ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় গতকাল রবিবার লঞ্চ মালিকসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার আদালতে মামলা হয়েছে। মামলায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্মসচিব মো. তোফায়েল ইসলাম বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে লঞ্চের ইঞ্জিনরুম থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা গেছে। লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি ছিল না এবং চালক-স্টাফদের গাফিলতি ছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান।
বরগুনা উত্তর ও দক্ষিণ প্রতিনিধি জানান, বরগুনা সদরের এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির বাদী হয়ে বরগুনা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযান-১০-এর মালিক হাম জালাল শেখকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরো ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য বরগুনা সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘লঞ্চে আগুনের ঘটনায় মালিকসহ স্টাফদের গাফিলতি সুস্পষ্ট। আলোচিত এ ঘটনায় বাদী সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলার আবেদন করেছিলেন। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে মামলাটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে আদেশ দেন।’
বাদী অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্যে আমি নিশ্চিত হয়েছি মামলার আসামিদের দায়িত্বে গাফিলতির কারণে আগুন, মৃত্যু, আহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করেছি। এ কারণেই আমি ন্যায়বিচারের স্বার্থে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি করেছি। আমি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’ গতকাল দুপুরে বরগুনা সার্কিট হাউজে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত সাত সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চের প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
এ সময় অনুসন্ধান কমিটির প্রধান বলেন, লঞ্চের প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী এবং উদ্ধারকারীদের কাছ থেকে সরাসরি শুনে ঘটনার সময় লঞ্চে কর্মরত স্টাফদের ভূমিকা কী ছিল তা আমরা নির্ণয় করতে পারব। নদীবন্দর ত্যাগ করার আগে বন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও সেটি করা হয়েছিল কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে অফিসে খোঁজখবর নিয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে। এ দুর্ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝালকাঠি থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেইনেন্স বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান ঝালকাঠিতে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযান-১০-এ পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি ছিল না। যদি থাকত তাহলে এত হতাহত হতো না। জাহাজের চালক বা স্টাফরা অতিদ্রুত লঞ্চটি কিনারায় ভিড়িয়ে নোঙর করলে বহু যাত্রী মাটিতে নামার সুযোগ পেত। কিন্তু সে কাজটিও লঞ্চের চালক ও স্টাফরা করেননি।
এছাড়া নদীর পানি ব্যবহার করেই পাম্প মেশিনের মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যেত, সেটিও করেননি তারা।’ এদিকে তৃতীয় দিনের মতো সুগন্ধা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে বরিশাল নৌ-ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও কোস্ট গার্ড। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নতুন করে কোনো মৃতদেহের সন্ধান মেলেনি। সবটুকু জানতে ক্লিক করুন