মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় সাফল্য দেখিয়েছে।
২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক সারা বিশ্বের মানুষের শান্তি সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ‘২০৩০ এজেন্ডা’ গৃহীত হয়। অতি দারিদ্রসহ ক্ষুধা ও সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে বিশ্ব শান্তি জোরদার করতে আগামী প্রায় দেড় দশক বিশ্বের সকল দেশ একযোগে এ অভীষ্টগুলো অর্জনে কাজ করবে। যার মূলমন্ত্র হবে ‘কাউকে পশ্চাতে না রাখা নীতি অনুসরণ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’-এর জন্য ১৭টি অভিষ্ট, ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা এবং ২৩২টি বৈশ্বিক সূচক স্থির করা হয়েছে।
পাকিস্তানি শাসন শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম আর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তী বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচিতি আর ভাবমূর্তি ছিল সেটি পাল্টেছে বহুভাবে। স্বাধীনতার কয়েক দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ যেমন তৈরি হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পনের মধ্যে দিয়ে সৃষ্ট বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। লড়াই সংগ্রাম করে স্বাধীনতা পাওয়া এ দেশটি শুরুতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে তকমা পায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের উন্নতির প্রশংসা ইতিমধ্যে সারা বিশ্ব থেকেই আসছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে দ্রুত বদলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন খাত। বাংলাদেশ প্রযুক্তি বিশ্বে অর্জন করে নিয়েছে নিজেদের একটি সম্মানজনক স্থান। সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের নাম হচ্ছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে অগ্রযাত্রা শুরু। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
২০২৪ সালের শুরুতেই চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে বাংলাদেশে তৈরি প্রথম স্যাটেলাইট ‘ফেমটো’। আকারে অতি ক্ষুদ্র এ স্যাটেলাইট চাঁদে অবতরণ করে নিয়ে আসবে তথ্য। সেই তথ্য দিয়ে চাঁদে মানুষ বসবাস করতে পারবে কি-না তা নিয়ে গবেষণা করবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
চাঁদ মানুষের বসবাসের জন্য উপযোগী কি-না তা দেখতে স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করবে এমন ২২টি দেশকে নির্বাচন করে নাসা। যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। বিশ্বের অনেকগুলো টিমের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে নির্বাচিত হয় এজেন্সি টু ইনোভেইট (এটুআই)-এর ‘ফেমটো স্যাটেলাইট’। যে স্যাটেলাইটটি চলতি বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে বলে জানিয়েছেন এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির।
চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে ভারতের চন্দ্রযান ৩, কিছুদিনের মধ্যে চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে। এসবের মাঝে নতুন চমক বাংলাদেশের। শোনালেন খুশির খবর। চাঁদে পাঠাবে স্যাটেলাইট। উদঘাটন করবে অজানা রহস্য। গোটা বিশ্বের সামনে নিয়ে আসবে চাঁদের সিক্রেট। চাঁদে কোথায় হবে ঘরবাড়ি ? রাস্তাঘাটই বা কেমন হবে? ফসল ফলানো যাবে তো? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে। বানাচ্ছে ছোট্ট বিস্কুটের মতো মারাত্মক শক্তিশালী অস্ত্র। দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট দেশ যা করে দেখাচ্ছে, তা সত্যি বিস্ময়কর।
কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছিল, চাঁদের রুক্ষ পাথুরে মাটিতে এখনো কিছু যৌগ সক্রিয় রয়েছে। যেখান থেকে অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জল উৎপন্ন সম্ভব। এমনকি পাওয়া যেতে পারে হাইড্রোজেন থেকে শুরু করে মিথেন, যা দিয়ে চলবে ইলেকট্রিক যন্ত্র। এবার চাঁদ নিয়ে কৌতূহল মেটাবে বাংলাদেশ।
২০২৪ সালের শুরুতে গড়তে যাচ্ছে নতুন রেকর্ড। চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে স্যাটেলাইট ফেমটো। স্যাটেলাইট বলতে চোখের সামনে যা ভেসে ওঠে সেই ধারণা কিন্তু এখানে মেলাতে পারবেন না। এই স্যাটেলাইটের আকার মাত্র ৩৬ সেমি। ছোট্ট একটা বিস্কুটের মত। ওজন মাত্র ৫ গ্রাম। আকারে ছোট, ওজনও কম, অথচ শক্তিশালী। মাইক্রো লেভেলের এমন ডিভাইস নিয়ে কাজ করাটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ, যা করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
নাসার এত বড় প্রজেক্টে বাংলাদেশের যোগদান সহজ ছিল না। বিশ্বের তাবড় তাবড় বহু টিমের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে তবেই সিলেক্ট হয় বাংলাদেশের এজেন্সি টু ইনোভেইটের ফেমটো স্যাটেলাইট। যা জানিয়ে দেবে পৃথিবীর বিকল্প হিসেবে চাঁদের মাটি কতটা উপযুক্ত। বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণায় একজনের নাম না বললেই নয়। উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া সঞ্জিত মন্ডলের। এর আগেও তিনি তৈরি করেছিলেন রোবট নিকো। তিনি নাসাতে স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।
বাংলাদেশের এই কাজে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে নাসা। স্যাটেলাইটের ডিজাইন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সবই পাঠিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের মাটিতে তৈরি স্যাটেলাইট পাঠিয়ে দেওয়া হবে নাসার কাছে। নাসা সেটিকে পাঠাবে চাঁদে। আপাতত এই পরিকল্পনায় নাসাকে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জনের একটা তরুণ টিম দিন রাত পরিশ্রম করছেন। লক্ষ্য একটাই, ভবিষ্যতে দেশকে মহাকাশের উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। গোটা বিশ্ব যেখানে এক ডাকে চিনবে বাংলাদেশকে। মহাকাশে চাঁদের দেশে থাকবে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট। মহাকাশে জানান দেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব। দেশটা এখানেই থেমে নেই, ভবিষ্যতে রকেট তৈরি করারও পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যেই রকেট তৈরি চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় দুটো প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের অনুদানও দিয়েছে। এটা কি কম বড় পাওনা?
ধারণা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ তিনটি ইতিহাস করতে চলেছে। প্রথমত, চাঁদের বুকে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের প্রথম গভীর মহাকাশ মিশন। তৃতীয়ত, প্রথম স্যাটেলাইট যা বাংলাদেশে অ্যাসেম্বলিং ও প্রোগ্রাম করা হবে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যে অগ্রগতি হয়েছে সেটা বাস্তব প্রয়োগে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল। যা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনের সফলতার পথ ধরে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পথে দেশ আরও সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাবে।