মাহমুদুল হক আনসারী
ক্রমেই রোহিঙ্গা সংকট প্রকট হচ্ছে। মায়ানমার থেকে আগত উদ্ভাস্ত এসব জনগণ চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের জন্য এখন গলার কাটা ছাড়া আর কিছুই নয়। বাংলাদেশ মূলত উদ্ভাস্ত এসব রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল। আশ্রয় দেয়ার উদ্দেশ্য থেকে যাওয়ার ষড়যন্ত্র নয়। বাংলাদেশের যে অঞ্চলে তাদেরকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে সেটা বৃহত্তর চট্টগ্রামের একটি অঞ্চল। কক্সবাজার টেকনাফে বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদেরকে আশ্রয় হিসেবে থাকতে দেয়া হয়েছে। মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তা হতে রক্ষার জন্য রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো গন্তব্য ছিল না। যার কারণে ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট দলে দলে তারা বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে পড়ে।
সে থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা উদ্ভাস্ত কক্সবাজার জেলায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের পরিবার পরিজন সন্তান সন্ততি আত্মীয় স্বজন সকলকেই নিরাপদে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের জন্য বাংলাদেশের প্রশাসন , আইন শৃংখলা বাহিনী নানা সংস্থার অব্যাহত সাহায্য সহযোগিতা তদারকী চলমান রয়েছে। তাদের থাকা খাওয়া বিদ্যুৎ পানি মানবীয় সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের সরকার। তাদের পাশাপাশি কয়েক হাজার বিদেশী সাহায্য সংস্থা এবং বাংলাদেশী নানা ধরনের মানবিক সংগঠন উদ্ভাস্ত শিবিরে কাজ করে যাচ্ছে। এসব উদ্ভাস্ত মানুষগুলোর কারণে সে জেলার বহু কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের ভিটাবাড়ি হারিয়েছে। পাহাড় জঙ্গল টিলাভূমি ন্যাড়া হয়ে গেছে। সেখানকার পাহাড়ের সৌন্দর্য আর মাটি সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবুও সে অঞ্চলের মানুষ এবং বাংলাদেশের সরকার তাদেরকে অতি আদর যত্নের মধ্যে সুন্দর সুষ্ঠুভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
এর মধ্যেও অনেক উশৃংখল রোহিঙ্গা নাগরিক প্রায়সময় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মধ্যে লিপ্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। অনেক রোহিঙ্গা নারী শিশু সমুদ্রপথে দেশের বাইরে পাচার হওয়ার কথা সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। অনেকেই আবার পালিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাতে ঢুকে পড়ছে। দালালের মাধ্যমে তারা মোটা অংকের টাকা খরচ করে নাগরিকত্ব সনদ এনআইডির কপি জন্মনিবন্ধন সনদ জাল ভাবে তৈরি করে নিচ্ছে। তাদের অনেক সন্তান সন্ততি শিশু কিশোর পালিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় জনগণের মধ্যে মিশে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন মাদ্রাসা এতিমখানা ও হেফজখানায় বাংলাদেশী ছাত্রদের মত ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশের কওমী মাদ্রাসা নামের খ্যাত বেসরকারী পাবলিক মাদ্রাসাগুলোতে রোহিঙ্গা ছাত্র ছাত্রী অনায়াসেই ঢুকে পড়ার সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া যায়। তাদেরকে যেভাবে নির্দিষ্ট ক্যাম্প এবং এলাকাতে সীমাবদ্ধ রাখার এবং থাকার কথা ছিল সেটা এখন অনেকটা অনিরাপদ ।
এ অবস্থায় রোহিঙ্গা উদ্ভাস্ত জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য এবং জনগণের জন্য একটি মারাত্মক ক্যান্সারের পর্যায় পৌছে গেছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্র মানবাধিকার সবকিছুর জন্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মহাসংকট হিসেবে ভাববার সময় এসে গেছে। কোনোভাবেই বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে এভাবে রাখা সম্ভব নয়। তাদেরকে মায়ানমারের কাছে ফেরত দেয়া ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো পদ দেখছিনা। বাংলাদেশের সরকার পার্শ্ববর্তী দেশ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাথে বারবার কথা বলছে রোহিঙ্গাদেরকে কীভাবে দ্রæত সময়ে তাদের নিজ দেশে পাঠানো যায় সেটা বিভিন্ন ফোরামেও বাংলাদেশ খুব গুরুত্ব এবং জোরালো ভাবে তুলে ধরছে। মায়ানমার সরকারের নানা ধরনের ছলছাতুরী বাংলাদেশ বুঝতে পেরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমার বাংলাদেশ বর্ডারে সৈন্য এবং গোলাবারুদ মওজুদ করে আতঙ্ক সৃষ্টির পায়তারা চালাচ্ছে। পুনরায় মায়ানমারের সংখ্যালঘু নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ ব্যাকের ষড়যন্ত্র করছে বলেও সচেতন মহল মনে করছে। এ অবস্থায় মায়ানমারের সামরিক সরকারকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া বাংলাদেশের উচিত হবেনা। বাংলাদেশের আইন শৃংখলা গনতন্ত্র সুশাসন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত ছাড়া বিকল্প কোনো পথ এ মুহুর্তে দেখছিনা। প্রয়োজন চীন রাশিয়া ভারত এবং অপরাপর আন্তর্জাতিক ক্ষমতাধর দেশকে হাতে নিয়ে শক্তিশালী পরিকল্পনা গ্রহণ করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনই বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। তাদের কারণে বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের জনগণ নিত্যনৈমত্তিক হয়রানি এবং ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অফিস আদালত পাড়ায় রোহিঙ্গা আতঙ্ক বিরাজ করছে। চট্টগ্রামের জনগণকে নানাভাবে ব্যঙ্গাত্মক উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা সম্বোধন করে গালি গালাজ শুনতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে এ অঞ্চলের জন্মনিবন্ধন , ভোটার এনআইডি , চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট পেতে স্থানীয় নাগরিকদেরকে অনেকগুলো জমিজমার কাগজ সরবরাহ করতে হচ্ছে। মাতাপিতার এনআইডির কপির সাথে জমিজমার দলিল পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। একজন ভোটার অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন প্রত্যাশী নাগরিককে প্রশাসনের স্তরে স্তরে নানাভাবে হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
পাসপোর্ট অফিসে এমনিতেই নানা ভোগান্তির কারণে বই পেতে যন্ত্রণার শেষ নেই। এর মধ্যেও চট্টগ্রামের নাগরিকদের জন্য অতিরিক্ত কাগজ পত্র প্রত্যয়ন পত্র সরবরাহ ছাড়া পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করা হয়না। আবেদন গ্রহণ করার পর পুলিশি তদন্তের নামে নানাভাবে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয় চট্টগ্রামের আপামর জনগণকে। যাদের এনআইডি রয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে এনাআইডি প্রাপ্ত হয়েছে , সে এনআইডি পাওয়ার পূর্বে তার সমস্ত ডাটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে ছিল এবং আছে থাকার কথা। এর পরেও পাসপোর্টের বেলায় কেন পুলিশ তদন্তের নামে পাসপোর্ট গ্রহীতাকে হয়রানি করা হবে সে বিষয়ও বোধগম্য নয়। এসব জটিল জনবিরোধী নাগরিকবিরোধী সংবিধান বিরোধী কলাকানুন তুলে নিতে হবে। জনগণের জন্য সহজ এবং সরলপন্থা প্রশাসনকে বাস্তবায়ন করতে হবে। অহেতুক হয়রানি এবং ভোগান্তির মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে নানাবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড হতে বিরত রাখার ষড়যন্ত্র কোনো অবস্থায় জনগণ গ্রহণ করবেনা।
রোহিঙ্গাদের জন্য এদেশের জনগণ কেন ভোগান্তির শিকার হবে। যাদের বাপ দাদার জন্ম এখানে । যারা এখানে ভোটার যুগ যুগ ধরে । যাদের সন্তানরা জন্ম এখানে নিয়েছে স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছে জন্মসূত্রে বাংলাদেশি।এসব নাগরিক পরিবার জনগণ সরকারের নানা ধরনের নিয়মনীতির মধ্যে ফেলে কেনো তাদেরকে হয়রানী করা হবে সেটার উত্তর দিতে হবে। জনগণের নাগরিক সেবা প্রাপ্তিতে কোনো ধরনের ভোগান্তি সহ্য করা হবেনা। রোহিঙ্গাদেরকে কোনো নাগরিক তাদের দেশ বার্মায় ফেরত পাঠাতে পারবেনা। তাদেরকে ইচ্ছে করে চট্টগ্রামের কোনো নাগরিক রেখেও দিতে পারবেনা। যা করার তা সরকারকেই করতে হবে। সরকার তাদেরকে বাংলাদেশে চট্টগ্রামের মাটিতে আশ্রয় দিয়েছে প্রত্যাবর্তনও সরকারকেই করতে হবে। এজন্য চট্টগ্রামের কোনো নাগরিক নাগরিক সেবা পেতে ভোগান্তি গ্রহন করা হবেনা। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের মর্যাদা রাজধানীর পর। এ অঞ্চলের মানুষের সম্মান নাগরিক অধিকার পরিপূর্ণভাবে জনগণের প্রাপ্য। শিক্ষিত কর্মমুখী যুবকদেরকে চট্টগ্রামের শিল্পকারখানা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সবদিক বিবেচনা করে চট্টগ্রামের আইনশৃংখলা রক্ষা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদী নালা পাহাড় পর্বত সংরক্ষণের যথাযথভাবে ব্যবস্থা করা হোক। বাংলাদেশের সচেতন জনগণের প্রত্যাশা সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন যেনো দ্রুতসময়ে সম্পন্ন হয়।