ঢাকা অফিস
পান্না দাশ সুমি’র মা- বাপের করুণ আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। সুমি’র মৃত্যু রহস্য নিয়ে নানান কথা আসছে মা বাপের কানে। সুমির শাশুড় পক্ষের লোকজন আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিলেও দিন যতই যাচ্ছে ততই মৃত্যের ঘটনা নিয়ে অনেক তথ্য আসছে সুমির পরিবারে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন মাছুয়া ঝর্ণা লেইন এলাকার স্বপন কান্তি দাশের মেয়ে পান্না দাশ সুমিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী অনুজ কর্মকার(৩২), শ্বাশুড়ি আল্পনা রায়(৬০), শ্বশুড় অর্জুন কর্মকারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানায়, গত ১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ২ ডিসেম্বর ভোর ৪টায় ঢাকার বাড্ডা থানাধীন মেরুল বাড্ডার ১৬ নং রোডের ১৮ নং বাড়ির ৬ তলার একটি ভবনে সুমিকে হত্যা করে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তারা। অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা করতে গেলে প্রভাবশালীদের চাপে পুলিশ হত্যা মামলা নেয়নি। পুলিশ আসমিদের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় নিহত গৃহবধুর ভাই বাদী হয়ে মহানগর হাকিম আদালত-৮ ঢাকা এ সঞ্জয় দাশ বাদী হয়ে গত ১১ ডিসেম্বর তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, গৃহবধু পান্না দাশ সুমি স্কুল ও কলেজের একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ২০১৭ সালে মার্স্টাস ডিগ্রী পাশ করে। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধিন অক্সিজেন এডুকেশন এ্যামপ্লয়ী হাউজিং সোসাইটির ভবনে ঠিকানায় অনুজ কর্মকারের সাথে বিয়ে হয়। সে সময়ে ঢাকায় হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লি. এর মার্কেটিং এ চাকুরী করতেন সে। বিয়ের কিছুদিন পর পান্না দাশকে সে ঢাকায় নিয়ে যান।পান্না দাশ ৫ মাসের আন্তঃসত্তা হয়ে পড়লে অমানবিক নির্যাতন শুরু করে সারাদিন বিভিন্ন মেয়ের সাথে ঘুরে ফিরে অর্ন্তরঙ্গ ছবি মোবাইলে ধারণ করে স্ত্রী পান্নাকে দেখাতে থাকে। স্বামী সুমিরে পেটে লাথি মেরে পেটের বাচ্চা নষ্ঠ করতে চাইলে চট্টগ্রামে বোনের বাসায় চলে আসে পান্না দাশ। বোনের বাসায় পান্না দাশ কন্যা সন্তানের জন্ম নেয়। দীর্ঘদিন স্ত্রী ও মেয়ের কোন খোঁজ খবর নেয়নি স্বামী অনুজ কর্মকার । আবারো আর নির্যাতন করবে না বলে স্বামী অনুজ কর্মকার স্ত্রী পান্না দাশ সুমিকে ফের ঢাকায় নিয়ে যান।
২০২১ সালের ২০ এপ্রিল স্ত্রী পান্নাকে গাছের একটি পাট্ট্রা দিয়ে আঘাতে হত্যার চেষ্ঠা চালালে তৎ সময়ে বাড্ডা থানায় অভিযোগ করলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় থানা মামলা না নিয়ে আপোষ মিমাংসা করার কথা বলে পাঠিয়ে দেয়। এরপর থেকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। মেয়েকে নির্যাতনের খবর পেয়ে গত ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পান্নার বাসায় মা রুপশ্রী দাশ ও ভাই বোন জয়া দাশ গেলে আসামিরা বাসায় অবস্থান করতে দেখে। তাদেরকে দেখে আসামিরা আরা বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতন করে। মামলার বাদী সঞ্জয় দাশ জানান, তার বোনকে তারা হত্যা করেছে, আমরা থানায় হত্যা মামলা করতে গেলে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় থানা হত্যা মামলা না নেয়ায় আমরা আদালতে হত্যা মামলা করেছি। পরিকল্পিত হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের শাস্তির দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী দিপঙ্কর ঘোষ বলেন, ঘটনার আলামত ও অবস্থানে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড।