1. banglapostbd@gmail.com : admin :
  2. admin@purbobangla.net : purbobangla :
শোক দিবস: জাতীয় জীবনের কালো অধ্যায় - পূর্ব বাংলা
সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
ইউনেস্কো ক্লাব এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত ক্ষমতার সামনে দাঁড়িয়ে সত্য বলার সাহস থাকাই হলো সাংবাদিকতা ক্ষমতার সামনে দাঁড়িয়ে সত্য বলার সাহস থাকাই হলো সাংবাদিকতা শহীদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবর জিয়ারত করলেন বিএনপি নেতা বিপ্লব মাওলানা শাহ সুফি মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন মমিন (রঃ) এবং কবরবাসী স্বরণে ১ম বার্ষিক দোয়া মাহফিল ইউনেস্কো ক্লাব এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন বায়েজিদ বোস্তামী ও মালেক শাহ (র.) ওরশ সম্পন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ফোরকানিয়া মাদরাসা শিক্ষক সমিতির কার্যকরী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত  আল্লামা আবুল খাইর ফাউন্ডেশন ২৬৫ জন রোগীর ছানি অপারেশন করালেন

শোক দিবস: জাতীয় জীবনের কালো অধ্যায়

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২
  • ১৭৫ বার পড়া হয়েছে

মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারী
 ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং সরকার উৎখাতের অভ্যুত্থান ছিল সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র ও গভীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ। মূলত, আন্তর্জাতিক একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত রাষ্ট্র পরিকল্পনা মোটেও গ্রহণ করতে পারছিল না। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা যেখানে জাতিধর্ম-নির্বিশিষে মানুষ নাগরিকতার পরিচয়ে সমানাধিকার লাভ করবে, অর্থনৈতিক শোষণ ও বৈষম্য থেকে মুক্ত থাকবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুসহ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে ৯ জন, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ মণির পরিবারের ১৩ জন, বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল উদ্দিন আহমেদ এবং সাভারে ১১ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ মোট ৩৪ জন প্রাণ হারালেন সশস্ত্র ‘অভ্যুত্থানকারী’দের মধ্যে যারা ঘটনাস্থলে অবস্থান করেছিল তাদের হাতে। এদের পেছনে ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া বাহিনীসহ নানা ধরনের অস্ত্রে সজ্জিত অনেকেই অংশ নিয়েছিল।

যাদের তদারকিতেই এসব নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড একের পর এক সংঘটিত করা হয়। এদেরও পেছনে সেনানিবাস বা এর আশপাশে আরও অনেকেই ছিলেন যারা দূর থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেছিল। কেননা এটি ছিল একটি পরিকল্পিত অভ্যুত্থান যার পেছনে শুধু সামরিক সদস্যরাই নয়, বেসামরিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং আন্তর্জাতিক নানা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ছিল বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে। তবে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল, পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল সামরিক বাহিনীর কর্মরত জুনিয়র কর্মকর্তাদের।

এর বাইরেও হয়ত আরও নানা ধরনের প্রস্তুতি ছিল যাতে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে অংশগ্রহণকারীদের নির্বিঘ্নে পালানোর সুযোগ পায়। হত্যার মূল টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৩২ নম্বরকে নিয়ন্ত্রণে নিলে গোটা বাংলাদেশকে তাদের আয়ত্তে আনা মোটেও কঠিন হবে না সেটি তারা ভালো করেই জানত। আবার একইভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে না পারলে পুরো অভ্যুত্থানই ব্যর্থ হতো সেটিও তাদের হিসাব-নিকাশে ছিল। সুতরাং ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কাউকেই রক্ষা পাওয়ার সুযোগ তারা দেয়নি। ঘাতকদের মধ্যে আগেই বোঝাপড়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সম্মুখে যে দাঁড়াতে পারবে তার উন্মত্ততা, পৈশাচিকতা ও নিষ্ঠুরতার মানসিকতাও পরিকল্পনাকারীরা আগেই যাচাই-বাছাই ও পরিমাপ করে ঠিক করেছিল।

সে কারণেই বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যেসব খুনি প্রবেশ করেছিল তারা নির্বিচারে সবাইকে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। এমনকি বাড়ির সহকর্মীদেরও হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল উদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে এসে পথেই পাহারাদার ঘাতকদের হাতে নিহত হন। আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ মণির পরিবারের হত্যাকাণ্ডে কেউ কেউ বেঁকে গিয়েছিলেন। কারণ সেখানে অংশ নেয়া ঘাতকরা লক্ষ্য পূরণেই বেশি মনোযোগী ছিল। সাভার থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যাতে ছুটে আসতে না পারে সেজন্য ঘাতকদের একটি বাহিনী অতর্কিতে সেখানে গুলি চালায়। ফলে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া ঘাতকদের লক্ষ্যবস্তু, উদ্দেশ্য দেখেই বোঝা যায় যে, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড একটি বড় ধরনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সম্মুখে রেখে ষড়যন্ত্রকারী মহল এই রাষ্ট্রীয় অভ্যুত্থানটি সংঘটিত করেছিল।

দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হলো এই হত্যাকাণ্ড ও অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, নানা ধরনের উপাধিও অর্জন করেছিল। সম্মুখ সারির ঘাতকদের সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া প্রাক্তন কিংবা কর্মরত কর্মকর্তা ছিলেন। নেপথ্যে যারা ছিল তাদেরও বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কেউ কেউ হয়তো পাকিস্তানে থাকার কারণে অংশ নিতে পারেনি।

১৫ আগস্ট সকালে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর অংশগ্রহণকারী, সমর্থনকারী, নিয়ন্ত্রণকারী এবং নেপথ্যের অনেক কুশীলবই বেতার ভবনে একের পর এক আসতে থাকে। বঙ্গভবন নয় যেন বেতারভবনই ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়! খন্দকার মোশতাককে তখনই সরকারপ্রধান হিসেবে বেতার থেকে ঘোষণা করা হতে থাকে। অথচ সাংবিধানিকভাবে তার সেই পদগ্রহণ করার কোনো বিধান নেই।

পাকিস্তানসহ কিছু রাষ্ট্র এবং সরকারপ্রধান খন্দকার মোশতাককে অভিনন্দন জানায়। খন্দকার মোশতাক তখনও সরকারপ্রধানের পদে শপথও গ্রহণ করেনি। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিকেলবেলায়। তার মন্ত্রিসভায় চেষ্টা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজনদেরও অন্তর্ভুক্ত করার। কিন্তু তাজউদ্দীন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামারুজ্জামানসহ অনেকে এর সঙ্গে যুক্ত হননি। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে যোগ দিলেন। স্বেচ্ছায় অংশ নেয়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ছিল বলেই জানা যায়। ঘাতকদের অনেকেই মন্ত্রিসভা গঠনে তৎপর ছিল। তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ কেউ মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। মোট ১১ জন মন্ত্রী ও ১২ জন প্রতিমন্ত্রীরূপে খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় শপথ নিলেন বা নিতে বাধ্য হলেন।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং সরকার উৎখাতের অভ্যুত্থান ছিল সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র ও গভীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ। মূলত, আন্তর্জাতিক একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত রাষ্ট্র পরিকল্পনা মোটেও গ্রহণ করতে পারছিল না। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে জাতিধর্ম-নির্বিশিষে মানুষ নাগরিকতার পরিচয়ে সমানাধিকার লাভ করবে, অর্থনৈতিক শোষণ ও বৈষম্য থেকে মুক্ত থাকবে। সে কারণে তিনি একটি আধুনিক শিক্ষানীতির দর্শনে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি শিক্ষিত, দক্ষ এবং দেশপ্রেমিক জাতিগোষ্ঠী তৈরির অপরিহার্যতা পূরণে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আধুনিক রূপদানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকেন। তবে একটি যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সম্মুখে তখন সমস্যা ছিল পর্বতসম, অর্থনীতি ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত, ব্যাংকে কোনো বিদেশি রিজার্ভ বা স্বর্ণমুদ্রা ছিল না।

এমনকি বাংলাদেশের নিজস্ব মুদ্রা নতুন করে বাজারে ছাড়তে হয়েছিল। ছিল এক কোটি শরণার্থী এবং পাকিস্তানে আটকেপড়া ৪ লাখ বাঙালির প্রত্যাবর্তন, রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, কল-কারখানা ধ্বংসপ্রাপ্ত, বিদেশের স্বীকৃতি-সাহায্যও ছিল প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য, কৃষি-অর্থনীতি তখনও ছিল মান্ধাতার পদ্ধতির। ফলে কৃষি উৎপাদন প্রয়োজনের চাইতে কম ছিল। ফলে এতসব সমস্যার মোকাবিলা করে একটি গণতান্ত্রিক আধুনিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যহীন রাষ্ট্রগঠনের চ্যালেঞ্জ ছিল খুবই দুরূহ ব্যাপার। তারপরও বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম, রাষ্ট্রচিন্তা এবং উদারবাদী রাজনৈতিক চিন্তা মানুষের কাছে ছিল একমাত্র সম্বল যা দিয়ে তিনি নতুন এই রাষ্ট্রব্যবস্থার গঠন ও পুনর্গঠন বাস্তবে রূপ দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

এর সবচাইতে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় একদিকে আন্তর্জাতিক কিছু রাষ্ট্রমহলের গোপন ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে প্রত্যাগতদের পুনর্বাসনসহ সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন বাহিনীর অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধা, অমুক্তিযোদ্ধা, প্রত্যাগত এবং নানা মানসিকতার মধ্যকার দ্বন্দ্ব, উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের লড়াই, একইসঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণকারী একটি অংশ, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বাস্তব চ্যালেঞ্জসমূহকে বুঝতে না পারার অক্ষমতার কারণে জড়িয়ে পড়ে উদ্ভট, হঠকারী, নানা বিপ্লবী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রোমান্টিকতায়।

এ ছাড়াও আরেকটি অংশ ৬০-এর দশক থেকেই চীনা বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ হয়ে নানা দল-উপদলে বিভক্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণ খুব একটা উল্লেখযোগ্য ছিল না, তারা মুক্তিযুদ্ধই বিশ্বাস করতে চায়নি। নেতৃত্বকেও তারা সমর্থন করেনি। এছাড়া ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের সমর্থনকে তারা কতগুলো উদ্ভট শব্দের মোড়কে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। এদের বেশিরভাগেরই রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উপায় ছিল শ্রেণিশত্রুকে হত্যা করার মাধ্যমে। সেই শ্রেণিশত্রু তারাই ইচ্ছামতো নির্ধারিত ও চিহ্নিত করত। এমনকি তাতে বাদ পড়েনি তাদের বিভিন্ন দল-উপদলে অংশ নেয়া অসংখ্য তরুণ-তরুণীও যাদেরকে তারা হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। স্বাধীনতা-উত্তরকালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একটি তরুণ প্রজন্ম সরকার উৎখাতে নানা ধরনের বাহিনী গঠন, মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যকারী দেশ সম্পর্কে অপপ্রচার, বিভ্রান্তি ছড়ানো, নানা ধরনের কাল্পনিক প্রচার-প্রচারণায় রাজনীতি, প্রচার মাধ্যম এবং সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার সম্পর্কে কাল্পনিক, মনগড়া অপপ্রচারে পরিবেশকে বিষিয়ে ফেলে।

একই সঙ্গে প্রতিবিপ্লবীরা গলাকাটা রাজনীতি, রাজনৈতিক নেতা হত্যা, ব্যাংক লুটপাট, থানা-পুলিশফাঁড়ি লুট, অগ্নিসংযোগ, পাটের গুদাম ও বিভিন্ন কল-কারখানায় অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অবস্থান সম্পর্কে এসব দলের কোনো উদ্বেগ বা রাজনৈতিক সংগ্রামের কোনো তৎপরতা ছিল না। ফলে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত অনেকেই এদের সঙ্গে মিশে যেতে সক্ষম হয় কিংবা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়-প্রশ্রয় নিয়ে অবস্থান করছিল।

প্রশাসনের অভ্যন্তরে অনেকেই যোগ্যতার চাইতেও অনেক বেশি প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষায় অসন্তুষ্ট ছিল, আবার পাকিস্তান মানসিকতায় লালিত কর্মকর্তারা প্রশাসনের গতিকে মন্থর করতে তৎপরও ছিল। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে কোনো কোনো গোষ্ঠী নানা বাহিনী তৈরি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরিকল্পনাও করছিল। ফলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের মন্ত্র লুফে নেয়ার মতো অনেকেই এখানে তৎপর হয়ে ওঠে। তাছাড়া রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতা অনেক বেশি থাকায় অনেক কিছুই যুদ্ধোত্তর পর্বে যথাযথভাবে তৈরি করা যাচ্ছিল না, জোগানও দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এমনকি রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতারাতি এগুলো তৈরি করাও সম্ভব ছিল না। যে দুই একটি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছিল সেগুলোও বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছিল।

রাজনৈতিক দলের মধ্যেও ইতিহাসের সেই যুগসন্ধিক্ষণে মুক্তিযুদ্ধের মতো দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয়তা যথাযথভাবে দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু যতই রাষ্ট্রনির্মাণে অগ্রসর হচ্ছিলেন, ততই প্রতিপক্ষ শক্তিসমূহ ক্ষমতা থেকে তার উৎখাতকেই গুরত্ব দিয়েছিল। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে এই রাষ্ট্রের অভিযাত্রা কোথায় গিয়ে থেমে যাবে, পথ হারাবে কিংবা উলটো পথে চলে যাবে সেই বোধ ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা না কোনো বিপ্লববাদী না প্রশাসন না বিভিন্ন বাহিনীর নেতৃত্বের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেও গভীরভাবে ছিল না। সেকারণে এদের অনেকেই আবেগ ও বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে ষড়যন্ত্রের বিশাল নেটওয়ার্কের কোথাও না কোথাও নিজেদেরকে যুক্ত করেছে কিংবা বাহবা অথবা হাততালি দিয়েছে। কিন্তু ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর একের পর এক অবিশ্বাস, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, স্বার্থপরতা ও অবিমৃষ্যকারিতার পাতা ফাঁদে তাদেরকেই একে একে পড়তে হয়। অনেকেই একে অপরের রক্তে স্নান করলেন ক্ষমতা বা সুবিধা লাভের আশায়। কিন্তু তাদের বেশিরভাগেরই শেষ রক্ষা হয়নি। ‘বিজয়ের’ অট্টহাসিটি হেসেছে পাকিস্তান, একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে যাদের বিশ্বাস নেই তারা।

বঙ্গবন্ধুর রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যারা এই উন্মত্ততা দেখালো তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্কিত এক কালো অধ্যায় আমাদের জাতীয় জীবনে চিরদিনের জন্য রেখে গেছে। নতুন প্রজন্মকে গভীর উপলব্ধি ও রাষ্ট্রচিন্তা দিয়ে এই কলঙ্ক এবং কালো অধ্যায় থেকে মুক্তি পেতে হবে।লেখক : অধ্যাপক ও গবেষক

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla