1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
২৯ শে এপ্রিল নিহতদের স্মরণে সাহিত্য পাঠচক্রের স্মরণ সভা পথচারীদের মাঝে শরবত, পানি ও গামছা বিতরণ করলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর  হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর পথচারীদের মধ্যে শান্তির শরবত বিতরণ করলেন চট্টগ্রামে বর্ণিল আয়োজনে বন্দর দিবস উদযাপন তৎক্ষালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে যত মানুষ মরার কথা ছিলো, তত মানুষ মরে নাই স্মরণ সভায় ওয়াসিকা আবারও আসছে তিনদিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ চট্টগ্রামে কাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক তাপদাহে পুড়ছে দেশ, ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড রাজধানীর সৌদি দূতাবাসে আগুন উত্তর চট্টগ্রামে এই প্রথম ফ্যাকো অপারেশন শুরু করছে চট্টগ্রাম গ্রামীণ চক্ষু হাসপাতাল

বাংলাদেশের দুর্যোগ একটি পর্যালোচনা

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে

মাহমুদুল হক আনসারী

পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী জিনিস হচ্ছে প্রকৃতি। সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সে সাধ্য আর কারো নেই। প্রকৃতি ঠিক কতখানি শক্তিশালী তার একটি প্রমাণ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ আসার আগে তার পূর্বাভাস পাওয়া গেলেও সে দুর্যোগকে কিন্তু আটকানো যায় না। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই দেশটির নিত্যসঙ্গী। উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত মানুষগুলোকে বাঁচতে হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসে মুহুর্তের মধ্যে তাদের চিরচেনা জীবনকে লন্ডভন্ড করে দেয়। দুর্যোগ শেষে আবার তাদের বাঁচতে হয় নতুন আশায়।

বন্যা, ঘূর্নিঝড়, নদীভাঙ্গনের মত মানবসৃষ্ট নয় তেমন দুর্ঘটনা সমূহকে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সহজ কথায়, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট দুর্যোগসমূহ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সাধারণত, ভৌগালিক কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ছোট হোক কিংবা বড় এর ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশ ও মানবজীবনের উপর দীর্ঘদিন থেকে যায়।

বাংলাদেশ প্রায় প্রতিবছরই কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী হয়। সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমূহকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
বায়ুমন্ডলে সংঘটিত দুর্যোগ (ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, হারিকেন, টর্নেডো,কালবৈশাখি, অতিবৃষ্টি ইত্যাদি)।
ভূপৃষ্ঠে সৃষ্ট দুর্যোগ (ভূমিধস, নদীভাঙন, বন্যা, ভূ-অভ্যন্তরস্থ পানিদূষণ প্রভৃতি।)
ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট দুর্যোগ (ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত। যদিও বাংলাদেশে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা নেই)
হিমালয় ও ভারত থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তেমন নদীর সংখ্যা ৫৪টি। বাংলাদেশের নদীর প্রকৃত সংখ্যা এখনো জানা না গেলেও নদীবাহিত পলিমাটি ও বঙ্গোপসাগরের অবস্থান, সবমিলিয়ে বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ। প্রত্যেক বছর বন্যা, নদীভাঙ্গন, ৮/১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছাস উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের বসবাসরত স্থানকে পরিণত করে মৃত্যুপুরীতে।

বিজ্ঞানীরা প্রাকতিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে চিহ্নিত করে থাকে। প্রাকতিক দুর্যোগের সম্ভাব্য কিছু কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

১. গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
২.কলকারখানা ও গাড়ি থেকে অতিমাত্রায় কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের ফলে বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয়ে যাওয়া।
৩. মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া।
৪. পলিমাটির কারণে নদী ভরাট হওয়া।
৫. একের পর এক বন উজাড়।

প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে ঘটে যাওয়া চক্রটি এনসো নামে পরিচিত। এই চক্রের দুটি বিপরীত অবস্থা হল এল নিনো ও লা নিনা। মূলত, এই চক্রটির প্রভাবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়ত হানা দেয়। বন্যা, সাইক্লোন, জলোচ্ছাস, ঝড়, খরা, নদী ভাঙন, ভূমিকম্প, লবণাক্ততা এদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

বন্যা বাংলাদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরনের বন্যা সংঘটিত হতে দেখা যায়। পাহাড়ি ঢল বা বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ঠ বন্যাকে বলা হয় আকস্মিক বন্যা। ঋতুর প্রভাবে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হলে সেটিকে বলা হয় মৌসুমী বন্যা। সমুদ্রের জলোচ্ছাসের কারণে সৃষ্ট বন্যাকে বলা হয় জোয়ার-ভাটা জনিত বন্যা।

প্রচন্ড গতিসম্পন্ন বায়ু যা ঝড়ের আকার ধারণ করে তা ঘূর্ণিঝড় নামে পরিচিত। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়কে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির সাথে যোগ হয় জলোচ্ছাস। ঘূর্ণিঝড় তার তান্ডব চালিয়ে সাগরে মিলিয়ে গেলেও এর ভয়াল থাবার ছাপ দীর্ঘদিন থেকে যায়।

১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রামে ২২৪ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের সাথে যোগ হয়েছিল ১০-৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ¡াস। এই ঘূর্ণিঝড়ে ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ১৯৯১ সালে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ২২৫ কিলোমিটার। এই ঘূর্ণিঝড়ে ১২-২২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিল।
১৯৯১ সালের ২৯-৩০শে এপ্রিলের ‘শতাব্দীর প্রচন্ডতম ঘূর্ণিঝড়’ ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর “সিডর” খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছিল। ২২৩ কিলোমিটার গতিবেগ ও ১৫-২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করা এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ২০০৯ সালের ২৫শে মে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা “আইলা” নামের ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ৭০-৯০ কিলোমিটার ।

দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারি সহায়তা ব্যতীত কখনোই দুর্যোগ কবলিত মানুষদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের মত মধ্যম আয়ের দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য দুর্যোগ মোকাবেলা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত কর্মসূচি নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
১. ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মোট ২৮ হাজার ২২৭টি দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে।
২. গ্রামীণ দুর্গম জনপদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরু রাস্তা, আশ্রয়কেন্দ্র, সংযোগ সড়ক, হাট বাজার, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে কাবিখা ও টিআর কর্মসূচির আওতায় ১২ লক্ষ ৯১ হাজার ১৬১টি সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে (২০১৬-১৭ অর্থবছর হতে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত)।
৩. দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ৮ লক্ষ ১০ হাজার ৯৫২টি পরিবারকে গৃহ নির্মাণের জন্য ৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩৩৫ বান্ডিল ঢেউটিন এবং নির্মাণ ব্যয় বাবদ ২৬১ কোটি ২৫ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে ( ২০১৯-২০ অর্থ বছর পর্যন্ত )।
৪. উপকূলবর্তী অঞ্চলে ৩২০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও ২৩০টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।
৫. পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর ২,৫০,০০০ কিউসেক পানি মেঘনা নদীতে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে ময়মনসিংহ, সিলেট জেলার তিন লক্ষ একর জমি বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
কোন দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার সে দেশের তরুণ ছাত্রসমাজ। তাই, দেশে কোন বিরূপ পরিস্থিতি বা দেশ দুর্যোগের কবলে পড়লে সবার আগে এগিয়ে আসে সে দেশের ছাত্রসমাজ। এ সময় তাদের দুর্যোগ কবলিত স্থানের মানুষ জনদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে, তাদের জন্য খাবার, বিশুদ্ধ জল, ত্রাণ সংগ্রহ করতে দেখা যায়। যে সমস্ত মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে বহু তরুণেরা তাদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করে নতুন করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।

অতীতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের অগ্রিম আভাস পাওয়া যেত না বিধায় জনগণের দূর্ভোগ চরমে পৌঁছে যেত। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসের মত দুর্যোগের আগাম আভাস পাওয়া সম্ভব হয়। ফলে, জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায়। তবে, দুর্যোগ মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলা করলে ক্ষয়ক্ষতি সহজে কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়। এ সময়ে সিত্রাং নামক নতুন একটি ঘূর্ণিঝড় সাগরে সৃষ্টি হয়েছে। অক্টোবর মাসের এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় বড় ধরনের আঘাত হানার সংবাদ আবহাওয়া অফিস দিয়ে যাচ্ছে। লেখাটি তৈরি করার সময় পর্যন্ত আবহাওয়ার গতি শক্তিশালী হিসেবে দেখা যাচ্ছে। হয়ত বা কয়েক ঘন্টার মধ্যে সিত্রাং নামক ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশের প্রশাসক বিভিন্ন সেক্টর এ ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে পরিত্রাণের জন্য বিভিন্নভাবে দেশ ব্যাপী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলকায় সব ধরনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার সহ আশ্রয় সেল্টার প্রস্তুত গ্রহণ করেছে। সৃষ্টিকর্তার নিকট আকূল আবেদন সব ধরনের দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাস থেকে মাতৃভূমি এবং তার জনগণ ও সহায় সম্পত্তি যেনো রক্ষা করেন।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla