নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি চাকরিতে যোগদানের অল্প সময়ের মধ্যেই কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার সাহেদ হোসেন চৌধুরী অবৈধ উপায়ে গড়ে তুলেছেন প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদের সাম্রাজ্য। তার বেতনের সাথে সম্পদের মিল না থাকায় উঠেছে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাঁশখালীর ইলশা গ্রামের আহমদ হোসেন চৌধুরীর পুত্র সাহেদ হোসেন চৌধুরী ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন। যোগদানের পর সাহেদ হোসেন চৌধুরীর জীবনধারায় আসে নাটকীয় পরিবর্তন। বিভিন্নস্থানে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছে।
চাকরিতে যোগদানের অল্প দিনের মধ্যে তার বন্ধু বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের খন্ডকালিন শিক্ষক মুহাম্মদ আবুল বায়ায়কে দিয়ে ৩২ লাখ টাকায় স্থানীয় মো. আকতার উদ্দীন চৌধুরীর কাছ থেকে বাঁশখালী উপজেলার ইলশা মৌজায় গত ১০ জুলাই ১৩.৫০ শতক জায়গা ক্রয় করান সাব রেজিষ্ট্রর সাহেদ হোসেন চৌধুরী। জায়গা কেনার কিছুদিন যেতে না যেতে গত ১ সেপ্টম্বর ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় সাব রেজিষ্ট্রার সাহেদ হোসেন চৌধুরীর পিতা আহমদ হোসেন চৌধুরীর নামে সাহেদের বন্ধু আবুল বায়ানের কাছ থেকে নিয়ে নেয়। স্থানীয় সূত্র মতে, মাত্র দুই-তিন বছরের ব্যবধানে সাহেদ ও তাঁর পরিবার গড়ে তুলেছে দুইটি বহুতল ভবন এবং অগণিত জমি। এলাকাবাসির অভিযোগ যে পরিবার এক সময় মাটির ঘরে বসবাস করত অভাবের সংসার ছিল, আজ তাদের সম্পদের পরিমাণ এতটাই বেশি যে তা অপ্রত্যাশিত ও রহস্যজনক।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জিত হয়েছে। এলাকাবাসির অভিযোগ, দুর্নীতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে এই সম্পদ অর্জন করেছেন সাহেদ হোসেন চৌধুরী। অভিযোগ রয়েছে, সাব-রেজিস্ট্রার পদে যোগদানের আগে সাহেদ হোসেন চৌধুরী ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সুপারিশে চাকরি পান। এরপর থেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের নানা অপকর্মে যুক্ত হন তিনি। সাহেদ হোসেন চৌধুরীর বিপুল সম্পদের উৎস ও তাঁর কর্মকান্ড নিয়ে এখনো নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এলাকাবাসি বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে বাঁশখালী সাব রেজিষ্ট্রার অফিস এবং রামু সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে তোলপাড় শুরু হয।
এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের খন্ডকালিন শিক্ষক মুহাম্মদ আবুল বায়ান বলেন, জায়গাটি রামু সাব রেজিষ্ট্রার আমার বন্ধু শাহেদের জন্য কেনা, যেহেতু উনি সরকারী চাকুরী করে উনার নামে কিনলে নাকি আইনগত সমস্যা আছে তাই। আমি কিছুদিন পর উনার পিতার নামে জায়গাটি দিয়ে দিয়েছি। আমার মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতন জায়গা কেনার মত আমার এত টাকা নেই।
৩২ লাখ টাকার জায়গা অল্প কয়দিনে ৬ লাখ টাকায় বিক্রির প্রসঙ্গে বাঁশখালী উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার রতন অধিকারী বলেন, জায়গার দামটা আমরা দেখি না। একটা জায়গা রেজিষ্ট্রি হওয়ার সময় কাগজ পত্র ঠিক আছে কিনা এটা দেখানো হয় মূলত। এ বিষয়ে রামু সাব রেজিষ্ট্রার শাহেদ হোসেন চৌধুরীর পিতা আহমেদ হোসেন চৌধুরীর সাথে বাঁশখালী গ্রামের বাড়িতে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানার জন্য রামু সাব রেজিষ্ট্রার শাহেদ হোসেন চৌধুরীর বক্তব্য জানার জন্য উনার অফিসে সাংবাদিকরা গেলে তারা সাংবাদিকের কাছে এ বিষয়ে কোন কথা বলবে না বলে জানিয়ে দেন।