মো. আবদুর রহিম
বাঙালি জাতির আরাধ্য সন্তান সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সামরিক জ্যান্তার হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এর পূর্বে ৭ মার্চ ১৯৭১ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘ঘরে ঘরে দুর্গ’ গড়ে তুলে যার যা কিছু আছে তা দিয়ে শত্রুর মোকাবিলার আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই থেকে বাংলার ঘরে ঘরে মুক্তির জন্য যুদ্ধ, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা প্রস্তুত গ্রহণ করতে থাকে। পাকিস্তানী হানাদার সামরিক জ্যান্তা ২১ মার্চ ১৯৭১ বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু করে। তাদের প্রতিরোধ করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার দামাল ছেলেরা। স্কুল-কলেজ বিশ^বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ছাত্ররা যোগ দেন মুজিব বাহিনীতে, আর এদেশের কৃষক, শ্রমিক মেহনতি মানুষ, তাদের ছেলেরা মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করে। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলে দীর্ঘ ৯ মাস। ‘মুজিব নগর’ সরকারের অধীনে যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানী দখলদার-হানাদার বাহিনী পরাজয় বরণ করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। সেই থেকে আমরা স্বাধীন। আমাদের দেশ ‘বাংলাদেশ’। আমাদের পরিচয় আমরা বাঙালি। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সনে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তাদের অধিকাংশই শহীদ হন। যারা বেঁচে যান তারা গাজী হয়ে স্বাধীন দেশের পতাকা হাতে নিয়ে স্বাধীন জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট সব মুক্তিযোদ্ধারা হাতের অস্ত্র সমর্পণ করে ফিরে যান যার যার ঘরে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন যায়। নির্যাতিত হন ২ লক্ষ ৬৯ হাজার মা-বোন। এক কোটি মানুষ হয়েছিল শরণার্থী। দেশে থাকা ৩ কোটি মানুষ হারায় তাদের ঘর বাড়ি সহায় সম্পদ। অবর্ণনীয় দুঃখ যন্ত্রণা নির্যাতনের ফসল বাংলার স্বাধীনতা। এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যায়। কারণ সেই থেকে দেশ দখল করে নেয় ১৯৭১ এর পরাজিত আলবদর, আল শামস ও রাজাকাররা। ফলে নিজ দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তি হয়ে পড়ে অসহায়। ১৯৪৭ সালের মত বাংলাদেশের বাঙালিরা ২১ বছর পরাজিতদের কাছে থাকে বন্দি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বাধীন বাংলাদেশ ফিরে পায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার। আবার ঘুরে দাঁড়ায় জাতি। লড়াই-সংগ্রাম, রক্ত আর ত্যাগে বাংলাদেশে ফিরে আসে গণতন্ত্র। মানুষ খুঁজে পায় ভাত ও ভোটের অধিকার। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এ সময়টা ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। ২০০১ থেকে ২০০৮ এ দেশ আবার চলে যায় অন্ধকারকূপে। ২০০৯ থেকে বাংলাদেশ আবার ফিরে পায় আপন ঠিকানা। এ সময় থেকে ১৯৭১ এর সেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে পায় বীরের মর্যাদা। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা, চিকিৎসা, সন্তানদের চাকরির সুবিধা, মারা যাওয়ার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, অস্বচ্ছলদের জন্য তৈরি হয় বীর নিবাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন দেশ ও জাতির আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর হাত ধরেই সামনে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। দেশের গরীব মানুষ পেয়েছে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের গ্যারান্টি। দেশের ভূমিহীন, গৃহহীনরা পাচ্ছে আশ্রয়, ঘর ও জায়গা, অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধারা পেল ‘বীর নিবাস’। সাবাস বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। পিতার পথ ধরে তিনি দেশকে উন্নয়নশীল দেশ, উন্নয়নের রোল মডেল, আর বিশ^বাসীর দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এক বিষ্ময়। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ খ্যাত বাংলাদেশ উল্কার বেগে ধাপিয়ে চলছে মহাসড়ক ধরে। এই বাংলার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা প্রতিবন্ধী সবাই পেয়েছে বাঁচার অধিকার। বাংলাদেশ আজ স্বনির্ভর। বিশ^নেতার চেয়ারে বঙ্গবন্ধু কন্যা। বিশে^র সকল শক্তি তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে। দুর্যোগ মহামারি, দুর্ভিক্ষ কোন কিছুই বাংলাদেশকে থামাতে পারছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মজবুত ও সুদৃঢ়। এ অবস্থায় যখন বাংলাদেশ তখন ১৯৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বীর বেশে ‘বীর নিবাসে’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন, বললেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবন যাপন করবে না। একজন মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করবে না, আমি জাতির পিতার কন্যা ক্ষমতায় থাকতে এটা কখনো হতে পারে না।’ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রি. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ জেলায় অস্বচ্ছ¡ল প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ৫ হাজার ‘বীর নিবাস’ এর চাবি হস্তান্তর করেন। ‘বীর নিবাসে’ ২টি শয়নকক্ষ, ১টি বসার ঘর, ১টি রান্নাঘর, একটি করিডোর সহ এক তলা বিশিষ্ট প্রতিটি ‘বীর নিবাস’। ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় নির্মিত প্রতিটি ঘর। প্রতিটি ঘর জাতীয় পতাকার রং লাল সবুজে করা। প্রতিটি ঘরের সাথে ১টি নলকূপ, একটি বাথরুম, গবাদি পশু ও হাঁস মুরগির শেড এবং সিমেন্টের উঠান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২০২১ সালের ১৬ মার্চ, ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের জন্য ৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা প্রকল্প অনুমোদন করেন। বর্তমানে ১৭ হাজার ৬৬০টি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ‘বীর নিবাস’ দেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মালিক ভাতা ২০ হাজার টাকা। তাদের উৎসব ভাতা, বিজয় দিবস ভাতা, ও বৈশাখী ভাতা প্রদান করে সরকার। জাতির পিতার কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই বাংলাদেশের ওপর আর কারও কালো থাবা যেন না পড়ে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যাদের ঘরবাড়ি নেই এবং মানবেতর জীবন যাপন করছিল সেটা আমাদের জন্য লজ্জ্বার ব্যাপার। তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করে তাদের জীবন-জীবিকা এবং চিকিৎসা যাতায়াত সহ নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ প্রিয় প্রজন্ম আপনি দেশের গর্বিত নাগরিক। যে শিশুটি স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করে সেও গর্বিত নাগরিক। পরাধীন জাতির কোন ইজ্জত থাকে না, স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারেন না। আমরা সবই পারি। আমরা এদেশকে গড়ে তুলবো প্রজন্মের স্বার্থে। এদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী থাকবে না, স্বাধীনতা বিরোধী থাকবে না। এদেশে কোন জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বাসস্থান হবে না, এদেশ হবে স্বাধীনতাকামী, স্বাধীনতা চেতনাধারী, প্রকৃত বাঙালির বাংলাদেশ। এ প্রত্যয় নিয়ে সকলকে দেশ গড়ে তুলতে হবে। যতদিন দেশ থাকবে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে Ñ ততদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ।