মাহমুদুল হক আনসারী
সম্পাদক একএম মকছুদ আহমেদ ছিলেন শিক্ষক, সম্পাদক, মানবাদিকার নেতা। বহুগুনের সমন্বয় ছিল এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মকছুদ আহমেদের মাঝে। সদালাপি ও চারণ সাংবাদিক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলায় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটিতে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। শিক্ষকতা থেকে কর্মজীবন শুরু। সম্পাদক, প্রকাশক, সাংবাদিক হিসেবে তিনি তার জীবন সমাপ্ত করেন।
চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশেই তার অসংখ্য ভক্ত গুনগ্রাহী রয়েছে। মানবাধিকার সামাজিক কর্মকান্ডে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি। সদালাপি মিষ্টবাসি এই সম্পাদক সকলের সাথে হাসি খুশি আলাপচারিতা করতেন, আমৃত্য তিনি দৈনিক গিরি দর্পণ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটিতে লেখকের অসংখ্য লেখা প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি ছিলেন শিক্ষকতার মাধ্যমে সাংবাদিকতার একজন আদর্শিক মানুষ। হাতে কলমে বুদ্ধি পরামর্শে বহু সংখ্যক শিক্ষিত যুবকদের লেখক সাংবাদিক কলামিষ্ট হিসেবে যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে তৈরি করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা শৃঙ্খলা জাতীয় ঐক্য, সম্পীতি প্রতিষ্ঠায় তার অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। একতা শৃঙ্খলা দেশাত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করেছেন এই চারণ প্রয়াত সাংবাদিক। দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার প্রকাশক লেখক বুদ্ধিজীবি তার জীবতকালে দেশ মাত্রিকা স্বাধিকার স্বপ্ন পূরণ ও বাস্তবায়নে সর্বদা অনুগত ছিলেন। মাত্ভূমির প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা আনুগত্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রাখতে তিনি ও তার পত্রিকা অতন্দ্র প্রহরির ভূমিকা পালন করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র গিরিদর্পণ ও সাপ্তাহিক বনভূমি সম্পাদক ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে প্রবীণ এই সাংবাদিকের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় রাঙামাটির বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে রেখে গেছেন তিনি। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার শহীদ শুক্কুর স্টেডিয়ামে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৬৯ সালের ১৫ নভেম্বর একেএম মকছুদ আহমেদ’র সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় চট্টগ্রামভিত্তিক দৈনিক আজাদীর রাঙামাটি সংবাদদাতা হিসেবে । ১৯৭৩ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক জনপদে। ১৯৭৪ সালে ‘দৈনিক পূর্বদেশ ‘পত্রিকায় রাঙামাটি জেলা সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর যুক্ত হন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও এনায়। ১৯৭৬ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের রাঙামাটি জেলা সংবাদদাতা হিসেবে যোগ দেন। এছাড়াও ‘নিউ নেশান’ ‘ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ পত্রিকার রাঙামাটি সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিবিসি, দি টেলিগ্রাম, সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের একমাত্র মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক বনভূমি’।
১৯৮১-৮৩ সাল থেকে তিনি দৈনিক গিরিদর্পন পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন। ২০২১ সালে বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। দৈনিক আজাদী ২০০৩ সালে তাকে ‘চারণ সাংবাদিক’ হিসেবে সম্মাননা দেয়। তিনি রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতিও।
একেএম মকছুদ আহমেদ ১৯৪৫ সালের ১০ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মগাদিয়া ইউনিয়নের মগাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জামাল উল্লাহ ও মা জমিলা খাতুন। ১৯৬৬ সালে তিনি কাউখালী উপজেলার কলমপতির বেতছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি নিয়ে রাঙামাটি যান। পরে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত লংগদু উপজেলার সোনাই প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বরকলের গোরস্থান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর থেকে সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এ কে এম মকছুদ আহমেদ’ নামে একটি বই আছে তাকে নিয়ে। তার উপর অনেক লেখা প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রচার হয়েছে। সম্পাদক মকছুদ আহমেদের ইন্তিকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ পুরো দেশেই লেখক সাংবাদিক সংবাদপত্রের কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন সংগঠন শোক সভা, দোয়া মাহফিল তাঁর কর্মজীবনী নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান করছে। তাঁর ইন্তিকালে শোকাহত পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন প্রতি গভীর ভাবে সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন। মহান আল্লাহ তাআলা তাকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমিন।