ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবিকতা! তা প্রমাণ করে দেখালেন মহারাষ্ট্রের চারজন মুসলিম। দেশজুড়ে কোভিড সঙ্কটের সময় যখন মৃত্যুর মিছিল সামলাতে হাঁপিয়ে উঠেছেন শ্মশান কর্মীরা, তখন তাঁদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হিন্দুদের দাহকার্য করলেই এই চার মুসলিম যুবক।
মহারাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের তীব্রতার পাশাপাশি রাজ্যজুড়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। রাজ্যের একাধিক শ্মশানে মৃতদেহের স্তুপের ভিড়ে নাজেহাল শ্মশান কর্মীরা। তখনই এগিয়ে এলেন আব্দুল জব্বর, শেখ, আলীম ও আরিফ। মহারাষ্ট্রে মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ৮০০টি কোভিড মৃতদেহ দাহ করেছেন এই চারজন মুসলিম যুবক। রাজ্যের যবতমাল জেলায় কোভিডে মৃত্যু হওয়া দেহগুলির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে এঁদের হাতেই। পরনে পিপিই কিট, মুখে মাস্ক পরে হিন্দুদের সব রীতি পালন করে এই মুসলিমরাই কোভিড দেহগুলির অন্তিম কাজ সম্পূর্ণ করছেন।
শ্মশানের কাজ থেকে একটু বিরতি নিয়ে আব্দুল জাফার বলেন, ‘করোনায় মারা যাওয়ার পর মৃতদেহগুলির কাছে পরিবারের লোকজন আর আসছে না। তাই আমরাই সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও হিন্দু রীতি মেনে তাঁদের শেষকৃত্য করছি।’ এই যবতমালের শ্মশানে এই চার মুসলিম যুবক গত ১৭ বছর ধরে কাজ করছেন। এই চার মুসলিম যুবক জানিয়েছেন যে তাঁরা এই মহামারি শুরু হোয়ার পর থেকে ৮০০টি কোভিড দেহ দাহ করেছেন। প্রসঙ্গত, জেলার মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন দেহ দাহ করার জন্য দু’টি দল গঠন করেছে। প্রতিদিন সীমিত সংখ্যায় শ্মশান কর্মী ও পরিবারের সদস্যরা শেষকৃত্যের সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে পিপিই কিট পরে আসা বাধ্যতামূলক।
এপ্রিলের শেষে মহারাষ্ট্রে একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৮৯৫ জনের। রাজ্যে সক্রিয় করোনা কেসের সংখ্যা ৬.৭ লক্ষ। সরকারের প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলার পাশাপাশি এই চার মুসলিম শ্মশান কর্মী জানিয়েছেন যে তাঁদের ইশ্বরের ওপর আস্থা রয়েছে। আব্দুল আব্বাস বলেন, ‘আল্লার ওপর আস্থা রয়েছে তাই তো প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করছি এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত করে যাব।’ প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই গুজরাতের এক শ্মশানে মুসলিম কর্মী দাহকাজে সাহায্য করার তীব্র প্রতিবাদ করেছিল বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে যারা হিন্দুধর্মের রীতি জানেন না তাঁরা কীভাবে হিন্দু দেহের সৎকার করবে। তবে মহারাষ্ট্রের এই চার মুসলিম যুবক এই তত্ত্বকে মিথ্যা প্রমাণিত করে দেখাতে সফল হলেন।