বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের নায়ক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক তিনি। সংকটে প্রতিরোধ ও অভিযাত্রার প্রেরণাও তিনি। বরেণ্য এই বাঙালির ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ।
কবিগুরুর জন্মদিন প্রথম বার পালিত হয়েছিল তার ২৬ বছর বয়সে, ১৮৮৭ সালে। প্রিয় ভাগনি সরলাদেবী ‘জীবনের ঝরাপাতা’য় লিখেছেন, ‘রবি মামার প্রথম জন্মদিন উৎসব আমি করাই। তখন মেজ মামা ও নতুন মামার সঙ্গে তিনি ৮৯ পার্ক স্ট্রিটে থাকেন। অতি ভোরে নিঃশব্দে বাড়ির বকুল ফুলের নিজের হাতে গাঁথা মালার সঙ্গে অন্যান্য ফুল ও একজোড়া ধুতি চাদর তাঁর পায়ের কাছে রেখে প্রণাম করে তাকে জাগিয়ে দিলাম, এরপর সেদিন বাড়িতে সবাই মিলে জন্মদিন পালন হয়েছিল।’ পরে শান্তিনিকেতনে ১৯১০ সাল থেকে নিয়মিত কবির জন্মদিন পালিত হয়ে এসেছে। ১৯৩১ সালে কবির ৭০ বছর বয়সে তো রীতিমতো আলোড়ন তুলে জন্মদিনের অনুষ্ঠান হয়েছিল। অনুষ্ঠান কমিটির সভাপতি ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু, মূল উদ্যোক্তা অমল হোম। এই উপলক্ষে প্রকাশিত ‘The book of Tagore Golden’-এ নিবন্ধ লিখেছিলেন দেশবিদেশের গুণী মানুষেরা।
প্রতি বছর জন্মদিন উপলক্ষে তিনি কিছু লিখতেন। সব কবিতাতেই সেই অনন্ত জিজ্ঞাসা, ‘কে আমি?’ চিরন্তন এই প্রশ্ন থেকে ‘এই আমি প্রথমজাত অমৃত’ উত্তরে ফেরার চেষ্টা। সেসব কবিতাই আমাদের দলিল দস্তাবেজ। বাংলা ১৩৪৪ সালে আলমোড়াতে বসে ‘জন্মদিন’ কবিতায় লিখছেন, ‘দৃষ্টিজালে জড়ায় ওকে হাজারখানা চোখ,/ ধ্বনির ঝড়ে বিপন্ন ঐ লোক।/ জন্মদিনের মুখর তিথি যারা ভুলেই থাকে,/ দোহাই ওগো, তাদের দলে লও এ মানুষটাকে।’
রবীন্দ্রভূমির এক ভাগ কাব্য আর তিন ভাগ গদ্য। চিন্তা ব্যাখ্যা বাস্তববোধ তার প্রতিভার বুনিয়াদ; সেই মাটি থেকে উঠে আকাশ ছুঁয়েছে তার কল্পনা, ভাবাদর্শ, বিশ্বচেতনা। জীবন ও জগদ্বেদনার আলোয় কবির চিত্ত উদ্ভাসিত হয়ে সত্যের সুন্দর ভাষ্য রচনা করেছেন সংগীতে। কত অসাধারণ সব গান রচনা করেছেন তিনি! এক আশ্চর্য ক্ষমতা রবীন্দ্রসংগীতের। দেখা গেল সাধারণ মানুষ, যার জীবন হতদরিদ্রের নিঃস্বতায় জর্জরিত নয়, একটুখানি মানবিক সুবাতাস গ্রহণের সামান্য অবকাশটুকু আছে, সে যেন রবীন্দ্রনাথের গানে ঠিকই তার মনের পুষ্টি পেয়ে যায়।সবটুকু জানতে ক্লিক করুন