নিজস্ব প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বন্দর সংযোগ সড়ক সংলগ্ন ডিসি পার্কে তৃতীয় বারের মতো ফুল উৎসব-২০২৫কে সামনে রেখে জেলা প্রশাসক সংবাদ সম্মেলন করেছেন । ‘ফুলের মতন আপনি ফুটাও গান’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ৪ জানুয়ারী থেকে ৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত মাসব্যাপী শুরু হতে যাচ্ছে ফুল উৎসব।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ২ জানুয়ারী বিকালে প্রেস ব্রিফিং করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
জানা গেছে, ১৯৪ একর খাস জমির ওপর আগের গড়ে ওঠা অবৈধ চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন মাদকের আড্ডাস্থলে এখন শোভা পাচ্ছে নানা জাতের ফুলের সৌন্দর্য। এক সময় যেখানে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বসতো মাদকের আড্ডা আর দিনে চলত স্কুল পালানো ছেলে-মেয়েদের হই হুল্লোর। বহুদিন ধরে এমনি অবস্থা বিরাজমান ছিল উপজেলার ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের পাশে সরকারী এই খাস জায়গাটিতে। এখন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে উচ্ছেদ করা হয়েছে মাদকের আড্ডা ও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁগুলো। তার পরিবর্তে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন ফ্লাওয়ার পার্ক। ইতোমধ্যে সেখানে রোপণ করা হয়েছে ১৩৬ প্রজাতির লক্ষাধিক বিভিন্ন জাতের ফুলগাছ। ফুটতে শুরু করেছে নানা রঙের ফুল। প্রথম দেখাতেই যে কারো নজর কাড়বে বাতাসে দোল খাওয়া নানান রঙের ফুল। বিকেল হলে এখানে এখন বৃদ্ধি পায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে , উপজেলার ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের পাশে ভূমিদস্যুরা ১৯৪.১৩ একর খাস জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছিল। তারা সেখানে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছিলেন চাইনিজ রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা। আর এই স্থাপনাগুলোতে রাতে বসতো মাদকের আড্ডা, চলত নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড।
ফৌজদারহাট থেকে বন্দর পর্যন্ত সংযোগ সড়কের পাশে অবস্থিত এই স্থানটি গত ৪ জানুয়ারী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে খাস জমি উদ্ধারের জন্য উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, এ পার্কটি ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক নামে পরিচিত। এ স্থানটি নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, যুব-বৃদ্ধ সকল বয়সী ও শ্রেণী পেশার মানুষের চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে সাজানো হয়েছে। দেশী-বিদেশী ১৩৬ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুলের গাছ এখানে শোভা পাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পাহাড় সমুদ্রে ঘেরা অনন্য অসাধারণ চট্টগ্রামকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে আমরা বদ্ধপরিকর। একদিকে সমুদ্র অন্যদিকে মেরিন ড্রাইভ ঘিরে সরকারের এই ১৯৪ একর জায়গাকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা করে দেশবাসীকে আমরা একটি নান্দনিক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট উপহার দিতে চাই। সর্বোপরি এই আয়োজন চট্টগ্রামের মানুষকে মেধা, মনন ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূমিদস্যুদের দখলে ছিল জায়গাটি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এটি উদ্ধার করা হয়। এই ফ্লাওয়ার পার্ককে কেন্দ্র করে আরো অনেক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
ফুলের মধ্যে রয়েছে প্রিয়দর্শিনী/কনকাম্বরী, হাইব্রিড জবা, ঘন্টি জবা /লণ্ঠন জবা, চিলি জবা, কোইলাস, ড্রব বাগান বিলাস, রুয়েলিয়া/মেক্সিকান পিটুনিয়া, ক্যামেলিয়া, অ্যাজেলিয়া, ম্যাগনোলিয়া, হিজল, কৃষ্ণচূড়া, বকুল, পলাশ, শিমুল, জ্যাকারান্ডা, প্লুমেরিয়া, চেরী, অ্যাডেনিয়াম, চায়না মুঘান্ডা, করবী, গোলাপী রঙ্গন, সাদা রঙ্গন, কাঁঠালি একজোড়া, কাঞ্চন, লাল একজোড়া, উইলো, সোনালু, ভেলভেট, পানিকা, অডিলা, পিসলিলি, চায়না টগর, ইউফরবিয়া, বাই অব প্যারাডাইস, ধানলিলি, স্টার জুঁই, অ্যালামান্ডা, টিকোমা, নীল পারুল, গোল্ডেন সাওয়ার, নীলমনিলতা, নীলকণ্ঠ, ব্লিডিং-হার্ট ভাইন, রেইন লিলি, বাটার ফ্লাই, ডাম্বেল, কাঁটা মুকুট, রেড রবিন, বারলেরিয়া ক্রিসটেটা, লিপস্টিক, হাইড্রাঞ্জিয়া, বাসন্তী, টাইবু চায়না, অপরাজিতা, ফান্ট লাভ, কার্নেশন, ন্যাস্টারশিয়াম, ক্যালাঞ্জ, পয়েনসেটিয়া, ড্রপ পয়েনসেটিয়া, বোতাম ফুল, টাইমফুল, গ্লাডিওলাস, লিলিয়াম, ড্রপ সূর্যমুখী, গ্যাজানিয়া, জিনিয়া, পিটুনিয়া, সেলোসিয়া/মোরগঝুঁটি, ভারবনা, প্যানজি, ডায়ান্থাস,বাইকালার সালভিয়া, ইনকা মেরী গোল্ড, ইয়েলো, ইনকা মেরী গোল্ড, গোল্ড, ইনকা মেরী গোল্ড, অরেঞ্জ, ফ্রেঞ্জ মেরী গোল্ড/জাম্বু গাঁদা, ডালিয়া, পম পম ডালিয়া, ডিপসি, ফারবিটিস,টরেনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ড্রপ চন্দ্রমল্লিকা, ম্যালাপুটিয়াম, স্নোবল, অ্যান্টিহেনাম, অর্নামেন্টাল ক্যাবেজ, ভিনকা, এস্টার, স্টক, ক্যালেন্ডুলা, কচমচ, ফ্রক্স, পম পম ডালিয়া, সালভিয়া লাল, গ্যালকোনিয়া, ওয়েন্টারিয়া, জাপানী কেজিয়া, ধানলিলি, হাসনাহেনা, কামিনী, বেলী, শিউলি, দোলনচাঁপা, মাধবীলতা, হাজারী গোলাপ, লাল রঙ্গনসহ আরও নানা জাতের ফুল।
ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে বিশাল আকৃতির দৃষ্টিনন্দন দুই দিঘির মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা, দর্শনার্থীদের যাতায়াতের অনুষ্ঠানের সামনে রাস্তাকে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে, রং তুলির আঁচড়ে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণকে। অনুষ্ঠানস্থলের পাশেই পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা আছে। সার্বিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ এলাকা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক টিমও দায়িত্ব পালন করবে। তাৎক্ষণিক সেবা প্রধানের জন্য একটি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিবন্ধী শিশু কিশোর ও এতিমদের ঘিরে বিশেষ ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে। ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা।
মাসব্যাপী আয়োজিত এ ফুল উৎসবের বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মাল্টিকালচারাল ফেস্টিভ্যাল, গ্রামীণ মেলা, বই উৎসব, ঘুড়ি উৎসব, ফুলের সাজে একদিন, পিঠা উৎসব, লেজার লাইট শো, ভিআর গেইম, মুভি শো, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচসহ নানা রকমের আয়োজন। মেলাটি সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।