মাহমুদুল হক আনসারী
মায়ের ভাষা শ্রেষ্ঠ ভাষা। মাতৃভাষায় কথা বলার স্বাদ অন্যরকম। জন্মের পরেই যে ভাষায় সর্বপ্রথম কথা বলি তার নাম মাতৃভাষা। মায়ের ভাষার যতœ, পরিচর্চা, লালন-পালন ও সংরক্ষণ জাতির জন্য অন্যতম একটি দায়িত্ব। মাকে যেভাবে আদর, যতœ, শ্রদ্ধা, ¯েœহের মধ্যে রাখতে হয় ঠিক একই ভাবে মাতৃভাষারও যতœ সংরক্ষণ ব্যাপকভাবে চর্চা করতে হবে। পৃথিবীতে কয়েক হাজার ভাষার ব্যবহার হচ্ছে। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দূ, হিন্দি, ফার্সি, চাইনিজ, জাপানিজসহ আরও অনেক ধরণের আন্তর্জাতিক ভাষার প্রচলন আছে। তন্মধ্যে ইংরেজি, আরবি, জাপানিজসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ভাষা বিশ^ব্যাপী ব্যাপকভাবে চর্চা আছে। তাদের সাথে বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে অর্ধশতের অধিক দুনিয়ায় বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে।
যেখানেই বাঙালি জাতি পৌঁছতে পেরেছে সে দেশেই বাংলা ভাষার চর্চা শুরু হয়েছে। বাঙালি জাতির অবস্থান ইউনিটি যেখানেই তৈরি হয়েছে সেই জায়গাতে, সেই এলাকায় সেই দেশে বাংলার ভাষার চর্চা হচ্ছে। সেখানে বাংলা মাধ্যম স্কুল, বই, পত্রিকা, সাময়িকী বের হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির অসাধারণ অগ্রগতির ফলে দুনিয়ার একপ্রান্ত হতে অপর সীমান্তে ভাষার চর্চা সংস্কৃতি আদান-প্রদান ও বিনিময় হচ্ছে। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষা ও জাতীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাঙালি জাতি চরমভাবে ত্যাগ শিকার করেছে। ধারাবাহিক আন্দোলন, সংগ্রাম ও বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলা ভাষা। পৃথিবীতে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার ইতিহাস খুবই কম।
বাংলা ভাষার ইতিহাস রক্তমাখা ও গৌরবান্বিত একটি প্রেক্ষাপট। যারাই ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম গৌরবের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন ইতিহাসে তাদের স্মৃতি অমর। বাঙালি জাতি সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রে যতদিন থাকলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা থাকবে। এই শ্রদ্ধা ময়োর ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা। মায়ের প্রতি সন্তানের যেমনিভাবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার শেষ সীমা থাকেনা তেমনি ভাষা ও ভাষার ইতিহাস যারা সৃষ্টি করে গেছেন তাদের প্রতিও অমর ভালোবাসা চিরঞ্জীব থাকবে। হাজার হাজার সালাম শ্রদ্ধা জানাই বিদেহী আত্মার প্রতি। তারা অমর, তারা বাংলা ভাষার মধ্যে আবহমানকাল পর্যন্ত অমর হয়ে থাকবে।
বাঙালি জাতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত তাদের অমর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। মহান অমর একুশে ফেব্রুয়ারি গৌরবগাথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটি জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হবে। প্রতিবছর সরকার দিবসটির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অমর একুশে পদক প্রদান করবেন। জাতীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নানা অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের বিশিষ্ট জনদের মধ্যে পুরস্কার দিয়ে থাকেন। এছাড়াও জাতীয় স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহ দিবসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। জাতীয়, স্থানীয়, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স প্রচার মাধ্যমসমূহ ভাষা দিবসের গুরুত্ব তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ বিশেষ প্রবন্ধ-নিবন্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রঙ বেরঙের অনুষ্ঠান সাজিয়ে দিবসটি পালন করে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সারা দেশব্যাপী মহান ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শহীদ মিনার ফুলের শুভেচ্ছায় ভরে যায়। ওইদিন দুনিয়ার বহুদেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।
মাতৃভাষার চর্চা ব্যাক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে আরও গুরুত্বের মধ্যে আনত হবে। বাঙালি জাতির চরিত্র, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যপূর্ণ মাতৃভাষার সংরক্ষণ চর্চা থাকা চায়। দুনিয়ার সব ধরনের ভাষার উর্ধ্বে আমার মায়ের ভাষার মর্যাদা চর্চা অনুশীলন ও সংক্ষণ বাস্তবায়ন করা হউক।