মাহমুদুল হক আনসারী
মানুষ দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মানুষকে আল্লাহ তাআলা ভালোবেসে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে দুনিয়ার জমিনে সৃষ্টি করেছেন। অপরাপর সমস্ত সৃষ্টি মানবজাতির কল্যানেই সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ সমাজবদ্ধভাবে চলতে শিখেছে। অন্যসব প্রাণীর তুলনায় মানবজাতি সুশৃংখল। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মাধ্যমে মানবজাতির বসবাস। সুখ-শান্তি, হাসি-কান্না, ব্যাথা-বেদনা নিয়ে মানবজাতির জীবন। একে-অপরের কল্যাণ ও সাহায্য ছাড়া চলতে বাঁচতে পারেনা। শিশু থেকে কিশোর, যুবক বৃদ্ধ বয়স তথা জীবনের শুরু আর শেষকাল মানুষ মানুষের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেনা। মানুষ শ্রেষ্ঠ আবার একজন অন্যজনের সহযোগীতা ছাড়া চলতে মোটেও পারেনা এটিই বাস্তবতা।
পৃথিবীর সৃষ্টি মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষ পৃথিবীর জীবন উপভোগ করবে। সামান্য সময় এখানে অস্থায়ী ঠিকানায় জীবন কাটাবে। স্বল্প সময়ের দুনিয়ার জীবনে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অর্থ, টাকা, পয়সার দরকার পড়ে। ব্যক্তি জীবন থেকে পারিবারিক জীবন পর্যন্ত পদে পদে নানা বয়স আর সময়ে অর্থ দরকার হয়। সেই অর্থ মানুষকে কর্মের মাধ্যমে মেধা, শক্তি যোগ্যতা দিয়ে অর্জন করতে হয়। কয়েক দফা মানুষের জীবনের মধ্যে মানব সমাজের জীবন। বয়সের কারণে মানুষের রোগব্যাধির সৃষ্টি হয়। রোগ ছাড়া পৃথিবীতে মানুষ নেই। নানা প্রকারের রোগের জন্ম হয় মানুষের দেহে। এর জন্য পৃথিবীতে চিকিৎসাশাস্ত্র তৈরী হয়েছে। ওষুধপত্র আল্লাহ মানুষকে সেবন করার জন্য ক্ষমতা দিয়েছে। চিকিৎসার জ্ঞান বুদ্ধি তিনি মানুষকে দিয়েছে মানুষ মানব সমাজের মানবীয় রোগ ব্যাধির জটিলতা থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে, ওষুধ তৈরী হয়েছে। চিকিৎসার ডাক্তার তৈরী হয়েছে। মানব সমাজকে রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছু সমাজবিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে তৈরী করেছে।
দুনিয়ার বিজ্ঞান এখন মানবজাতির ইহকালীন কল্যাণে নিয়মিতভাবে অবদান রাখছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান সমাজের রোগ নির্ণয় আর সুস্থতার জন্য বিরাট একটি সফলতা। নানা বয়সের মানব সমাজে রোগ মুক্তির নানা চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিস্কার। ফলে রোগ শোক থেকে সমাজ নানাভাবে চিকিৎসকের সাহায্য পরিত্রান পাচ্ছে।
তবে চিকিৎসা সেবা পেতে প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন পড়ে। রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা, সুযোগ সুবিধা সামান্য। জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসার জন্য বাহু অর্থের যোগান দিতে হয়। ছোট খাট অসুখ বিসোখের কিছু রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কর্মসূচী আছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শহর ও গ্রাম পর্যন্ত মোটামোটিভাবে দেখা যায়। সেখান থেকে দরিদ্র জনগণ বিনামূল্যে স্বল্প অর্থে চিকিৎসা পায়। কিন্ত বড় বড় রোগ ব্যাধী, চিকিৎসা পেতে জনগণের কষ্টের কোনো শেষ নেই। সরকারী মেডিকেল ও হাসপাতালে জটিল দূরারোগ্য রুগীদের যতœ সহকারে চিকিৎসা হাসপাতালে জটিল দুরারোগ্য রুগীদের যতœ সহকারে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ অহরহ। এসব হাসাপাতালে কর্মরত ডাক্তারগণ আন্তরিকভাবে রোগীদের চিকিৎসা দেননা বলে যথেষ্ঠ অভিযোগের কথা ভূক্তভোগীদের মুখে শুনা যায়। মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা দীর্ঘ লাইন ধরে সরকারী চিকিৎসা গ্রহণের জন্য ডাক্তারদের দ্বারস্থ হয়। কেউ পায় কেউ না পেয়ে চিন্তার ভাজ নিয়ে ফিরে আসে।
তবুও রোগী তার চিকিৎসা পেতে চায়। রোগের নির্ণয় আর চিকিৎসা ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। লিভার, কিডনী, ডায়াবেটিস হাট ইত্যাদির জন্য রোগী মানুষ ভালো ও আধুনিক চিকিৎসা পেতে দৌড় ঝাপের কোনো কমতি নেই। দেশে যে পরিমাণ অভিজ্ঞ ডাক্তার আছে, তার তুলনায় রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নানা বয়স আর পেশার মানুষের মধ্যে নিত্য নতুন জটিল ও কঠিন কঠিন রোগ ধরা পরছে। সে তুলনায় দেশের চিকিৎসা অনেকভাবে পিছনে রয়েছে।
চিকিৎসকের নেইমপ্লেট যোগ্যতা, কাগজে পাত্রে অনেক থাকলেও বাস্তবে ভুক্তভোগীরা মানুষ সে উপকার পায়না বলে শুনা যায়। চিকিৎসা সেবাটি মানব কল্যাণে পরিচালিত হওয়া দরকার। একজন মানুষ যখন রোগে কাতর হয়ে যায়, তখন ডাক্তারের নিকট যেতে বাধ্য হয়। সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকার জন্য যাওয়া। সাধ্যমতো টাকা পয়সা খরচ করে তিনি চিকিৎসা পেতে আশা করে। বাস্তবে দেশের চিকিৎসার হালচাল অন্য প্রকৃতির। চিকিৎসার জন্য যেমনিভাবে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন হয় আবার ভূল চিকিৎসার ভয়ভীতিও কাজ করে রোগীর মধ্যে অহরহ। বলা যায় একজন চিকিৎসক সুবিধা মত একজন রোগী পেলে তার যদি অর্থ খরচ করার ক্ষমতা থাকে, তাহলে ডাক্তারের আনন্দের শেষ নেই। প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় ল্যাব টেস্টের তালিকা হবে ১৫-২০টি পর্যন্ত ল্যাবের তালিকা হবে, যত নামীদামী ব্র্যান্ডে ল্যাব পাওয়া যাবে সেখানে। ৪০-৫০ হাজারের আরো বেশী রোগীর টেস্ট করাতে লাগবে। বড় ধরনের কমিশন বাণিজ্য বসাবে মাননীয় ডাক্তার সাহেব।
এভাবে আমাদের দেশের দেশীয় চিকিৎসার হালচাল। পরীক্ষায় পরীক্ষায় রোগীর রোগ এ কয়দিনে আরো বেড়ে যায়। টেষ্টের পরে রিপোর্টে দেখা যায়, ডাক্তার কোনো রোগই নির্ণয় করতে পারলো না, বেচারা রোগীর অর্থ সময় ভোগান্তি সবই গেলো। মোটেও চিকিৎসা পেলোনা , রোগীর মাথায় হাত। এ হলো আমাদের দেশের চিকিৎসা প্রাপ্তির খরচ।
মানব কল্যাণ আর সেবা দেয়ার জন্য ডাক্তারী পেশা হওয়া দরকার। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে রোগীর অভিযোগের মধ্যে শুনা যায় অতিরিক্ত ফি আদায়। রোগীকে ভালোভাবে না দেখা পর্যন্ত সময় না দেয়া, রোগীর অর্থ থেকে ল্যাবের কাছ থেকে কমিশন খাওয়া। রোগীর সাথে সুন্দর ব্যাবহার না করা। সরকারী কমিশন খাওয়া। রোগীর সাথে সুন্দর ব্যাবহার না করা। সরকারী চেম্বার না করে প্রাইভেট চেম্বার করা। বিদেশী মেডিকেলের সাথে চুক্তি করে দেশের চিকিৎসা খাত দুর্বল করে অন্য দেশে রোগীদের চিকিৎসার জন্য যেতে বাধ্য করা। আরো অনেক ধরনের অভিযোগ সরকারী বেসরকারী ডাক্তার, ল্যাব ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে শুনা যায়। সরকারী মেডিকেলে কর্মরত ডাক্তার নার্স ও অফিস স্টাফদের ব্যবহারে কোনো ধরনের শালীনতা পাওয়া যায়না। জনগনের টেস্টের টাকায় সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এসব জনগণের সেবা করা একেক জন মালিক ও কর্তার ভূমিকায় তাদের ব্যবহার নিতদিন জনগণ দেখছে। তাদের খুশি ও ইচ্ছেমতো তারা চলে। আইন বিধান দায়িত্ব বলতে তাদের চরিত্রে দেখা যায় না। এসব আচরণ মানসিকতার পরিবর্তন আদৌ কি হবে? দিন দিন এসব সংস্কৃতি বাড়ছে। জনগণ নানা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। কঠোর ও দায়িত্বশীল কর্মপন্থার মধ্যে ডাক্তারদের বলতে বাধ্য করতে হবে। তাদের পদ পদবীর চেয়ারের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। জনগণের জন্য স্বাস্থ্য সেবাকে সহজ ও সুলভমূল্য পাওয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায্য অর্থে চিকিৎসা পাওয়া এবং সঠিক চিকিৎসা ও চিকিৎসক নিয়োগ বণ্টন কার্য্যকর করতে হবে। ডাক্তার ফি নির্ধারণ করতে হবে, জনগণের আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে। ল্যাবের টেস্ট তালিকা সব ল্যাবে প্রচারিত সরকার নির্ধারিত হতে হবে। চিকিৎসাখাত জনগণের রাষ্ট্রীয় মৌলিক ও নাগরিক অধিকার। রাষ্ট্র ক্ষমতার মালিকদের বিরুদ্ধে এ বিষয়টি জনস্বার্থে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। এ খাত থেকে সব ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। জনগণকে নাগরিক জীবনে সুস্থ জীবন যাপন এবং বেঁচে থাকার ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। চিকিৎসার নামে অপ-চিকিৎসা বন্ধ হউক। কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হউক। গরীব ও দুস্থ রোগীদের সার্বিক চিকিৎসা প্রাপ্তি সরকারী বেসরকারীভাবে পাওয়ার অধিকার বাস্তবায়িত হউক।