1. banglapostbd@gmail.com : admin :
  2. admin@purbobangla.net : purbobangla :
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা : এক সপ্তাহে যা যা ঘটলো - পূর্ব বাংলা
মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা : এক সপ্তাহে যা যা ঘটলো

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে গত সপ্তাহে নতুন সব সহিংসতা দেখা গিয়েছে, যা অস্থির এই অঞ্চলে সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এক নজরে একটু দেখে নেয়া যাক কী কী ঘটলো এবং সামনে এসব সংঘাত কোন দিকে মোড় নিতে পারে?

ইরান-পাকিস্তান
মঙ্গলবার ইরান একেবারে হঠাৎই পাকিস্তানের ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায়।

ইরান বলেছে, তারা এই হামলাটি করেছে ইরানের একটি সুন্নি মুসলিম ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ জইশ আল আদলের ঘাঁটি লক্ষ্য করে, যারা ইরানের ভেতরে হামলা চালিয়েছিল।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় হামলায় দুই শিশু মারা গেছে এবং তারা দ্রুতই পাল্টা আক্রমণে যায়।

পাকিস্তান এবার ইরান সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানি ‘উগ্রবাদী গোষ্ঠীর আস্তানা’ লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। ইরান বলেছে, হামলায় তিন নারী, দুই পুরুষ ও চার শিশু নিহত হয়।

এমন পাল্টাপাল্টি হামলা আগে থেকেই নানামুখী সঙ্কটে থাকা এই অঞ্চলে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেয়।

যদিও এমন ইটের বদলে পাটকেল ছোড়ার এই ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রাচ্যের মূল লড়াইয়ের কেন্দ্র ইসরাইল-গাজা থেকে অনেক দূরে। কিন্তু সীমান্তে এখন যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, আরো নতুন কোনো ঘটনা এক্ষেত্রে সংঘাত দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারে, যেমন জইশ আল আদল যদি ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইয়েমেন ও লোহিত সাগর
বিশ্বের বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন পথ লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজে হাউছিদের হামলার পর এই সপ্তাহে ইয়েমেনের হাউছি শিয়া গোষ্ঠীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী বেশ কয়েক দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

ইরান সমর্থিত হাউছিরা গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত নভেম্বরে লোহিত সাগরে হামলা চালানো শুরু করে। তারা ঘোষণা দেয় যতদিন ইসরাইল গাজায় অভিযান চালাবে ততদিন তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ‘ইসরাইলের সাথে সম্পর্কিত’ জাহাজগুলোতে হামলা চালাবে।

ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক সাগরে চলমান সকল বাণিজ্যিক জাহাজই এতে হুমকিতে পড়ে যায়, যা পশ্চিমা শক্তিগুলো মেনে নিতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের মিত্রদের নিয়ে হাউছিদের থামাতে গত সপ্তাহে তাদের ওপর বিমান হামলা চালায়, কিন্তু হাউছিরা এখনো হুমকি হিসেবেই থেকে গেছে।

গত সোমবার হাউছিরা এডেন উপসাগরে একটি মার্কিন জাহাজে আঘাত করতে সমর্থ হয়, যেটা তাদের হামলা শুরুর পর আমেরিকার কোনো জাহাজে হামলায় প্রথম সাফল্য হিসেবে মনে করা হয়।

বুধবার এডেন উপসাগরে আরেকটি হামলায় সফল হয় তারা। হাউছিরা এরকম হামলা চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে – যা যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হামলার সম্ভাবনাও তৈরি করছে, এখন শুধু দেখার বিষয় ইরানও এতে যুক্ত হওয়ার দরকার মনে করে কি-না।

ইসরাইল-হিজবুল্লাহ-ইরান
দুই চিরশত্রু ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ছায়াযুদ্ধ তীব্র রূপ নেয়, যখন সোমবার ইরান ইরাকের আধা-স্বায়ত্ত্বশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চল ইরবিলে ইসরাইলে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দফতর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, যাতে চারজন মারা যায়।

কিন্তু ইরাক – যারা ইরানের মিত্র হিসেবে খ্যাত এবং ইসরাইলবিরোধী তারা এই হামলার নিন্দা করে এবং সেখানে মোসাদের কোনোরকম অস্তিত্ব অস্বীকার করে।

সম্প্রতি ইসরাইল সিরিয়ায় একজন উচ্চপদস্থ ইরানিয়ান কমান্ডার এবং লেবাননে আরো দুজন ইরান সমর্থিত শীর্ষ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে – যাদের একজন শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কমান্ডার এবং আরেকজন ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাসের উপনেতা। ইরান বলেছে, তাদের এই হামলা সেটার জবাব।

ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত এই মুহূর্তে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকা। গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যেখানে নিয়মিতই গুলি ও ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময় করছে ইসরাইল ও ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ।

বুধবার ইসরাইলের মিলিটারি চিফ অফ স্টাফ বলেন, ‘সামনের মাসগুলোতে উত্তরে যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা অতীতের থেকে এখন অনেক বেশি।’

ইরান-ইসলামিক স্টেট গ্রুপ
ইরান যখন ইরাকে হামলা করেছে, সেই একই সময় তারা সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিতে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত একটি অঞ্চলে মিসাইল ছোড়ে। তারা বলেছে, উগ্রবাদী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ঘাঁটি লক্ষ্য করে এই হামলা। আর এটি গত ৩ জানুয়ারি ইরানে এক আত্মঘাতী হামলায় আইএস যে ৯৪ জনকে হত্যা করে সেটার জবাব।

ইরান সিরিয়া সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও সরাসরি সেখানকার বিদ্রোহীদের অঞ্চলে উগ্রবাদীদের উপর হামলা একেবারেই বিরল এবং এটা সংশ্লিষ্টদের একটা বার্তা যে ইরান এখন প্রয়োজনে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত।

ইসরাইল-সিরিয়া-ইরান
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শনিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে একটি বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে পাঁচজন ইরানের অভিজাত ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের উচ্চপদস্থ সদস্য।

সিরিয়া ও ইরান এ হামলায় ইসরাইলকে দায়ী করে এবং ইরান এর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দেয়।

এ সপ্তাহের শুরুর দিকে দামেস্কের আশেপাশে এমন আরো হামলার ঘটনা ঘটে। ইসরাইল এ নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এর আগে স্বীকার করেছে যে সিরিয়ায় শত শত বিমান অভিযান চালানো হয়েছে যার মধ্যে ইরানের সাথে যুক্ত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হয়েছে।

সিরিয়ান আকাশ প্রতিরক্ষা থেকে এরকম যুদ্ধ বিমানকে বাধা দেয়া – যা এখনো ঘটেনি – অথবা মারাত্মক পাল্টা হামলা যুদ্ধবেষ্টিত এই অঞ্চলে নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।

ইসরাইল–গাজা
গাজায় ইসরাইল আর হামাসের মধ্যে তীব্র লড়াই চলমান এবং এই যুদ্ধ এরইমধ্যে ১৫তম সপ্তাহে এসে পড়েছে।

গত রোববার থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৭১৩ জন ফিলিস্তিনি। আর হামাস নিয়ন্ত্রিত সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজার।

অন্যদিকে ইসরাইলের দিক থেকে জানানো হয়েছে, এই সময়ে তাদের আটজন সেনাসদস্য মারা গেছে। আর সবমিলিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের মৃতের সংখ্যা ১৮৮।

ইসরাইল গত সপ্তাহে দক্ষিণের শহর খান ইউনিসে তাদের সর্বাত্মক অভিযানের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায় তাদের সৈন্যরা যুদ্ধ শুরুর পর এই মুহূর্তে দক্ষিণের সবচেয়ে দূরবর্তী প্রান্তে পৌঁছে গেছে।

আর এ সপ্তাহে ইসরাইলি টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই যুদ্ধ ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলতে পারে।

এছাড়া সোমবার এক ইসরাইলি চলন্ত গাড়ি ও ছুড়ি হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগে দখলকৃত পশ্চিম তীর থেকে পুলিশ দুজন সন্দেহভাজন ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করে।

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলে এরকম হামলার ঘটনা এটাই প্রথম, যা ৭ অক্টোবরের হামলার স্মৃতি এখনো মুছতে না পারা ইসরাইলিদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।

গাজায় যুদ্ধের পাশাপাশি পশ্চিম তীরেও সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে।

চিকিৎসকরা বলেছেন, বুধবার ইসরাইলি বিমান হামলায় সেখানে ৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। ইসরাইলের দাবি, তাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন তখন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

অন্যান্য অঞ্চলের অবস্থা
এই সপ্তাহে এক দেশ দ্বারা আরেক দেশে হামলার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য কিছু অঞ্চলেও ঘটেছে।

তুরস্ক সোমবার উত্তর ইরাকে কুর্দিদের বিরুদ্ধে এবং উত্তর সিরিয়ায় মার্কিন সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন মিলিশিয়া জোটের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

সাম্প্রতিক হামলাগুলো তুরস্ক এবং সশস্ত্র কুর্দি গোষ্ঠীর মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অংশ। তুরস্কে একটা বিরাট অংশ কুর্দিশ সংখ্যালঘুর বসবাস এবং তুরস্ক তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করে।

এগুলোর মধ্যে একটা হামলা প্রায় তিন হাজারে বেশি আইএস বন্দী থাকা কারাগারে আঘাত করে বলে জানা যায়।

একই সপ্তাহে সিরিয়ার সীমান্তে এক বিরল বিমান হামলা চালিয়েছে জর্ডান। যাতে শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মাদক চোরাকারবারিদের টার্গেট করা হয় এই হামলায়। সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে তাদের দেশে এবং আরব উপসাগরীয় দেশগুলোতে অ্যাম্ফিটামিন ক্যাপ্টাগন পাচারের অভিযোগ আছে জর্ডানের।

আর ইরাকে মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরান-সমর্থিত উগ্রবাদীদের দ্বারা আল আসাদ বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট ছোড়ার পর তাদের বেশ কয়েকজন সদস্য এখন ‘মস্তিষ্কে আঘাতজনিত ট্রমার’ সেবা নিচ্ছে। অন্তত একজন ইরাকি সেনা সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড।সূত্র : বিবিসি

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla