আহমাদীয়া মুসলিম জামাত তথা কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশ এর জাতীয় মহাসম্মেলন খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমির আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর এই মন্তব্য করেন।
৩০ অক্টোবর বুধবার মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের ঐতিহাসিক কুচিয়ামোড়া কলেজ ময়দানে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশ এর জাতীয় মহাসম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।
আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর বলেন, অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের মুসলিম ঘোষণা করতে হবে।ইসলামের আকীদা বিশ্বাসের অপরিহার্য অনেকগুলো বিষয় কাদিয়ানিরা অস্বীকার করে। বরং তারা তাদের মনগড়া মতবাদকে ইসলাম বলে চালিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই ওআইসি এবং রাবেতা আলমে ইসলামীসহ বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম সংস্থা ও একাধিক মুসলিম দেশে কাদিয়ানীরা রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম। গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিক অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় পরিচয় সুস্পষ্ট থাকা অপরিহার্য। তা না হলে সংখ্যালঘু কাদিয়ানিরা যেমন তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, উপরন্তু সংখ্যাগুরু মুসলিমরাও তাদের ধর্মের সুরক্ষা পাচ্ছে না। ফলে মাঝে মধ্যেই অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যা কখনই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, একজন মুসলমান মুসলিম হওয়ার কারণেই খতমে নবুওয়াত আন্দোলন করতে বাধ্য। যতদিন মুসলমান থাকবে ততদিন খতমে নবুওয়ত আন্দোলন করতে হবে। কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি আদায়ে প্রতিটা পাড়া-মহল্লাকে একেকটি কাদিয়ানী বিরোধী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন,পূর্বাপর সকল মত পথ মাযহাবের ইমামগণ এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ। সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতে সুষ্পষ্ট ভাষায় আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, “মুহাম্মাদ সা. তোমাদের কোন পুরুষের পিতা ছিলেন না। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।” এ ব্যাপারে রাসূল সা. থেকে অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া খতমে নবুওয়াতের পক্ষে কুরআন মাজীদে প্রায় শতাধিক আয়াত রয়েছে, রয়েছে দুই শতাধিক হাদীস।আজকে বড় আফসোস আর পরিতাপের সাথে বলতে হয়, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আমাদের সমাজের অনেক মুসলমান মনে করে, ‘তারাও মনে হয় ইসলামেরই একটি দল। অথচ কাদিয়ানীদের সাথে মুসলমানদের বিরোধিতা কোন শাখাগত বিরোধিতা নয়। এটি সরাসরি ইসলাম এবং কুফুরের বিরোধ। সকল মত পথ মাযহাবের উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত, কাদিয়ানীরা কাফের, কাদিয়ানীদেরকে যারা কাফের মনে করবে না তারাও কাফের।
সুতরাং আমাদের এক দাবি, অনতিবিলম্বে কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। কাদিয়ানীরা এদেশে হিন্দু-খৃস্টান-বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মতো সংখ্যালঘু অমুসলিম পরিচয়ে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু মুসলিম পরিচয়ে বসবাস করে সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকাবাজী করা মেনে নেওয়া হবে না। তাদের ধর্মপরিচয় হবে, তারা কাদিয়ানী। মুসলিম নাম নিয়ে তাদের এদেশে থাকতে দেয়া হবে না। তাদের উপাসনালয়গুলোকে মসজিদ পরিচয় দেয়া যাবে না। তাদেরকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। ইসলামের নামে রচিত তাদের সকল ধর্মগ্রন্থ অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তথাকথিত আহমাদিয়া সম্প্রদায় নামে তাদের সকল অপতৎপরতা অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব ।
আরো বক্তব্য রাখেন আল্লামা মুফতি জসিম উদ্দিন হাটহাজারী চট্টগ্রাম, বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, আল্লামা আব্দুল আউয়াল পীর সাহেব ডিআইটি নারায়ণগঞ্জ, হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, আল্লামা আবু বকর মুহাম্মাদ আব্দুল হাই মেশকাত সিদ্দিকী পীর সাহেব ফুরফুরা দরবার শরীফ, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর শরাফাত আলী সপু, আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, মাওলানা রশিদ আহমদ মেরাজনগর, মুফতি জাফর আহমদ পীর সাহেব ঢালকানগর, মুফতি নূর হোসেন নূরানী, মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী, মুফতি মোহাম্মদ ইমাদুদ্দীন,
মাওলানা আব্দুল বসির সুনামগঞ্জ, মাওলানা মুফতি সাঈদ নুর, মুফতি মোহাম্মদ আলী, শায়খ হারুন ইজহার, মাওলানা জামিল আহমদ আনসারী মৌলভীবাজার,মুফতি সৈয়দ সালেম কাসেমী সিলেট, মাওলানা নাজমুল হাসান উত্তরা, মুফতি মুহিউদ্দীন মাসুম,মুফতি বশির আহমদ, মাওলানা আবু আম্বার আব্দুল্লাহ, মাওলানা রেজাউল করিম আবরার, মাওলানা মহিউদ্দিন আল হোসাইনী, মুফতি আব্দুল মজিদ, মাওলানা উবায়দুল্লাহ কাসেমী, মাওলানা আবুল কাশেম আশরাফী, মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ, সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।