লুপর্ণা মুৎসুদ্দী লোপা
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বেতারে স্বাধীনতার গান গেয়ে যে সব সংগীত শিল্পী প্রেরণা যুগিয়ে ছিলেন তার মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তৎকালিন কষ্ঠযোদ্ধা জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী জয়ন্তী লালা ছিলেন অন্যতম। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে দেশের গেজেটের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এ প্রজন্মের শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, চট্টগ্রামবাসী অনেকটা বর্তমান সময়ে এসে ভ‚লে যেতে বলেছে। অপসংস্কৃতির প্রভাবে, সুষ্ঠুধারার সাংস্কৃতি চর্চা না থাকায় অনেকে হয় তো এ শিল্পীর নাম শুনলেও অনেকে না অজ্ঞতার কারণে নাও চিনতে পারে। জয়ন্তী লালা রাষ্ট্রীয় কোন বড় সম্মাননা না পেলেও এ বিষয়ে তাঁর কোন আক্ষেপ নেই। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সংগীত শিল্পী হিসেবে দর্শকের হুদয়ে অবস্থান করা এবং গান যেন গেয়ে যেতে পারেন একটাই মাত্র প্রত্যাশা।
১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর মোমিন রোডস্থ বাস ভবনে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ গুণি শিল্পী এসব কথা বলেন।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীন বেতার কেন্দ্রের শিল্পী জয়ন্তী লালা ১৯৫০ সালে নোয়াখালী জেলার টংগির পাড় গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দুর্গা প্রসন্ন ভুঁইয়া, মাতা নিয়ার বালা ভুঁইয়া তারা দুইজনই ছিলেন সংগীত অনুরাগী এবং বাবা দুর্গা প্রসন্ন ভুঁইয়া তিনিও নামকরা সংগীত শিল্পী ছিলেন। স্বাধীন বেতার কেন্দ্রের শিল্পী জয়ন্তী লালা ১৯৬৫ সালে নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং ১৯৭০ সালে বিএ পাশ করেন নোয়াখালী চৌমুহনী কলেজ থেকে। ছাত্র জীবনে বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিভিন্ন মঞ্চে গান গেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে ছিলেন। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম বেতারের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রামের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী চট্টগ্রামের সংগীত গুরু মিহির লালার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তিনি চট্টগ্রামের শিল্প, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। স্বাধীন বেতার কেন্দ্রের শিল্পী জয়ন্তী লালা আর্য্য সংগীত সমিতির ভাইস প্রিন্সিপাল, নজরুল শিল্পী সংস্থার সভাপতি, দীপশিখা খেলাঘর সভাপতি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত রয়েছে। এছাড়া তিনি সংগীত শিল্পী এবং সংগীত শিক্ষক হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমান সারা দেশে তাঁরা হাতে গড়া শত শত সংগীত শিল্পী রয়েছে। অনেকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত। তিনি কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ শতাধিক সংগঠন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছে সম্মাননা।
স্বাধীন বেতার কেন্দ্রের শিল্পী জয়ন্তী লালা আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার এতটা বছর পরও যখন মুলধারা সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠন ও সংগঠকদের মূল্যায়ন করা হয় না খুব দুঃখ লাগে। সুষ্টু ধারার সংস্কৃতি চর্চার চেয়ে অপসংস্কৃতি চারাদিকে গ্রাস করে ফেলছে। যারা অপসংস্কৃতি বিকাশে উৎসাহিত করে তাদের কাছ থেকে সজাগ থাকতে হবে সবাইকে।
তিনি আরও বলেন,অপসংস্কৃতির প্রভাব এতই বেড়ে গেছে, কিছু শিল্পী মঞ্চে উঠে দর্শকদের বলেন আমার জন্য সবাই তালি দেন, এটা আগে কখনো ছিল না, দর্শকরা শিল্পীর গান শুনে ভালো লাগলে তালি দেবে এটা স্বভাবিক বিষয় এ ধরণের দৃশ্যও বর্তমান সময়ে আমাদের দেখতে হচ্ছে। তারা আবার সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেও দেখা যায়। এক কথায় এক শ্রেণির মানুষ সাহিত সাংস্কৃতির নাম দিয়ে যা হচ্ছে যা দেখতে পাচ্ছি মনে হচ্ছে তারা স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেয়ে স্বপ্ন ভাঙ্গার কাজে লিপ্ত।
আয়োজক শিল্পীরা নিজেরা এক একটা সিন্ডিকেটের সদস্য সিন্ডিকেটের বাইরে যতই ভালো হউক না কেন তাদের রাখে না তারা। আমার জীবনে চাওয়া পাওয়া কিছুই নেই সব পেয়েছি। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানানা পেয়েছি । রাষ্ট্র আমাকে মহান মুক্তিযোদ্ধ হিসেবে সম্মান দিয়েছে এটাই যথেষ্ট।