সাদ্দাম হোসেন
গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের সম্মলনের পর ২৫ শে এপ্রিল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তাঁতীলীগের মমতাজ উদ্দিন আহমেদকে সভাপতি এবং মোঃ শাহনেওয়াজ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
উক্ত কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উক্ত কমিটি বাতিল করার জন্য সুপারিশ করেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশ ক্রমে উক্ত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।গতকাল ২৩ জুন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ তাঁতীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শওকত আলী ও সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। বিজ্ঞাপ্তিতে আরও জানানো হয়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ ও কেন্দ্রীয় তাঁতীলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে যথাশীঘ্রই নতুন কমিটি অনুমোদন দেওয়া হবে।এদিকে সাপ্তাহিক পূর্ববাংলায় নিম্নোক্ত প্রকাশিত হয় ।এই সংবাদ প্রকাশের পর কমিটি বিলুপ্ত হয়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্থানীয় নির্বাচনে সাতকানিয়া ১নং চরতী ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী মমতাজ উদ্দিনক আহমদ’ক সভাপতি ও তাঁতী লীগের সাথে সম্পর্কহীন মোঃ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী’কে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের কমিটি অনুমোদন দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ, বিতর্ক ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৪ মে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রামের সংগঠনিক দায়িত্বে থাকা আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এম পি তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী স্থানীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে দলের কঠোর অবস্থান তুলে ধরে বলেন, আগামী দিনে কোনো পর্যায়ে বিদ্রোহী প্রার্থী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র সহ-সভাপতি যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদে আসতে পারবে না। এ কথা শোনার পর তাঁতীলীগের নেতাকর্মীসহ সাতকানিয়া উপজেলার ১নং চরতী ইউনিয়নের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে তাঁতীলীগের নেতৃবৃন্দরাও এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
১নং চরতী ইউনিয়নের স্থানীয়রা বলেন, যে ব্যক্তি দলীয় পদ ধারণ করে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন, তিনি কি ভাবে তাঁতী লীগের দক্ষিণ জেলার সভাপতি হয়েছেন তা খতিয়ে দেখা দরকার । আর দলের আইন না মেনে যারা এই পদ-পদবী বাণিজ্য করেছেন তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করাও দরকার। না হয় ভবিষ্যতে দলের চেইন অফ কমান্ড ভেঙ্গে পড়বে। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কিন্তু আগের মতই দলের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে এখনও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন ব্যবস্থায় গ্রহণ না করার ফলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থীদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহীরাই। স্থানীয় রাজনৈতিক ও স্বজনপ্রীতি ও মনোনয়ন বাণিজ্যেসহ নানা কারণে ত্যাগী নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ও হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১নং চরতী ইউপিতে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রদীপ কুমার চৌধুরী। এই ইউনিয়নে আনারস মার্কায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা মমতাজ উদ্দীন আহমদ, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে মোঃ রেজাউল করিম টানা দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হয়েছিলেন চেয়ারম্যান। মমতাজ উদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরোধিতার ও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারনে নৌকার প্রার্থী প্রদীপ চৌধুরীর হার হয়।
প্রসংগত গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।এ সময় বাংলাদেশ তাঁতী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলী, সাধারন সম্পাদক খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা তিন দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আপনাদের কমিটি অনুমোদন দেব। কিন্তু বিতর্কিত একটি কমিটি অনুমোদন দেয়া হয় গত ২৫ এপ্রিল।
তিন বছরের জন্য বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মমতাজ উদ্দিন আহমদ’কে সভাপতি ও আগন্তুক তাঁতী লীগের সদস্যও নন এমন মোঃ শাহনেওয়াজ চৌধুরী’কে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে কমিটি দেন, বাংলাদেশ তাঁতী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শওকত আলী ও সাধারণ সম্পাদক খর্গেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ। বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীকে কমিটির পদে দেওয়ায় ও আগন্তুক একজনকে সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়ায় তাঁতীলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনা ও হতাশা বিরাজ করছে। বিতর্কিত কমিটি দেওয়ার পর দিনই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক বিতর্কিত কমিটি গ্রহন না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ওই কমিটি স্থগিত করার জন্য তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে বার্তা প্রেরণ করেন।
২০১৬ সালের ৪ জুন অনুস্টিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী মমতাজ উদ্দিন আহমদ এর ভোটের ফলাফলের গেজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নৌকা প্রতীকে প্রদীপ চৌধুরী পেয়েছেন -৪,১১৩ভোট। বিদ্রোহী প্রার্থী মমতাজ উদ্দিন আহমদ আনারস প্রতীকে পেয়েছেন -৪,৪৮২ ভোট। জামাতের মো. রেজাউল করিম মোটর সাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন-৫,২৩৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। মমতাজ উদ্দিন আহমদ ৪,৪৮২ ভোট নেওয়ায় ও বিরোধিতার কারনে নৌকার প্রদীপ চৌধুরী হারলেন।যদি বিদ্রোহী মমতাজ উদ্দিন আহমদ আনারস মার্কায় নৌকার বিরোধিতা না করতেন তাহলে নৌকার প্রদীপ চৌধুরী মোট ভোট পেতেন (৪,১১৩ ভোট +৪,৪৮২ ভোট = ৮,৫৯৫ ভোট) এবং প্রদীপ চৌধুরী সেই সময় চেয়ারম্যান হতেন। এই রকম একজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীকে ও বিরোধীকে কিভাবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি ও সেইসাথে অজানা তাঁতীলীগের সাথে সম্পর্কহীন এমনকি তাঁতীলীগের সদস্যও নন তাকে কোন স্বার্থে ? কার স্বার্থে? কিভাবে সম্পাদক বানালো কমিটিতে, কেন্দ্রীয় তাঁতীলীগ কমিটির কাছে এই প্রশ্ন অনেকের? কারন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তাঁতীলীগের আহবায়ক কমিটিতে আহবায়ক দিদারুল আলম দিদার ও সদস্য সচিব পরিমলের মোট ৫১ জন দক্ষ ও সাংগঠনিক ব্যক্তি কমিটিতে থাকার পরও কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক কোন প্ররোচনায় বা কোন বানিজ্যে সংগঠনকে প্রভাবিত করলেন ?
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের মাধ্যমে এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের নেতৃবৃন্দ।