১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচনের একটি প্যানেল এবং ঐ নির্বাচনে বিজয়ী এবং বিজিত কয়েকজন প্রার্থীর ছবি। এই প্যানেল নির্বাচিত হতে পারেনি। অন্য একটি প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন এম. ওবায়দুল হক ও সাধারন সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া। অন্য প্যানেলটি পুরোটা জয়ী হয়েছিল। সংযুক্ত প্যানেলের প্রার্থীরা ঐ নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত চট্টগ্রাম এডিটরস কাউন্সিল ও চট্টগ্রাম সংবাদপত্র পরিষদ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ বিএসপি সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন প্রেস কাউন্সিলস্ নির্বাহী পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। এখন সিনিয়র জার্নালিস্ট ফোরাম এর আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়াও ইজতিহাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সহ-সভাপতি প্রার্থী সিরাজুল করিম মানিক পরবর্তীতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এখন চাটঁগা ডাইডেস্ট পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম ট্রাস্ট, দি সিনিয়র সিটিজেন্স সোসাইটির কর্মকর্তা ও বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জি.আবুল কাশেম দৈনিক নয়াবাংলার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে কবি আল মাহমুদ সম্পাদিত দৈনিক কর্ণফুলী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক সহ বিভিন্ন পত্রিকায় সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.এ. পাস করার পর কলেজের অধ্যাপনা করেন।
যুগ্ম সম্পাদক প্রার্থী সাইফুদ্দিন চৌধুরী বাবুল দৈনিক নয়াবাংলার স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের একনিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেন। গত কয়েক বছর আগে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী ঢাকার পত্রিকার রিপোর্টার ছিলেন। বর্তমানে তিনি সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট। গত ৭ই জানুয়ারি (২০২৪)’র সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি বাংলাদেশ মুসলিম লীগের একটি অংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি।
কোষাধ্যক্ষ প্রার্থী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ঢাকার একটি দৈনিকের চট্টগ্রামে রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করতেন। পরবর্তীতে প্রকাশনা ও বিজ্ঞাপন বিপননের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এখন সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটি এলাকায় গৃহ নির্মাণ করে অবসর জীবন যাপন করছেন।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক এমসিএ আবদুল্লাহ আল হারুন চৌধুরী সম্পাদিত দৈনিক স্বাধীনতার সহ-সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এখনও সাহিত্য, সংস্কৃতির সেবা ও লেখালেখিতে ব্যস্ত থাকেন। বাংলা একাডেমির ফেলো। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর লেখা অনেক বই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এবারের একুশে মেলা উপলক্ষেও তাঁর বহু বই প্রকাশিত হয়েছে।
নির্বাহী সদস্য প্রার্থী ম.ম. সিরাজুল হক দৈনিক স্বাধীনতায় সাংবাদিকতা করতেন। পরবর্তীতে পেশা ছেড়ে দেন। অপর নির্বাহী সদস্য প্রার্থী আবু ঈসা ডেইলী পিপলস্ ভিউর সহ-সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন দৈনিকে সাংবাদিকতা করেন।
নির্বাচিত সভাপতি এম. ওবায়দুল হক পরবর্তীতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের একজন কিংবদন্তী রিপোর্টার ছিলেন। গত কয়েক বছর আগে তিনি ইন্তেকাল করেন। সহ-সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ রফিক এর পরও আরো কয়েকবার সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছিলেন। তিনি একজন খ্যাতনামা ছড়াকার ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে ইন্তেকাল করেন সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক ও কেন্দ্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কমান্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যুগ্ম সম্পাদক নুরুল আমিন পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত ও ইকবাল সোবহান চৌধুরী সম্পাদিত দি অবজারভার পত্রিকায় সাংবাদিকতা করছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান পরবর্তীতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ, যুগ্ম সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন দীর্ঘ কয়েক মেয়াদে। তিনি চট্টলা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং রূপালী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শহীদ উল আলম পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচিত সহ-সভাপতি। এর আগেও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তখন নির্বাচন হত বন্ধুত্বসূলভ, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, প্রতিযোগিতার মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত। এক পক্ষের প্রচারপত্র অপর পক্ষের প্রার্থীরাও বিলি করতে ইতস্ত করত না। সাংবাদিকদের জন্য তখনকার দিন ছিল নৈতিকতার দিক থেকে সমৃদ্ধ, উজ্জল ও স্নিগ্ধ। নির্বাচনের সেই পরিবেশ কি এখন আছে? এখন প্রত্যেক পেশাজীবী সংগঠনে অর্থ ও ক্ষমতাবানদের প্রভাবে নির্বাচন হয়। প্রত্যেক প্রার্থী প্রচুর টাকা খরচ করেন নির্বাচনে। এই অর্থ তাদের মুরব্বী (অনেকে বলেন গডফাদার) দিয়ে থাকেন। অযোগ্য হলেও তাদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে থাকা আজ্ঞাবহদের নির্বাচিত করার চেষ্টা করা হয়। আর যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রভাব বলয়ের বাইরের কাউকে নির্বাচিত হতে দেয়া হয় না। কারণ যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিরা ঐসব মুরব্বীদের আজ্ঞাবহ হয়ে চলে না, মাথা উঁচু করে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
আমাদের সাংবাদিকদের অনেকেরই মধ্যে নৈতিকতা বোধের চরম অধঃপতন ঘটেছে। আগের সম্মান, মর্যাদা ও হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে নৈতিকতা বোধের সামগ্রিক জাগরণ ও নেতৃত্বের মান উন্নত করতে হবে। সৎ, চরিত্রবান, ত্যাগী, নির্লোভ সাংবাদিক নেতাদের মর্যাদা দিতে হবে- নেতৃত্বের আসনে আনতে হবে। সাংবাদিক সমাজসহ সকলের জন্য শুভ কামনা-আল্লাহ হাফেজ।