1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
২৯ শে এপ্রিল নিহতদের স্মরণে সাহিত্য পাঠচক্রের স্মরণ সভা পথচারীদের মাঝে শরবত, পানি ও গামছা বিতরণ করলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর  হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর পথচারীদের মধ্যে শান্তির শরবত বিতরণ করলেন চট্টগ্রামে বর্ণিল আয়োজনে বন্দর দিবস উদযাপন তৎক্ষালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে যত মানুষ মরার কথা ছিলো, তত মানুষ মরে নাই স্মরণ সভায় ওয়াসিকা আবারও আসছে তিনদিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ চট্টগ্রামে কাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক তাপদাহে পুড়ছে দেশ, ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড রাজধানীর সৌদি দূতাবাসে আগুন উত্তর চট্টগ্রামে এই প্রথম ফ্যাকো অপারেশন শুরু করছে চট্টগ্রাম গ্রামীণ চক্ষু হাসপাতাল

ভারত বাংলাদেশের দুঃসময়ের বন্ধু

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১৩২ বার পড়া হয়েছে

মো. আবদুর রহিম

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি দখলদার হানাদার সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে নিরীহ মানুষ হত্যা, অগ্নি সংযোগ সহ নির্বিচারে অত্যাচার শুরু করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেই ২৫ মার্চ ১৯৭১ কালরাতেই বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক শুরু। পাকিস্তানীরা বাংলাদেশ দখল করার সাথে সাথে বাংলার ঘরে ঘরে গড়া দুর্গ থেকে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে মোকাবেলা শুরু। পাকিস্তানী বর্বর সামরিক বাহিনীর অত্যাচার থেকে জীবন বাঁচাতে এক কোটি নর-নারী শিশু নির্বিমেষে ভারতে আশ্রয গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করার পর বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর পাকিস্তানীদের দখলে চলে গেলে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কলকাতায় অস্থায়ী দপ্তর চালু করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আশ্রয়, অস্ত্র, খাদ্য, ঔষধ, বস্ত্র সহ যাবতীয় মৌলিক চাহিদার যোগান দেয়। যুদ্ধ চলাকালে গোটা বিশে^র সমর্থন, অস্ত্র ও অর্থ সহযোগিতার জন্য তৎকালীন ভারত সরকার ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দায়িত্ব পালন করে। ভারতের আশ্রয় ও সহযোগিতার ফলে ১৯৭১ সালে ৯ মাস যুদ্ধ শেষে বাংলা শত্রæমুক্ত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তান পরাজয় মেনে চুক্তিবদ্ধ হয় বাংলাদেশ পায় পূর্ণ স্বাধীনতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বেদিতে বাঙালি জাতির ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে ভারতের বহুসৈন্য ও সাধারণ মানুষের রক্ত মিশে আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ভারতের অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে এবং জাতি কৃতজ্ঞতার সাথে ভারতের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর অসীম ত্যাগ ও কুটনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে জীবন ফিরে পায় এবং স্বাধীন দেশের মাটিতে ফিরে আসে। বাংলাদেশে পা রাখার পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতে যান এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী ও সেদেশের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীন দেশে পা রাখার পূর্বেই ভারতীয় মিত্র বাহিনী ভারতে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রæতি ভারত সরকারের কাছে থেকে নিয়ে দেশে ফেরেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও ভারতের মধ্যে গড়ে উঠা সুপ্রতিবেশী সুলভ সুসম্পর্ক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পরিপূর্ণ ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে তাঁর পরিবারের দুই সদস্য ছাড়া বাকী সকলকে নির্মমভাবে হত্যা করে ১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি। সেই থেকে বাংলাদেশ চলে যায় সেই শকুনের কবলে, যারা ১৯৭১ এর গণধর্ষণ করেছিল, যারা বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধে শত্রæর পক্ষে ছিল সেই রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর প্রেত্মাতারা ও খুনীর বাংলাদেশ দখল করে সামরিক শাসন জারি করে এবং সেই পরাজিত পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশের মাটিতে এতিম হয়ে নিরাশ্রয় ও অনিরাপদ হয়ে যায়। মা-বাবা ভাই-ভাবী, চাচা ও আত্মীয়-স্বজন সহ ১৮ জন নিকট আত্মীয় হারিয়ে তারা নিঃস্ব, অসহায় ও আশ্রয়হীন। এ দুঃসময়ে আবার ভারতই তাদের আশ্রয় দেয়, বেঁচে থাকার প্রেরণা দেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রমতি ইন্দিরা গান্ধী ও সেদেশের জনগণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানার পাশে দাঁড়ায়। তারা দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন জীবন কাটায় ভারতে। কেবল শেখ হাসিনা তাঁর বোন সহ আশ্রিত ছিল তাই নয় সে সময় জাতির পিতা হত্যার প্রতিবাদী বহুযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর অনুসারি ভারতে আশ্রিত ছিল। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ভারতের নির্বাসন জীবন শেষে জীবনবাজি রেখে সামরিক স্বৈরাচার ও বঙ্গবন্ধু’র খুনীদের পৃষ্ঠপোষক জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে অনেকটা জোর করেই দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের বিদ্রোহীদের আশ্রয়-প্রশয় ও লালন পালন চলে। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের সাথে বৈরি সম্পর্ক গড়ে তোলে তৎকালীন ক্ষমতাসীন চক্র। ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। পরাজিত হয় সেই ১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি। শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশ ফিরে আসার পর কমপক্ষে ২২ বার তাঁর জীবন নাশের লক্ষে সশস্ত্র হামলা চালায় খুনিরা। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি তৎকালীন সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীন রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাঁকে দুইবার গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২ মার্চ বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে আটক করে প্রায় ৩ মাস গৃহবন্ধি করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তাকে ১৫ দিন গৃহবন্ধি রাখা হয়। ১৯৮৭ সালের ১ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে এক মাস অন্তরীন রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে গ্রেফতার করে গৃহবন্ধি করা হয়। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতিকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীন রাখা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাব জেলে বন্ধি রাখে। প্রায় ১ বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তি পান। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাঁকে লক্ষ করে পুলিশ গুলিবর্ষন করে এতে যুবলীগ নেতা নুর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সহ তাঁর গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ করে তৎকালীন এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী শহীদ হন। লালদিঘী ময়দানে ভাষণ দানকালে তাঁকে লক্ষ করে দুইবার গুলি বর্ষণ করা হয়। কোর্ট বিল্ডিং থেকে ফেরার পথে আবারও তাঁর গাড়ি লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে শেখ হাসিনাকে লক্ষ করে গুলি বর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ^রদী রেল স্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালী পাড়ায় হ্যালিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দুইটি বোমা পূর্তে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বে বোমাগুলো শনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। বিএনপি-জামাতের জোট সরকারের সময় সবচেয়ে প্রাণঘাতি হামলা সংগঠিত হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ঐদিন বঙ্গবন্ধু এভিন্যুয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই শেখ হাসিনাকে লক্ষ করে ১৩টি আর্জেস গ্রেনেড ছোড়া হয়। লোমহর্ষক সেই হামলায় জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমান সহ ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন এবং ৫ শতের অধিক মানুষ আহত হন। সেই গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান। শত শত বাধা বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানাপ্রতিকূলতা উপেক্ষা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর বাংলার মানুষের ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালান। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা। বাংলাদেশ পেয়েছে নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার সাহসী ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব গুণে বাংলাদেশ আজ বিশে^র বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারে ছিল বলেই প্রতিবেশী ভারতের সাথে নতুন মাত্রায় সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এ সম্পর্কের ফলে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়। ভারতে আশ্রিত শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিভিন্ন সময় ওঠানামার পর ১৯৯৬ সালে আবার তা নতুন মাত্রা পায়। বঙ্গবন্ধুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এ সম্পর্কের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, পশ্চিমবঙ্গে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসুকে স্মরণ করতে হয়। বাংলাদেশ-ভারত রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ তা আবারও নরেন্দ্র মোদীর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ পরীক্ষা দেন। সেইদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতের কাছে বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব করে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের প্রশ্নে অটল থেকে বলেছিলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়ে দেশের স্বার্থই আমার কাছে বড়। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের গ্যাস দেশের জন্য ৫০ বছর মজুদ থাকার পরই অন্য কোন দেশে গ্যাস বিক্রি করা যায় অন্যথায় নয়। এ কারণে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় যেতে দেয়নি। তাঁরপরও তিনি দেশপ্রেমের পরীক্ষায় অটল অবিচল। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আবার ভাটা পড়ে। তৎকালীন বিএনপি-জামাতের সরকার আমলে চট্টগ্রামে ধরা পড়া ১০ ট্রাক অস্ত্রের বিষয়টি ভারতের জন্য হুমকি ছিল। তৎসময়ে বাংলাদেশ ভারতীয় সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল ছিল। অস্ত্র প্রশিক্ষণ সহ সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করা হয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর শেখ হাসিনার সরকারের শাসন আমলে বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক আবার নতুন মাত্রা পায়। পিতা-মুজিবের পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মর্যাদার পর্যায়ে নিয়ে আসেন। উভয় দেশের ছিটমহল বিনিময় হয় ফলে উভয় দেশের ছিটমহলবাসী পূর্ণ স্বাধীনতা ফিরে পায়। ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিস্পত্তি করা হয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। এ সফরে তিনি ভারতের নিযামউদ্দিন আউলিয়ার মাজার জেয়ারত দিয়ে শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানি বৈঠক করেন রুদ্ধদার, একান্ত ও দ্বিপক্ষীয়। নয়াদিল্লীর ঐতিহাসিক হায়দারাবাদ হাউসে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুই প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলন স্থলেই হয় সমঝোতা স্মারক ও স্বাক্ষর বিনিময়। শেখ হাসিনার এ সফরে একে একে ৭টি সমঝোতা স্মারক আবদ্ধ হয় বাংলাদেশ ও ভারত। ৭টি সমঝোতা স্মারক হলো Ñ ১) কুশিয়ারা নদী থেকে বাংলাদেশ কর্তৃক ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ২) বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিষয়ে ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের সঙ্গে বাংলাদেশের সিএসআই আরের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক ৩) বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ভারতের সোপানে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক ৪) ভারতের রেলওয়ে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোয় বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দুই দেশের রেলমন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক ৫) বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সমঝোতা স্মারক ৬) ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম ‘প্রসাব ভারতীর’ সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি সমঝোতা স্মারক ৭) বিএসসিএল ও এনএসআইএলের মধ্যে মহাশূণ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক। সমঝোতা স্মারক হস্তান্তর শেষে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপসা রেলসেতুসহ ৫টি বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো Ñ ১) মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্রজেক্টের (রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প) প্রথম ইউনিট ২) খুলনার রূপসা রেলসেতু ৩) বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৫টি প্যাকেজে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্মাণ সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি সরবরাহ ৪) খুলনা-দর্শনা রেল লাইন সংযোগ প্রকল্প ৫) পাবর্তীপুর-কাউনিয়া মিটার গেজ রেল লাইনকে ডুয়েল গেজ লাইনে রূপান্তর প্রকল্প। এ সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ১৯৭১ সালের আদর্শকে জীবন্ত রেখে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদী শক্তিকে সম্মিলিত ভাবে মোকাবিলা করা জরুরি। এসব শক্তি আমাদের পারস্পরিক বিশ^াসকে আঘাত করতে চায়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ‘কদমে কদমে’ (পায়ে পা) মিলিয়ে হাঁটবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অসামান্য উন্নতি করেছে। গত কয়েক বছরে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক সহযোগিতার দ্রæত বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আইটি, মহাকাশ ও পারমানবিক শক্তির মতো খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য আগ্রহের বিষয়। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও সুন্দরবনের মতো ঐতিহ্য রক্ষায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। রূপসা নদীর ওপর রেল সেতুর উদ্বোধন পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। ক্রমবর্ধমান জ¦ালানির দাম বর্তমানে সব উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সংযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফলপ্রসু আলোচনা চলছে। ভারত বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানির জন্য এশিয়ার বৃহত্তম বাজার এবং এই প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত করতে শিগগিরই দ্বিপক্ষীয় ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সেপা) নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। —- ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্য দিয়ে ৫৪টি নদী প্রবাহিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এগুলো দুই দেশের মানুষের জীবন জীবিকার সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে আছে। এই নদীগুলো সম্পর্কিত লোককাহিনী ও লোকগীতিও আমাদের যৌথ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষী। আজ আমরা কুশিয়ারা নদীর পানি বন্টন নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই করেছি। এটি ভারতের দক্ষিণ ও বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলকে উপকৃত করবে।’ ভারত সফরে উভয় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, যতক্ষণ পর্যন্ত মোদি আছেন, বাংলাদেশ-ভারত আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব। আমরা বন্ধু ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেক অনিস্পন্ন সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে করেছি। আমি আশা করি, তিস্তা পানি বন্টন চুক্তিসহ অন্যান্য অনিস্পন্ন বিষয়গুলো শিগগিরই সম্পন্ন করতে পারব।’ ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতির সাথেও বৈঠক করেন। তাঁর সাথে ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ব্যবসায় ফোরামে অংশ নেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনাসদস্য শহীদ হয়েছে বা আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ তুলে দেন। তিনি সফরের শেষ দিন ভারতের রাজ্যস্থান যান এবং খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির দরগাহ জিয়ারত শেষে বিকালে বাংলাদেশ ফিরে আসেন। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি’ উভয় দেশের বৈঠকে উত্থাপন করেছিলেন। ভারত স্বীকার করে বাংলাদেশ যেভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে সেটা গোটা বিশে^ প্রশংসিত হচ্ছে। ভারতও তার প্রশংসা করে। ভারত রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতে চাইলে আরও সহায়তা করবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক যতগুলো প্রস্তাব আসছে তার প্রতিটির সঙ্গে ভারত যুক্ত আছে। ভারত চায় দ্রæত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন হোক। এ বিষয়ে যদি ভবিষ্যতে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার থাকে তাহলে ভারত তা নেবে। সেই প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখ। এ দিনটিকে সামনে রেখে ভারত সফরের সফল গাঁথা জাতিকে পথচলায় আরো একধাপ এগিয়ে দেবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সফলতা বর্ণনা করতে গেলে আরো অনেক লম্বা হবে লেখাটি। তা-ই সময় বাঁচাতে শুধু বলতে চাই বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশকে অনেক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। দেশের মাথাপিছু আয়, দারিদ্র হ্রাস, গড় আয়ু, পদ্মা সেতু নির্মাণ, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন, মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুরে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, পায়রা বন্দর, ১০০টি শিল্প অঞ্চল, আইটি পার্ক, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা-মাওয়া-ডাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, চট্টগ্রামে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, রিংরোড নির্মান, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, হাইওয়ে লেইন সম্প্রসারণ সহ ব্রীজ, কালভার্ট, রাস্তা নির্মাণ, ভবন নির্মান সহ সবক্ষেত্রে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলমান। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলার আপামর জনগণ দেশ ও জাতির স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে এবং নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদানকে আমলে নিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখতে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকেই শক্তিশালী করবে ইনশাল্লাহ।সাধারন সম্পাদক
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা স্মৃতি পরিষদ

 

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla