গ্রাহকেরা সেবা বঞ্চিত ও হয়রানীর শিকার, দেখার কী কেউ নেই ?
পবিত্র বিবাহের কামিনামা সম্পাদনকারী কাজীদের বিরুদ্ধে এন্তার রয়েছে। আবার ওই কাজীরাই সকল দোষ চাপিয়ে দেয় জেলা অফিসকে।জেলা অফিস মাঝে মাঝে কাজীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হাও নেয়। চট্টগ্রাম অফিসের অধীনে ২৬৪ জন কাজীর মধ্যে অর্ধশত মামলাও চলমান আছে। সব মামলার বাদী কিংবা বিবাদী কাজীরা নয়।কোনটার বাদী আবার কোনটার বিবাদীও।কাজীরা সকল কাগজপত্র পেতে নানান অভিযোগ আছে বলে তথ্য দিয়েছে নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নয় এমন কাজীরা।আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র।
জানা গেছে, কাজীর বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে ভূয়া কাবিনামা তৈরীসহ ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এসব মামলা রয়েছে। আবার কেউ কেউ উক্ত পদটি ধরে রাখার কৌশল হিসেবে নিজেই মামলা করে বছরের পর বছর কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এসব মামলাগুলো মোকাবেলার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো না হওয়ায় ১০/১৫/২০ বছরেও রায় না হওয়ায় হতাশার পাশাপাশি কিছু এলাকা শূন্য রাখতে হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা যায় ।
জানা গেছে, নগরী এবং বিভিন্ন উপজেলায় ২৬৪ জন কাজী কর্মরত আছে। তারা ইসলাম ধর্ম এবং রাষ্ট্রের বিধি মোতাবেক বিবাহ, তালাক নিবন্ধন করে আসছে। বিয়ের নিবন্ধনে কত টাকা সরকারি ফি এটা বর পক্ষ এবং কনের পক্ষের মধ্যে কারো জানা না থাকার কারণে জিম্মি করে ইচ্ছামত ফি নেয়ার যেমন অভিযোগ রয়েছে তেমন তালাক নামার ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি দেশজুড়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে বিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের নিবন্ধনের কাগজ বাধ্যতামূলক হওয়ায় কাজী এবং কাজী অফিসের লোকজন নতুনভাবে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। মামলা জটিলতায় এবং যেসব এলাকায় কাজীর বিরুদ্ধে মামলা চলমান অথবা কাজীর সাথে এলাকা বিরোধ নিয়ে মামলা জটিলতা রয়েছে যেসব এলাকা এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশন ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড, ৯নং ওয়ার্ডের উত্তর পাহাড়তলী, ১০নং ওয়ার্ডের উত্তর কাট্টলী, ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী, ১৪নং লালখানবাজার ওয়ার্ড, ১৫নং বাগমনিরাম ওয়ার্ড, ১৭নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড, ৩৫নং ব´িরহাট ওয়ার্ড, ৩৮নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা, ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড।
নগরীর বাইরে সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ড ইউনিয়ন ও সলীমপুর ইউনিয়ন। মীরসরাই উপজেলার সরাইল ইউনিয়ন, বারৈয়ারহাট পৌরসভা ও মীরসরাই পৌরসভা। ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া, রোসাইনগিরি, সমিতিরহাট ইউনিয়ন ও ফটিকছড়ী পৌরসভা। রাউজানের মধ্যে গহিরা, সুলতানপুর, কদলপুর, পাহাড়তলী ইউনিয়ন। হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ, মার্দাশা, ফতেহপুর ইউনিয়ন। বোয়ালখালী উপজেলার গোমদন্ডী, শাকপুরা, সরোয়াতলী ইউনিয়ন, পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ, জিরি, হাইদগাও, ভাটিখাইন, দক্ষিণ ভূর্ষি, শোভনদন্ডী ইউনিয়ন। সাতকানিয়া উপজেলার চরতি, কাঞ্চনা, পশ্চিম ঢেমশা, ধর্মপুর ইউনিয়ন, সাতাকনিয়ার পৌরসভার ৪/৫ নং ওয়ার্ড। লোহাগাড়া উপজেলায় আমিরাবাদ ইউনিয়ন, সন্দ্বীপ উপজেলার গাছুয়া ও কালাপানিয়া ইউনিয়সহ ৪৪ জনসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক কাজীর এলাকা এবং পদবী নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা চলমান। এর মধ্যে অনেকের মৃত্যু হলেও আইনী জটিলতার কারণে নতুন কাজী নিয়োগ দিতে না পারাসহ বিভিন্ন অভিযোগও রয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানার জন্য সিটি কর্পোরেশনের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাজী আবুল কালাম আজাদের মোবাইলে ফোন করা হলে তার ভাই মোহাম্মদ রফিক রিসিভ করে জানান, মামলার বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই মামলার বাদী কে কারা করেছে কখন করেছে এ বিষয়েও কখনো শুনেননি বলে তিনি দাবি করেন। এ বিষয়ে দক্ষিণ কাট্টলীর কাজী মাওলানা খলিলুর রহমান জানান, সীমানা জটিলতা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে কাজী ইকরামুল করিম নামের একজন মামলা করছিল। পরে মামলাটি তিনি নিজ দায়িত্বে প্রত্যাহার করে নেয়।
২০০১/২ সালের দিকে সরকার পরিবর্তন হলে সব কাজীরা একটা একটা করে অনেকে মামলা করছিল, যাতে নতুন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে না পারে। অনেকের পদ ঠিকে রাখার কৌশল হিসেবে এ মামলাগুলো করেছিল বলে স্বীকার করেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কাজী সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি কাজীূ মাওলানা ইউছুপ আলী চৌধুরী জানান, মামলাগুলো অনেক সময় আমাদের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল, যখন কারো নির্ধারিত এলাকা ছিল না, এখন সবার নির্ধারিত এলাকা রয়েছে। সীমানা জটিলতা নিয়ে করা হয়েছিল। জেলা নিবন্ধকের কার্যালয়ে ঠিকমত তথ্যগুলো আপডেট না হওয়াতে মামলার নামগুলো বালামে থেকে গেছে বলে দাবি করে। এ ছাড়া এখন কোন কাজীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কাজীদের নিয়ে একটা প্যানেল বোর্ড গঠন করার কথা ছিল মন্ত্রনালয় থেকে সব ঠিক করা হয়েছিল আশা করি এটা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।