মাহমুদুল হক আনসারী
মসজিদের খতিবদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ৩ লক্ষাধিক মসজিদ আছে। সেখানে একজন খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন আছেন। কোনো কোনো মসজিদে একাধিক ইমাম ও খাদেম আছে। বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারাদেশের কয়েক লাখ মসজিদের ইমামদেরকে নানামূখী প্রশিক্ষণ দিয়েছে । বিশেষ করে আর্তসামাজিক উন্নয়নে মসজিদ কেন্দ্রিক ভূমিকা । কৃষি , মৎস্যচাষ , বনায়ন , বৃক্ষ রোপণ , পরিষ্কার পরিছন্নতা , প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সামাজিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ।
বাংলাদেশে রাজধানী থেকে গাঁ- গ্রাম পর্যন্ত মুসলমানদের ইবাদতের জন্য মসজিদ আছে। সেই মসজিদ সমূহ স্থানীয় মুসল্লিরা কমিটি করে মাসিক চাঁদা ধার্য করে পরিচালনা করে। খতিব , ইমাম , মুয়াজ্জিন সামান্য বেতন ভাতায় মুসলিম সমাজে ধর্মীয় এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে মসজিদ সংস্কার হয়েছে। সুন্দর সুন্দর নান্দনিক অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। এর বাইরেও ধর্ম মন্ত্রনালয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পাচঁ শতাধিক মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছে । এই মসজিদ সমূহে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন সহ কর্মচারি নিয়োগ দিয়েছে। সেখানে সমাজ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি দেখেছে। তবে একটি প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিক ভাবে চলার মতো পরিকল্পনা রাখা হয়নি।
সমাজ সংস্কারে সঠিক ভাবে মসজিদ কেন্দ্রিক খতিব , ইমামকে ব্যবহার করা যেতে পারে। রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আইনশৃঙ্খলা পরি স্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখা , শিক্ষার হার বৃদ্ধি, পরিষ্কার পরিছন্নতা, মাদক নিয়ন্ত্রণ, কিশোর অপরাধ, ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রন এক কথায় সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে যথাযতভাবে সমাজ সংস্কার এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারের সহযোগি হিসেবে খতিব ইমামদের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। সরকারের ভোটার তালিকা খাল নাগাত সংশোধন সংযোজন এইসব গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে ইমামগণ সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন ও সম্পন্ন করে সরকারের সহযোগিতায় আসতে পারে।
সরকার এই সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। সেই জায়গায় বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম মহল্লাতে মসজিদ ও মক্তব আছে। সেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতাদের নুন্যতম ভাতা সম্মানি দিয়ে সরকার ইচ্ছে করলে উপরোক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারে।
বর্তমান অরাজনৈতিক অন্তবর্তিকালীন সরকারকে উদ্যেশ্য করে বলবো, বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রের কালো হাত ভেঙ্গে দিতে আজো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠান পাহারা দিচ্ছে মসজিদের সাথে সম্পর্কিত ধর্মীয় নেতারা। বলা যায় দেশ প্রেমিক নির্লোভ মানবতাবাদি সহজ সরল এইসব খতিব ইমামদের জন্য রাষ্ট্র গভীর ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের রাষ্ট্রিয় কাজে ব্যবহার করতে পারে।
শতভাগ সফলতা আসতে পারে তাদের মাধ্যমে। যেহেতু প্রায় তিন লক্ষাধিক খতিব ইমাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে রেখেছে। সমাজে নানা ভাবে ধর্মিয় এই নেতারা অবহেলিত। বেতন ভাতা অত্যন্ত অপ্রতুল। কোনো নিয়মনীতি কাঠামোর মধ্যে তাদেরকে বেতন দেয়া হয়না। একটি অসাধু গোষ্টি মসজিদগুলোকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। খতিব ইমাম সঠিক ভাবে সময়োপযোগি ভাষণ, খুতবা উপস্থাপন করতে বাঁধা প্রাপ্ত হন। তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কোনো বোনাস এককালিন অথবা পেনশনের কোনো ব্যবস্থা তাদের জন্য নেই। এই ধর্মীয় গোষ্টিটি স্বাধীনতার পর হতে অবহেলিত জীবন যাপন করছে। মুসল্লিগণ তাদের উপর অন্যায় অমানবিক আচরণ করছে। রাষ্ট্রিয়ভাবে তাদের জন্য একটি বেতন ভাতার সার্কুলার ঘোষণা বিহীন আদেশ ফাইল বন্ধি করে রেখেছে বলে জানা যায়।
সরকার আসছে অনেক সরকার গেছে। কিন্তু এই ধর্মীয় নেতাদের কথা কেউই একবারও চিন্তা করে না। প্রকৃতভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, এই ইমাম খতিবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালত পাড়ায় কোনো ধরণের ফৌজদারি মামলা প্ওায়া যাবে না। মহান সম্মানি এই ধর্মীয় নেতাদের রাষ্ট্রিয় তৃণমূল পর্যায়ের কর্মসূচিতে নিয়োগ করা গেলে জাতি সার্বজনিনভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করেন সমাজ ।