1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০২:১৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখীতে ‘সবুজ চুড়ি আন্দোলনে ২৫শ তালগাছ রোপন সাংবাদিক ওমর ফারুকের ইন্তেকাল ২৯ শে এপ্রিল নিহতদের স্মরণে সাহিত্য পাঠচক্রের স্মরণ সভা পথচারীদের মাঝে শরবত, পানি ও গামছা বিতরণ করলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর  হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর পথচারীদের মধ্যে শান্তির শরবত বিতরণ করলেন চট্টগ্রামে বর্ণিল আয়োজনে বন্দর দিবস উদযাপন তৎক্ষালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে যত মানুষ মরার কথা ছিলো, তত মানুষ মরে নাই স্মরণ সভায় ওয়াসিকা আবারও আসছে তিনদিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ চট্টগ্রামে কাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক তাপদাহে পুড়ছে দেশ, ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড

চট্টগ্রামে পুরোহিত প্রশিক্ষণ বাধা ‘নাথ’ পদবী থাকায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আপত্তি

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২
  • ২৪২১ বার পড়া হয়েছে

প্রচলন আছে হিন্দুদের বার মাসে তের পার্বণ। আর সেই তেরপার্বণে বিভিন্ন প্রার্থনা, পূজা অর্চনার মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয়ে থাকে। তের পার্বণের পূজা করতে হয় ব্রাহ্মণ ও পুরোহিত দিয়ে। এক সময় বাংলাদেশে খুব অল্প সংখ্যাক ব্রাহ্মণ ও পুরোহিত পাওয়া যেত। যাদের দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন কষ্ট সাধ্য হয়ে যেত।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শুধু মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও হিন্দুদের জন্য আলাদা কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট’ ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিতি হয়েছিল। সারাদেশে বিভাগীয় শহরের আঞ্চালিক কার্যালয় রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর কয়েক পর্যায় পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতার প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ধর্মীয় ও আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প চালু রয়েছে। এই প্রকল্পের অধিনে ৯ (নয়) দিনের একটি সামাজিক মূল্যবোধের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম আয়োজন করে থাকে। যাতে হিন্দুদের যারা পুরোহিত ও সেবায়েত হিসাবে অংশগ্রহণ করে সমাজের ধর্মীয় মূল্যবোধের সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে বাল্য বিাবহ, বাল্য বিবাহের কুফল, বাল্য বিবাহ বন্ধ, যৌতুক প্রথা ও যৌতুক বিরোধী আইনের উপর ধারণা, সর্বজনীন মানবাধিকার, শিশু অধিকার ,নারী পুরুষ বৈষশ্য ও বৈষম্যের কুফল নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন ও আইনের সুফল, ইভটিজিং, মাদকের কুফল ও প্রতিকার, সন্ত্রাস প্রতিরোধ, সামাজিক ন্যায় বিচারের উপর কোর্স পর্যালোচনা ও মূল্যয়ানের উপর প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে থাকে।
বিগত বছর গুলোতে যারা পুরোহিত ও সেবায়তদের দক্ষতার প্রশিক্ষণের অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুকদের নামের তালিকা করে তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়। যেখানে নাথ, ব্রাহ্মণ, পুরোহিত পদবী ধারীরাও অংশগ্রহণ করেছিল। এবছর চট্টগ্রামে পুরোহিত ও সেবায়তদের দক্ষতার প্রশিক্ষণে ‘নাথ’ পদবীদের অংশগ্রহণের অনুমতি নেই বলে অভিযোগ করেছে লিপটন নাথ। লিটন নাথ, হাটহাজারীর ১২ নং চিকনদন্ডি, দক্ষিণ ফতেয়াবাদ, ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি অভিযোগ করেন দীর্ঘদিন ধরে তিনি হাটহাজারীস্থ শ্রীশ্রী কৃষ্ণ মন্দিরে পুরোহিত হিসাবে নিয়োজিত আছি। তার অভিযোগ আমি ‘নাথ’ পদবী হওয়ায় আমাকে পুরোহিত প্রশিক্ষণের অনুমতি নেই বলে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে হাটহাজারী ও আশপাশের এলাকা থেকে ২৬ জনের একটি নামের তালিকা পাঠিয়েছিল। যেখানে ২৬জনই ছিল ‘নাথ’ টাইটেল (অর্থাৎ শিব গোত্রীয়)। তাদের সাবইকে প্রশিক্ষণ থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু কি কারণে তাদের প্রশিক্ষণ হইতে বাদ দেওয়া হয়েছে তার কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এই ব্যাপারে উপ-পরিচালক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করে কলে তিনি বলে, চট্টগ্রামের দায়িত্বে রয়েছে শিখা চক্রবর্তী তিনি এ ব্যাপারে বলতে পারবে।
ভারত হইতে প্রকাশিত ‘বল্লাল চরিত্র’ ধর্মীয় বইতে উল্লেখ আছে, নাথ বা দেবনাথগণ সামবেদীয় উচ্চ শ্রেণীর ব্রাহ্মণ। শ্রেণী-রুদ্রজ, অর্থাৎ নাথেরা সামবেদীয় রুদ্রজ ম্রেণীর ব্রাহ্মণ। নাথদের পুর্বপুরুষেরা সকলেই যোগ সাধনা করতেন, তাই তারা যোগী ব্রাহ্মণ নামেও পরিচিত। যোগী বংশ বা যোগী সম্প্রদায় বলতে ব্রাহ্মণ নাথদেরই বোঝায়। নাথ স¤প্রদায় অতি প্রাচীন কাল থেকেই বর্তমান। উন্নত জীবন যাপনের মাধ্যমে অতিপ্রাচীন কাল থেকে আজও পর্যন্ত তারা তাদের অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে। ধর্মীয় সাধন ক্ষেত্রে ও উন্নত চরিত্র গুণে তাদের সমকক্ষ কেউ ছিল না। প্রাচীন কালেই নাথদের প্রভাব প্রতিপত্তি, মর্যাদা সবচেয়ে বেশী ছিল।
স্বার্থান্বেষী অন্যান্য ব্রাহ্মণ শ্রেণীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে এবং বঙ্গাধিপতি বল্লাল সেনের একগুঁয়ে প্রতিহিংসা পরায়ণতা ও অবিমৃষ্যকারিতার ফলে মধ্যযুগ থেকে নাথদের সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে। নাথেরা মিথ্যা চক্রান্তের শিকার হল।
নাথদের মধ্যে শিব, অনাদি, কাশ্যপ, ভরদ্বাজ, মীন, সত্য, গোরক্ষ, ‘আই, বটুক, আদিভৈরব, বীর প্রভৃতি গোত্র বিভাগ আছে। তবে বর্তমানকালে বেশীর ভাগ নাথদের মধ্যেই শিব গোত্র দেখা যায়। শিব গোত্রের প্রবর হল- শিব-শম্ভু-সরোজ-ভুধর-আপুবৎ/শঙ্কর। অনাদি গোত্রের প্রবর হল- অনাদি- শিবস্বয়ম্ভু- সরোজ- ভূধর।
নাথ বা দেবনাথদের সাধারণ ব্রাহ্মণ পদবী হল পুরুষদের “দেবশর্মা” এবং মহিলাদের “দেবী”। বৈদিক ক্রিয়া কর্মে এই সাধারণ ব্রাহ্মণপদবী ব্যবহৃত হয়। তবে নাথ পদবীধারী সকলেই ব্রাহ্মণ বর্ণ ভুক্ত নয়। অব্রাহ্মণদের মধ্যেও নাথ পদবী আছে। নাথ বা দেবনাথদের মধ্যে ছোট বড় কোন ভাগ নাই, সকলেই সমান, সকলেই রুদ্রজ শ্রেণীর ব্রাহ্মণ।
নাথদের পূর্বপুরুষগণ সকলেই পরমের পরমজ্যোতিঃ শিবের উপাসনা করতেন এবং অনেকেই যোগ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে শিবাবতার রূপে খ্যাত হয়েছেন এবং এখনও পূজা পাচ্ছেন। সুতরাং নাথেরা শৈব অর্থাৎ শিবের উপাসক।
নাথদের প্রধান বৃত্তি ছিল গুরুগিরি, অধ্যাপনা, ও পৌরোহিত্য। নাথদের মধ্যে নাথ বা দেবনাথ ছাড়াও আরও শতাধিক পদবী আছে। সমগ্র ভারতবর্যে নাথদের বসবাস। নাথেরা দুই শ্রেণীর, যথা- (১) গৃহস্থ বা বিন্দুজ নাথ। যারা রুদ্রজ ব্রাহ্মণ হিসাবে পরিচিত। (২) সন্ন্যাসী বা নাদজ নাথ। এরা যোগী সন্ন্যাসী নামে পরিচিত।
নাথধর্ম- নাথমার্গ, নাথপন্থ, সিদ্ধিমার্গ প্রভৃতি নামে খ্যাত। নাথ ধর্ম হল সাধন ক্ষেত্রে খুবই উচ্চ মার্গ এবং মোক্ষলাভের মার্গ। নাথ মার্গ হল জ্ঞান মার্গ বা অবৃত্তি মার্গ মোক্ষমার্গ। নাথেরা ধর্মীয় ক্ষেত্রে স্ত্রী ও পুরুষদের মধ্যে ভেদাভেদ কার করে না।
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ব্রাহ্মণরা এই বল্লাল চরিত্রের ব্যাখ্যাগুলো না জেনে ‘নাথ’ পদর্বীদের নিয়ে বিভিন্ন সময় মন্তব্য করে আসছে। এর আগেও অক্ষরজ্ঞান প্রকাশনির সমাজ বিজ্ঞান প্রথমপত্রে (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনির) ড. সেলিনা আহমেদ ও ড. খ ম রেজাউল করিম সম্পাদিত সমাজ বিজ্ঞান প্রথম পত্র বইতে ১৯৯ পৃষ্ঠায় পাঠ-৩’এ জাতিবর্ণ প্রথায় ‘নাথ’ পদবীকে ‘শুদ্র’ বর্ণে লিপিবদ্ধ করেছিল। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ‘নাথ’ পদবী যারা তারা রুদ্রজ ব্রাহ্মণ, শিবের ললাট থেকে এদের জাত, (জ্ঞাত কাÐী) আর অন্যান্য উপাধিগুলো ব্রহ্মার মুখ থেকে জাত।
এখানে উল্লেখ যে, ১ অক্টোবর ২০১৮ সালে একাধিক অনলাইন নিউজ পোটালে ‘একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর সমাজ বিজ্ঞান প্রথমপত্রে বর্ণপ্রথা নিয়ে ভুলতথ্য’ শিরোনামে নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পর ‘অক্ষরজ্ঞান প্রকাশনি’ বর্তমানে যা সংশোধন করে নতুন বর্ণপ্রথার বর্ণনা সঠিক ভাবে মুদ্রণ করে।
বৈশিষ্ট হিসাবে ভারতের শৈব প্রকাশনী, দত্তপুকুর ঃ উত্তর ২৪ পরগণা থেকে প্রকাশিত নাথ স¤প্রদায়ের ইতিবৃত্ত শ্রী উপেন্দ্র কুমার নাথ লিখিত গ্রন্থ , রাজগুরু যোগী বংশ ও সুরেন্দ মোহন দেবনাথ এর লিখিত রুদ্রজ ব্রাহ্মণ বই থেকে জানা যায় শৈবমতে নাথ-অর্থে ত্রিভুবনের সৃষ্টি কর্তা ও বিনাশ কর্তা। পরমজ্যোতি অদ্বৈত ব্রহ্ম পরমেশ্বর শিবকেই বোঝায় তাই শিবের নাম সবাই নাথ শব্দ দিয়ে। যেমন কাশী নাথ, বিশ্ব নাথ, তারক নাথ, অমর নাথ, সোম নাথ, বদ্রীনাথ, পশুপতি নাথ, কেদারনাথ, জটেশ্বর নাথ, আদিনাথ, চন্দ্রনাথ প্রভৃতি।
সুতরাং, নাথ’র অনেক পৌরানিক বিবরণ ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-এর বর্ণনা রয়েছে যা হিন্দু ধর্মীয় বই পাঠ করলে জানা যাবে।
অভিজ্ঞজনদের ভাস্যমতে, তিনি বিগত কয়েক বছর ধরে হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন জয়গায় ধর্মীয় অনুশাসন মেনে এবং হিন্দু ধর্মীয় পূজা অর্চনাসহ সমাজের বিভিন্ন কল্যাণ মূলক কাজের সাথে জড়িত। আমার সকল ধর্মীয় কাজের গুরুত্বের জন্য ১২নং চিকনদন্ডী ইউয়ন পরিষদ হইতে ‘সহকারী পুরোহিত হিসাবে’ প্রত্যয়নপত্র প্রদান করা হয়। আমি আশা করি যথা কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে ‘নাথ’ টাইটেল যাদের আছে তাদের হিন্দু ধর্মের উচ্চতর ধর্মীয় প্রশিক্ষণে আরো আন্তরিক হওয়া দরকার।
সারাদেশে ‘নাথ’ টাইটেল যাদের আছে তাদের নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মূল অস্থিত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla