বর্তমান পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয়ে ১২ আগস্ট সোমবার দুপুর ১১টায় চট্টগ্রামস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান মাওলানা এম.এ মতিন।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব স.উ.ম আবদুস সামাদ।বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন– হাজারো বিপ্লবি ছাত্রের রক্তের বিনিময়ে সরকারের পতনের পর নবীন- প্রবীণের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা করা এ সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছে এবং সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে। তিনি বলেন- হাজারো শিক্ষার্থীর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ মহাবিজয়কে বিতর্কিত করার জন্য একটা মহল নানা প্রচেষ্টা চালিযে যাচ্ছে। তাদের হাত থেকে রেহায় পাচ্ছেনা মসজিদ- মাজার- মাদ্রাসা- মন্দিরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এদেশে ইসলাম প্রচারক আল্লাহর ওলিদের পবিত্র মাজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিচ্ছে চিহ্নিত জঙ্গিগোষ্ঠি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য মাজার মসজিদে হামলা করেছে চিহ্নিত মহল। চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মসজিদে নিয়োগকৃত আহলে সুন্নাত মতাদর্শী খতিব ইমামদের বিনা কারণে মসজিদে নামাজ পড়াতে দিচ্ছে না এ মহল। স্বাধীন বাংলাদেশে কারা এ বিভেদ সৃষ্টি করছে , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উসকানি তৈরি করছে তা খতিয়ে দেখে অপরাধীদের বিচার করার দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্য বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব বলেন -বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা জানবাজি রেখে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এ আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে গুলিবর্ষণ করাসহ তারা হামলার শিকার হয়েছে। গত সরকারের সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সারাদেশে আহত হয়েছেন শতশত সেনাকর্মী। তাদের মধ্যে কেউ চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন আবার কেউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি নিরীহ জনসাধারণের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ছাত্রদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করার দাবিসহ সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে পেশ করা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের অন্যান্য দাবিগুলো হল- ২। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শাহাদাতবরণ করা বীর শহীদদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন পূর্বক প্রত্যেক পরিবারকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং প্রতিটি শহীদ পরিবারগুলো হতে ন্যূনতম একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে ৩। মাজার-মসজিদ- মন্দিরসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। সকল নিরীহ জনগণের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ৪। গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে ৫। জুলাই হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি এবং তাদেরকে নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে ও স্থায়ীভাবে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। ৬। সব দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। বিদেশে পাচারকৃত সব অর্থ দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করে দুর্নীতিবাজদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে ৭। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সব কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ৮। নির্বাচন কমিশন পুন:গঠন ও ভোটার তালিকা হালনাগাত করতে হবে এবং আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয় এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে ৯। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে অদ্যাবদি দেশব্যাপী সন্ত্রাস, লুটতরাজ, অগ্নি সংযোগ, ডাকাতি চর দখলের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জবর দখলের যে প্রতিযোগতিা শুরু হয়েছে তা কঠোর হস্তে দমন করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
১০। পুলিশ বাহিনীর কর্মবিরতির সুযোগ নিয়ে সারাদেশ মাদক কারবারি,ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।তাদের কঠোর হস্তে দমন করাসহ পুলিশবাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে।এ বিষয়ে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছি
১১। ছাত্র আন্দোলন এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয়।দেশের সর্বস্তরের মানুষ ছাত্রদের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে।ছাত্র- যুব- জনতার এ মহাবিজয়কে কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার বানানোর প্রচেষ্টাকে রুখে দিতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র আন্দোলনে শাহাদাতবরণ করা সব বীর শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আরো মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা তৈয়ব আলি, ডভোকেট আবু নাছের তালুকদার, এম. সোলাইমান ফরিদ, পীরজাদা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আব্দুর রহিম,মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, আন্তর্জাতিক সচিব অধ্যাপক সৈয়দ জালাল উদ্দিন আজাহারী, সহ-দপ্তর সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নূর হোছাইন, শ্রম ও কৃষি বিষয়ক সচিব এম.মহিউল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য মোহাম্মদ আব্দুন নবী আলকাদেরী, নাছির উদ্দিন মাহমুদ, আলমগীর বঈদি প্রমুখ।