নিজস্ব প্রতিনিধি
৩ ফসলী জমিতে কাঁচা ইটের সারি সারি লাইন।পাশেই দাউ দাউ করে কাঠ ও কালো তেল দিয়ে জলছে ভাটায় ইট।ভাটার পূর্ব পার্শ্বে অতি নিকটে বিশাল মাটির স্তুুপ যেন ছোট ছোট মাটির টিলা বা পাহাড় । প্রশাসনসহ যে কারও এই দৃশ্য চোখ পড়বে পরীর বিলে। আনোয়ারা থানার বটতলী ইউনিয়নের ইন্দ্রি’র দীঘির পশ্চিমে এসব পরিবেশ ধ্বংসী ইটের ভাটা । প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কোন প্রকার নিয়ম নীতি ছাড়াই স্হানীয় একটি বিশাল সিন্ডিকেট এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ।
জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে রাতের আঁধারে চলছে তিন ফসলি জমির মাটি কাটার ধ্বংশ লীলা । গত একমাস ধরে কৃষি জমির এসব মাটি যাচ্ছে মোহছেন আউলিয়া ব্রিকস নামে একটি অবৈধ ইটভাটায়।স্থানীয় হলদির পাড়ার মালিক দাবীদার শামসু নামক এক ব্যাক্তি এই ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে।
সরেজমিনে ২১ ফেব্রুয়ারী দুপুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সে গভীর রাতে বটতলী ইউনিয়নের তুলাতুলি, সরেঙ্গা, পরীবিল, গুণদ্বীপ ও বরুমছড়া গ্রাম থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকভর্তি করে মোহছেন আউলিয়া ব্রিকস আনা হয় । অন্তত ১০-৩০ টি ট্রাক এ মাটি বহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।অকোজো ও লক্কর জক্কর মার্কা এই ট্রাকগুলোর কাগজপত্র ঠিক নেই। কাগজ পত্র ঠিক না থাকায় এসব ট্রাকগুলো রাতের বেলায় ভাড়া খাটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামসু ইটভাটা করলেও নেই তার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র,বনবিভাগের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র,ব্যাবসায়ীক ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট। । শামসু পরিবেশ আইনের কোনো তোয়াক্কাই করেন না। সরজমিন দেখা যায়, মাটি কাটার ফলে কোথাও কোথাও ফসলি জমি পুকুর সমান গভীর হয়ে আছে। ট্রাক আসা-যাওয়ার ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে গ্রামীণ সড়ক গুলি। এসব রাস্তায় চলাচলে ভোগান্তি বাড়ছে এলাকাবাসীর।এক ব্যক্তির কারণে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা রাস্তাও ধ্বংস হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, যেসব জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া হয়েছে তার পাশের জমিগুলোতেও কয়েক বছর ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। আমরা ইটভাটার মালিক শামসুর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি।
এই ভাটার কারণে শুধু পরিবেশের ক্ষতিই হচ্ছে না, ধ্বংস হচ্ছে স্থানীয় পুরো কৃষি ব্যবস্থাও। নির্বিচারে মাটি কাটায় জমি এখন খাল-বিল-পুকুরে পরিণত হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, আনোয়ারায় কোনো ইটভাটার কোনো অনুমোদন নেই। আমরা উপজেলায় অভিযান শুরু করছি পর্যায়ক্রমে আনোয়ারায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।মাটি কাটা ও ইটভাটার বৈধতার বিষয়ে ফোনে জানতে চাইলে মোহছেন আউলিয়া ব্রিকসের মালিক শামসু বলেন, এত ছাড়পত্র নেয়ার কি আছে ? কাগজ পত্র লাগে না। আমি বহুদিন ধরে এই কাজ করছি।বহু সাংবাদিকতো আমার এখানে আসে ।আপনার মোবাইল নাম্বার রেখে যান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমন বলেন, তিন ফসলি জমির মাটি কাটা অবৈধ। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রসংগতঃ ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৭ দিনের মধ্যে চট্টগ্রামের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ আদেশসহ অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আরও অনেকগুলো আদেশের কথা এই নোটিশে উল্লেখ করে। হাইকোর্টের এই নোটিশের পরেও আরো বহুবার জেলা প্রশাসন থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য বিভিন্ন উপজেলার সাথে আনোয়ারাতেও অভিযান পরিচালনার কথা হয়। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত) ২০১৯) এর ৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো ইটভাটা লাইসেন্স ব্যতীত চালানো যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে আইনের ১৪ ধারা অনুসারে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের আনোয়ারায় স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটা চলছে এবং এতে করে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।