রামে বর্ণিল আয়োজনে বন্দর দিবস উদযাপন তৎক্ষালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে যত মানুষ মরার কথা ছিলো, তত মানুষ মরে নাই স্মরণ সভায় ওয়াসিকা আবারও আসছে তিনদিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ চট্টগ্রামে কাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক তাপদাহে পুড়ছে দেশ, ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড রাজধানীর সৌদি দূতাবাসে আগুন উত্তর চট্টগ্রামে এই প্রথম ফ্যাকো অপারেশন শুরু করছে চট্টগ্রাম গ্রামীণ চক্ষু হাসপাতাল

১২ ফেব্রুয়ারি কাজেম আলী মাস্টারের ৯৭তম প্রয়াণ দিবস

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ১৩৯ বার পড়া হয়েছে

শাহীন ফেরদৌসী রুহী সুলতানা

কবি শামসুন নাহারের ‘চট্টলা’ কবিতার কয়েকটি লাইন উদ্বৃত করেই বলছি
“তোমার প্রশান্ত বুকে জন্ম নিয়েছে, নিত্য কতো বীর সন্তান
মৃত্যুঞ্জয়ী জীবনের করে গেছে পূণ্য রক্তদান।
কতো মহাপুরুষের উজ্জ্বল স্মৃতি ইতিহাস
অসীম আবেগে জেগে আছে চট্টলের স্নিগ্ধ নীল আকাশ।
বীর প্রসবিনী চট্টগ্রামে সেরকম এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকার জন্ম হয়েছিল, ১৮৫২ সালের ১১ আগস্ট, চান্দগাঁও থানার অন্তর্গত ফরিদের পাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে কাজেম আলী নামে এক মহাপুরুষের।
পিতা-কাসিম আলী ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একজন নামকরা উকিল। মাতা চান্দবিবি মাত্র নয়মাস বয়সে একমাত্র সন্তান কাজেম আলীকে রেখে মৃত্যুবরণ করেন। পিতা-কাসিম আলী পুনরায় বিয়ে করলে সংসারে সৎমায়ের আবির্ভাব ঘটে।
নিঃসন্তান চাচা উজির আলী শাহ্্ মাতৃহীন শিশু কাজেম আলীকে অতিযত্নে পিতৃ স্নেহে লালন করেন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন সুবেদার হয়েও তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। ঐশ্বরিক প্রতিভার অধিকারী উজির আলী শাহ্ কাজেম আলীকে পিঠের উপর বেঁধে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন।
মানবতার পূজারী মহান মানুষ ধর্ম-বর্ণ, উঁচু-নীচ ভেদাভেদহীন ছিলেন। তাই, জেলে, ভিক্ষুক যে কোন মাকে সন্তান কোলে দেখলে কিছুক্ষণের জন্য তাঁর কাছে তুলে দিতেন মাতৃহীন কাজেম আলীকে স্তন্যপান করানোর উদ্দেশ্যে। তাঁর চোখে
“মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই,
নহে কিছু মহীয়ান।”
এভাবে জানা-অজানা অনেক মা’য়ের দুগ্ধপান করেছেন তিনি। এবং চাচার সান্নিধ্যেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িক এবং মানবিক চিন্তা চেতনায় বড় হয়েছেন কাজেম আলী।
কাজেম আলীর জন্ম যখন, তখন বাঙালি মুসলমানদের জন্য ছিল এক সংকটময় সময়। আধুনিক শিক্ষায় এগিয়ে থাকা হিন্দু ছাত্রদের মাঝে মুসলমান ছাত্ররা স্বাভাবিভাবে গড়ে উঠতে পারছিল না। অর্থাৎ, মুসলমানদের জন্য আধুনিক শিক্ষার তেমন কোন অনুকূল পরিবেশই ছিল না। অমুসলিম সহপাঠীদের অপমানসূচক আচরণে স্কুলে মন বসাতে না পেরে তিনি একসময় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন।
কিন্তু সন্তানের পড়ালেখার তীব্র ইচ্ছাশক্তির কারণে তাঁর পিতা কাসিম আলী তাঁকে তৎকালীন মুসলমানদের হুগলীতে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকেই তিনি এন্ট্রাস পাশ করেন। ১৮৭০ সালে ‘দারুল হবর’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শিক্ষানীতির পরিবর্তনে মুসলমানদের শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারিত হয়। শিক্ষা প্রসারের সাথে সাথে তখন শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেতে থাকে মুসলমানরা এবং ‘শিক্ষকতা’ পেশাকে খুব সম্মানিত পেশা হিসেবে তারা গ্রহণ করতে থাকেন।
অত:পর শিক্ষাজীবন শেষে হুগলী থেকে দেশে ফিরে তিনি শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেন। তাই সাতকানিয়ার একটি স্কুলে তিনি প্রথম শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। যেখানে হিন্দু শিক্ষকরা ‘গুরু’ এবং মুসলমান শিক্ষকরা ‘মাস্টার’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
তাঁর জন্মস্থান পৈতৃক নিবাস ফরিদের পাড়া থেকে চরবাকলিয়ায় (বর্তমান দক্ষিণ বাকলিয়া) এসে নিজ প্রচেষ্টায় জমি ক্রয় করে বসতি স্থাপন করেন। যা এখন শেখ-এ চাট্্গাম কাজেম আলী মাস্টার বাড়ী হিসেবে পরিচিত।
জাতির উন্নয়নে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। এই সত্য অনুধাবন করে অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশে কুসংস্কারের বন্ধন থেকে মানুষকে মুক্ত করে স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার। তার জন্য তিনি তাঁর ভিটে বাড়ী সহ সমস্ত সম্পত্তি বাবা পাঁচকড়ি চৌধুরীর কাছে বন্ধক রাখেন।
১.২৮ একর জমি ক্রয় করে ১৮৮৫ সালে গড়ে তোলেন তাঁর স্বপ্নের স্কুল। প্রথমে তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির নাম ছিল। ‘চিটাগাং ইংলিশ মডেল স্কুল’। পারিবারিক পরিমণ্ডলের গড়ে উঠা মাইনর, স্কুলটি প্রথমে হাইস্কুল, বর্তমানে এটি হয়ে উঠে ‘কাজেম আলী হাই স্কুল এন্ড কলেজ’। একবার ঘুর্ণিঝড়ে, দুইবার আগুন লেগে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় স্কুলটি। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে। সাহসী পদক্ষেপে অন্ধকারে আশাহত প্রাণে আলোর সঞ্চার করলেন তিনি। স্কুলের অর্থ সংগ্রহে এমনকি তিনি সুদুর বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) পর্যন্ত ছুটে যান।
তাঁর জীবদ্দশায় তিনি নিজের নামে স্কুলের নামকরণেরও ঘোর আপত্তি করেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর দু’বছর পর ১৯২৮ সালে সর্বসাধারণের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলটি কাজেম আলীর নামে নামকরণ হয়। শিক্ষানুরাগী, মানবহিতৈষী, নিঃস্বার্থ এই দেশপ্রেমিক কাজেম আলী এক মহান ব্যক্তিত্বের নাম। তিনি অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর রূপ ধারণ করে। তখন কাজেম আলীকে কেন্দ্র করে তার স্কুলটিই হয়ে উঠে রাজনৈতিক ও ছাত্র আন্দোলনের এক বিরাট কেন্দ্রবিন্দু। এই আন্দোলন পরবর্তীতে ১৯১১ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে।
১৯০৬ সালের ১লা মে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করা এবং ১৯১২ সালে প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণ এক ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।
১৯২১ সালের ১লা মে আন্দোলনের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিকরা পণ্য খালাসে অস্বীকৃতি জানায় এবং বিদেশী পণ্য নিয়ে আসা জাহাজটিকে তৎকালীন বার্মার আকিয়াবে ফেরত পাঠান। চট্টগ্রামের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে কাজেম আলী ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, মৌলানা আকরাম খাঁ, ডা: সাইফুদ্দীন, মৌলনা শওকত আলী, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, ডা: সৈয়দ হোসেন, মৌলানা মোহাম্মদ আলী সহ প্রখ্যাত মনিষীরা চট্টগ্রামের জনসভায় (বর্তমান জেমিসন মেটারনিটি হাসপাতাল মাঠ) এলে এই মহান ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে আসেন তিনি।
সেরকম এক বিশাল জনসভায় সাহসী এই অনলবর্ষী বক্তা কাজেম আলীকে চট্টগ্রামের জনগণ শেখ-এ-চাটগাম উপাধিতে ভূষিত করেন। অথচ, ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবের কারণে ১৯০৩ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দিলে তা তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তাছাড়া নিঃস্বার্থ জনসেবার কারণে প্রদত্ত কায়সার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক তিনি ইংরেজ সরকারকে ফেরত দেন।
রাজনৈতিক কারণে তিনি বহুবার কারাবরণ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের নেতৃত্বে ১৯২১ সালে আন্দোলন ও মিছিলে অংশগ্রহণ করার কারণে মিছিলের মধ্য থেকে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের মধ্যে সেদিন তিনিও ছিলেন। ১৮৯৩ সালে কাজেম আলী চট্টগ্রাম পৌরসভার (বর্তমান সিটি কর্পোরেশন) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আমৃত্যু তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।
কংগ্রেস, খেলাফত, ফরায়েজী প্রভৃতি কমিটিতে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সমাসীন ছিলেন। বহুবিধ সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কাজেম আলী ১৯২১ সালে কংগ্রেসের মনোনয়নে অবিভক্ত ভারতের আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। পরিষদ অধিবেশন চলাকালীন হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে তিনি ১৯২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আত্মীয় পরিজন ও দেশবাসীকে বেদনার অশ্রুতে ভাসিয়ে চিরবিদায় নেন। অত:পর দিল্লীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।
নিবেদিত প্রাণ এই দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ, আইনসভার নির্বাচিত সদস্য হয়েও সবকিছুকে ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত দেশবাসীর কাছে ‘মাস্টার’ হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেন। পরিশেষে; বহু ভাষাবিদ ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর কথায় বলি,
“যে দেশে গুণীর কদর হয় না
সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না।’
তাই, যথাযথ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি , চট্টগ্রামের এই কৃতি সন্তান কাজেম আলীকে শিশুদের জ্ঞাতার্থে তার জীবনী পাঠ্যপুস্তকে নিবন্ধন করা এবং তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে ‘মাস্টার পুল’ নামে ফলকটির পরিবর্তে শেখ-এ চাটগাম কাজেম আলী মাস্টার পুল হিসেবে নামকরণ করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। সবশেষে, কাজেম আলী পরিবারের পক্ষ থেকে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে ‘কাজেম আলী স্কুল এ্যান্ড কলেজকে সরকারী করণ করার বিনীত অনুরোধ জানাচিছ। আশা করছি সরকারের সম্মানিত উর্ধ্বতন মহল এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেবেন।
পরিশেষে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ পাক তাঁকে জান্নাত নসীব করুন। আমিন।

লেখিকা : কাজেম আলীর প্রপৌত্রী ।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla