1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
চট্টগ্রামে বর্ণিল আয়োজনে বন্দর দিবস উদযাপন তৎক্ষালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে যত মানুষ মরার কথা ছিলো, তত মানুষ মরে নাই স্মরণ সভায় ওয়াসিকা আবারও আসছে তিনদিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ চট্টগ্রামে কাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক তাপদাহে পুড়ছে দেশ, ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড রাজধানীর সৌদি দূতাবাসে আগুন উত্তর চট্টগ্রামে এই প্রথম ফ্যাকো অপারেশন শুরু করছে চট্টগ্রাম গ্রামীণ চক্ষু হাসপাতাল সীতাকুণ্ডে বৃষ্টির জন্য ইস্তাহার নামাজ আদায় শনিবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্যে ভোটের যুদ্ধ

বাংলার নায়ক ফারুকের চিরবিদায়

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩
  • ২৮৫ বার পড়া হয়েছে

আবছার উদ্দিন অলি

না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুপারস্টার নায়ক ফারুক। তাঁর মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছাঁয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর খবর এখন আলোচ্য বিষয়। জনপ্রিয় নায়ক ফারুক সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় সোমবার ১৫ মে সকাল ১০টায় মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। চিত্র নায়ক মরহুম ফারুকের লাশ মঙ্গলবার ১৬ মে সকাল সাতটা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার ফ্লাইটে এসে পৌঁছায়। বেলা ১১টায় জাতীয় শহীদ মিনার (সব স্তরের জনগণের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য) দুপুর দেড়টা (বাদ জোহর) এফডিসি (চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট গুণীজনের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য ও জানাজা নামাজ) বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে (বাদ আসর) গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা নামাজ (আজাদ মসজিদ) সন্ধ্যা সাতটায় গ্রামের বাড়ি জানাজা নামাজ (দখিন সোম টিওরী পাকা জামে মসজিদ, পাঠান বাড়ি, কালিগন্জ, গাজীপুরে কবর দেওয়া হয়। নায়ক ফারুক এর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ও চাটগাঁ ফিল্ম প্রোডাক্শন লিমিটেড এর চেয়ারম্যান শফিক আহমেদ (বড় মিয়া), ব্যবস্থাপনা পরিচালক লায়ন এম শফিউল আলম, বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সৈয়দ আব্দুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের তালুকদার, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বাংলা সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার ১৬ মে বেলা পৌনে ১২টায় উত্তরার বাসা থেকে তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে এই শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়। বেলা পৌনে ১২টায় মরদেহবাহী এ্যাম্বুলেন্সে করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় চিত্রনায়ক ফারুকের মরদেহ। এ সময় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে মরদেহ গ্রহণ করা হয়। পরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে রাখা হয়। নায়ক ফারুকের জলছবি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সিনেমা জগতে প্রবেশ করেন। তার প্রথম ছবিটি পরিচালনা করেন এইচ আকবর ১৯৭১ সালে। তার প্রথম ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে বলে খ্যাত কবরী। পরবর্তীতে কবরী ও ফারুক জুটি একসময় খুবই জনপ্রিয় ছিল। তার প্রথম ছবির পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। উপহার দিয়েছে একের পর এক জনপ্রিয় সিনেমা। নায়ক ফারুক কাজ করেছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি পরিচালক খান আতাউর রহমান, নারায়ণ ঘোষ মিতা, স্বপন ঘোষ, আজিজুর রহমান, আমজাদ হোসেন সহ আরো গুনী পরিচালকদের সাথে। এইসব গুনী পরিচালকদের হাত ধরেই তিনি উপহার দিয়েছেন অনেক কালজয়ী সিনেমা। যা বাংলার সিনেমা প্রেমিদের মাঝে হিরো ফারুককে চির স্মরণীয় করে রাখবে। তিনি প্রায় শতাধিকারের বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে বেশিরভাগ সিনেমাই দর্শকদের মন জয় করতে পেরেছিল। নায়ক ফারুকের উল্লেখযোগ্য কিছু সুপারহিট সিনেমার মধ্যে রয়েছে- খান আতাউর রহমান পরিচালিত আবার তোরা মানুষ হ, আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত সারেং বৌ, প্রমোদ কর পরিচালিত সুজন সখী ও দিন যায় কথা থাকে, আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে ও নয়নমনি, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত পালকি, চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত পদ্মা মেঘনা যমুনা, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত জীবন সংসার, নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত আলোর মিছিল, সাহেব ও লাঠিয়াল, আব্দুস সামাদ পরিচালিত সূর্যগ্রহণ, তাহের চৌধুরী পরিচালিত মাটির মায়া, বেলাল আহমেদ পরিচালিত নাগর দোলা, শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত এভিম, আওকাত হোসেন পরিচালিত বন্ধু আমার সহ আরো অনেক ছবি। নায়ক ফারুকের পুরস্কার ও সম্মাননা বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় ভাবে চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষ চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য সম্মাননা দিয়ে থাকে। সেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার জন্য নায়ক নায়িকাদের স্বপ্ন থাকে। বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই খ্যাত নায়ক ফারুক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় ১৯৭৫ সালে। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত বিখ্যাত লাঠিয়াল সিনেমায় অভিনয় করার কারণে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্র ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। লাঠিয়াল সিনেমাটি ছিল মিয়া ভাই সবচেয়ে ব্যবসা সফল সিনেমার একটি। চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আজীবন সম্মাননা প্রধান করে থাকে। নায়ক ফারুক চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা পান ২০১৬ সালে। তাছাড়া আকবর হোসেন পাঠান দুলু ওরফে ফারুক বেসরকারী আরো অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছে। আকবর পাঠান ফারুক আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। তিনি চলচ্চিত্র আসার আগেই রাজনীতিতে জড়ান। রাজনীতির মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। রাজনীতির শুরুতেই নায়ক ফারুক বাংলাদেশর প্রাচীনতম রাজনীতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি ঢাকা ১৭ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা ঘোষণা করেন ১৯৬৬ সালে। তখন ফারুক ছাত্র অবস্থায় আন্দোলনে যোগ দেন। সেই সময় আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে অনেক মামলা শিকার হতে হয়েছিল তাকে। অনেকেই হয়তো জানেন না নায়ক ফারুক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের টকবকে যুবক ফারুক নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে যাপিয়ে পড়েছিলেন এবং দেশকে মুক্ত করেছিলে পাক হানাদার বাহিনী হাত থেকে। ফারুক অভিনীত ছবির জনপ্রিয় গানগুলো হলো: বন্ধু আমার, ওরে ও নিল দরিয়া, ভালোবাসি ভালোবাসি, সব সখিরে পার করিতে নিবো আনা আনা, তুমি আমার মনের মাঝি, চোখের জ¦লে আমি, আমি সাহেব নামের এক গোলাম, দুনিয়া বড়ই যে গোলমাল সহ আরো অনেক জনপ্রিয় গান রয়েছে। গ্রাম বাংলার ছবি মানেই ফারুক। যেকোনে চরিত্রে ফারুক তার অভিনয় শৈলী দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। জীবদশ্মায় তিনি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে গেছেন তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনীতিক সংগঠনগুলো গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মিয়া ভাই নামে পরিচিত ফারুকের মৃত্যুতে চলচিত্র অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। চট্টগ্রামের মানুষের প্রতি তার মায়া মমতা ভালোবাসা ছিল অপরিসীম এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক ও চলচিত্রের অভিভাবক। মিয়া ভাই তিনি শুধু একজনই।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla